স্টাফ রিপোর্টার ::
অবশেষে ‘সুনামগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে’র স্থান নির্ধারণ চূড়ান্ত করেছে জেলা পরিষদ। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনের মাঠে এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হবে।
দীর্ঘদিন ধরে শহরের ডিএস রোড এলাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারটি অন্যত্র না সরানোর দাবি জানিয়ে আসছিলেন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তারা দাবি জানিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার অন্যত্র না সরিয়ে বর্ধিতকরণ ও সংস্কারের। তবে এসব দাবি উপেক্ষা করে পরবর্তীতে জেলা পরিষদের উদ্যোগে সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ের খেলার মাঠে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন জেলা পরিষদ প্রশাসক ব্যারিস্টার এম. এনামুল কবির ইমন। এ সময় বিদ্যালয়ের মাঠ রক্ষার দাবিতে আন্দোলন করেন বিদ্যালয়ের ছাত্ররা। তারা শুধু তাদের মাঠরক্ষার আন্দোলন করলেও এই আন্দোলনে সংহতি জানিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার বর্ধিতকরণ ও সংস্কার আন্দোলনের নেতারা। ছাত্রদের আন্দোলনের মুখে ওই সময় সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার স্থাপনের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ। তবে এবার ‘সুনামগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার’ স্থাপনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি রোববার এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হবে।
তবে এ সিদ্ধান্তের বিষয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনেকে এ সিদ্ধান্তের সাথে দ্বিমত পোষণ করেছেন। ‘ভাষা শহীদদের জন্য আলাদাভাবে এ শহীদ মিনার নির্মাণ করা হচ্ছে’ বলে প্রচার দিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া এ শহীদ মিনারকে ‘কেন্দ্রীয়’ বলার ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে। তাদের মতে শহরের ডিএস রোড এলাকার শহীদ মিনারটি দীর্ঘদিন ধরে সুনামগঞ্জের একমাত্র কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। সকল আন্দোলন সংগ্রামে জনতা ঐক্যবদ্ধ হয়ে এ শহীদ মিনারে তাদের দাবি আদায়ের জন্য কর্মসূচি পালন করে আসছেন। তাই নতুনভাবে নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া শহীদ মিনারকে কোনভাবেই ‘কেন্দ্রীয়’ বলা যাবে না। সম্ভব হলে ডিএস রোড এলাকার শহীদ মিনারকে সংস্কার করতে জনপ্রতিনিধিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
এ ব্যাপারে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আহ্বায়ক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ান বলেন, ‘শহীদ মিনার হলো প্রতিবাদ জানানোর একটা জায়গা। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রাঙ্গণে এটা কোনভাবেই নির্মিত হতে পারে না।
জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নূরুল হুদা মুকুট বলেন, ‘জেলা প্রশাসক ও মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে আলোচনা করেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। দেখভাল না থাকলে শহীদ মিনার নেশাখোরদের আড্ডাস্থল হয়ে ওঠে। তাই এটিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সীমানার ভেতরে আমরা নির্মাণ করতে চাচ্ছি। আমরা ৩৮ লক্ষ টাকা ব্যয়ে এটি নির্মাণ করবো, এটির টেন্ডার হয়ে গেছে।’
জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে সুনামগঞ্জ মুক্তদিবসের পরে শহরের ডিএস রোড এলাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণ করেন মুক্তিযোদ্ধারা। বীর মুক্তিযোদ্ধা সালেহ চৌধুরী এর নকশা করে দেন। বালাট সাবসেক্টরের অধিনায়ক মেজর মোতালিব ঐতিহ্যবাহী এই শহীদ মিনারটি উদ্বোধন করেন। ১৯৭১ সনের ১৬ ডিসেম্বর প্রথম বিজয় দিবসে শহীদদের স্মরণে শ্রদ্ধা জানান মুক্তিযোদ্ধা-জনতা। এভাবেই সুনামগঞ্জ ডিএস রোডের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারটি ঐতিহ্যের অংশ হয়ে যায়। পরবর্তীতে জাতীয় দিবসগুলোতে শহীদদের স্মরণসহ সামাজিক বিভিন্ন নিপীড়ন-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জনতার প্লাটফর্মে পরিণত হয় শহীদ মিনারটি।