১.
পাকিস্তান আমলে বিশেষ করে আইয়ুব খানের শাসনকালীন সময় আওয়ামী লীগের ছিল দুঃসময়। দুর্দিনে আওয়ামী লীগের সারা মহকুমায় ২০ জন কর্মী ছিল কিনা সন্দেহ ছিল। শত প্রতিকূলতার মাঝে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে তার প্রতি আস্থা রেখে নিজেকে উজাড় করে দিয়েছিলেন যে মানুষটি তিনি হলেন জনাব আকমল আলী মুক্তার। কথিত আছে যে, একবার তিনি আওয়ামী লীগের জনসভার আহ্বান করেছিলেন। কিন্তু কোন নেতা সেই সভায় উপস্থিত ছিলেন না। সেইসভায় তিনি ছিলেন সভাপতি, বক্তা ও উপস্থাপক। অনেকদিন সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের মুখপত্র পত্রিকা ইত্তেফাক হাতে পেলে বাজারের ব্যাগ এক পাশে রেখে যে কোন দোকানের বেঞ্চিতে বসে প্রথম থেকে শেষ পাতা পড়তে পড়তে ভুলে যেতেন রুজি রোজগারের কথা, পরিবারের কথা। বাসায় অপেক্ষারত মক্কেল চলে যেত। ব্যাগের মাছে পচন ধরত। বর্তমান আওয়ামী লীগের রমরমা অবস্থায় তাকে কেউ মনে করে কি না জানি না। হয়তো তাকে অনেকে চিনেই না। কিন্তু ধানম-ির ৩২নং বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে তাঁর ছিল অবারিত যাতায়াত। সকলের কাছে তিনি ছিলেন সাধারণ, কিন্তু বঙ্গবন্ধুর কাছে তিনি ছিলেন অসাধারণ প্রিয় পাত্র। এই মানুষের চাওয়া-পাওয়ার কিছু ছিল না। স্বাধীনতার পরে ’৭২ সালে ছাতকের সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনের টিকেট বঙ্গবন্ধু তাঁকে ধরিয়ে দেন। কিন্তু নির্বাচনের রাজনীতি তাঁর জন্যে নয়। তাই ব্যর্থ হলেন পাস করতে। তার বড় ছেলে সাব্বির আহমেদ ১৯৭১ সালের রণাঙ্গনের একজন সক্রিয় যোদ্ধা। তিনটি সন্তান রেখে অকাল প্রয়াত। কিন্তু লজ্জার বিষয় আজও জোটেনি মুক্তিযোদ্ধাভাতা, হায়রে নিয়তি…।
২.
মাত্র কয়েক বছরে বাংলার আবহমান কালের সংস্কৃতি আজ বিপন্ন। কালের বির্বতনে হারিয়ে গেছে রাখালের বিরহী বাঁশি। বাংলার রাখালেরা উটের রাখালী করছে মধ্যপ্রাচ্যে। শুনা যায় না পাল তোলা নৌকার মাঝির ভাটিয়ালি গান, ইঞ্জিন নৌকার ভটভটানিতে। মহিষের গাড়ি নিয়ে যে গাড়িয়াল আকাশ-বাতাস ছাপিয়ে ভাওয়াইয়া সুর তুলত তা আর শুনা যায় না, যন্ত্র চালিত ট্রলির আওয়াজে। কবিগান আর মালজোড়া হয়েছে নির্বাসিত। সারা রাত ধরে গ্রামবাংলার মানুষ যে যাত্রাগান শুনতো মন্ত্র-মুগ্ধ হয়ে, তা হারিয়ে যাচ্ছে তথা কথিত প্রিন্সেসদের অশ্লীল নৃত্যের তাণ্ডবে।
গ্রামবাংলায় বসতো প্রতি বছর মেলা, ঘোড়দৌড় সহ নানাবিধ-বিনোদনমূলক আসর, তা হারিয়ে যাচ্ছে জুয়ার বোর্ড সহ যাবতীয় অনাচারে। কেচ্ছা-কাহিনী আর পুঁথিপাঠের আসর বসতো প্রতিটি গ্রামের আনাচে-কানাচে, তা আজ হারিয়ে যাচ্ছে চায়ের দোকানগুলোতে প্রদর্শিত বাংলা-হিন্দি ও নীল ছবির ছোবলে।
গানের মঞ্চ থেকে নির্বাসিত হচ্ছে একতারা, দোতারা, ঢোল ও হারমোনিয়াম। আগমন ঘটেছে ড্রাম, গিটার, কী-বোর্ডসহ নানা যন্ত্রপাতির। বাংলাগান স্বকীয়তা হারাচ্ছে। হাজার বছরের লালিত আমাদের সংস্কৃতি বিদেশি সংস্কৃতির আগ্রাসনের শিকার হচ্ছে। অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে এখনই সময় রুখে দাঁড়াবার। বাইরের সংস্কৃতি আমরা গ্রহণ করব তবে শুধুমাত্র তার ভালো দিক।