1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ১২:২৩ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

গিনেস বুকে স্থান পাচ্ছে সুনামগঞ্জ : বাল্যবিয়েকে লাল কার্ড দেখাবে তিন লাখ শিক্ষার্থী-জনতা

  • আপডেট সময় সোমবার, ২৩ জানুয়ারী, ২০১৭

শামস শামীম ::
প্রান্তিক জনপদ সুনামগঞ্জ নানাভাবেই অবহেলিত। অবহেলা ও বঞ্চনার মধ্যেই আজ বিশ্বকে তাক লাগানো সুখবর দিবে সুনামগঞ্জ। এশিয়ায় বৃহত্তম ও বিরল আয়োজনের মাধ্যমে সামাজিক ব্যাধি ‘বাল্য বিয়ে’কে লাল কার্ড দেখাবে আগামীদিনে বাল্যবিয়ের ঝুঁকিতে থাকা শিক্ষার্থীরা। তাদের সঙ্গে যুক্ত হবে সাধারণ জনতাও। সাক্ষীদের সামনে শপথবাক্য পাঠ করে একযোগে একই সময়ে প্রায় অর্ধ শতাধিক ভেন্যু থেকে জেলার ১ লাখ ১৪ হাজার ৩২৩ শিক্ষার্থী মুক্ত আকাশে হাত হাত উঁচিয়ে বাল্যবিয়ের অভিশাপ থেকে বেরুনোর ঘোষণা দিবে। তাদের সঙ্গে সেই অভিশাপ থেকে নিজেকে ও স্বজনদের বেরিয়ে আসার ঘোষণা দিবে আরো ১ লাখ ৮৫ হাজার ৬৭৭ জন বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ।
রোববার সন্ধ্যা ৭টায় সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম। তিনি আয়োজনের সার্বিক চিত্র তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন। এ সময় জেলা প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দও উপস্থিত ছিলেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ইউজেডজিপি প্রকল্পের মাধ্যমে সারাদেশের প্রতিটি উপজেলাকে বাল্যবিয়ে মুক্ত ঘোষণার কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এই প্রকল্প থেকে প্রতিটি জেলায় ৩০ হাজার শিক্ষার্থীর কাছে বাল্যবিয়ের শপথ সম্বলিত লাল কার্ড পাঠানো হয়েছে। তবে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন এই ৩০ হাজারের সঙ্গে নিজ উদ্যোগে আরো ৮৪ হাজার ৩২৩ টি অতিরিক্ত লাল কার্ড তৈরি করেছে। কার্ডের পিছনে রয়েছে বাল্যবিয়ে বিরোধী শপথবাক্য। ইতোমধ্যে প্রতিটি উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত প্রতিনিধিসহ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে সেই কার্ড সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়েছে। আজ সোমবার দুপুরে একযোগে সুনামগঞ্জ জেলার বিভিন্ন ভেন্যুতে শিক্ষার্থীরা বাল্যবিয়েকে লালকার্ড দেখাবে। সুনামগঞ্জের শিক্ষার্থী জনতা শহীদ আবুল হোসেন মিলনায়তনে বাল্যবিয়ে বিরোধী শপথবাক্য পাঠ করবে।
জানা গেছে, শপথ অনুষ্ঠানে বাল্যবিয়ে বিরোধী সাক্ষী হিসেবে থাকবেন স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সার্ভেয়ারসহ সরকারের বিভিন্ন দফতরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাবৃন্দ। শপথকারীরা ভবিষ্যতে বাল্যবিয়ে বন্ধে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবহিত করবেন এবং বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়ার শপথ করবেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন বাল্যবিয়ে বন্ধ হলে নারী শিক্ষা জোরদারের পাশাপাশি মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যু কমে আসবে। এর মাধ্যমে সারাদেশের মানুষও সচেতন হবে। উপকৃত হবে বাল্যবিয়ে ঝুঁকিতে থাকা প্রজন্ম।
জেলা প্রশাসন সূত্রে আরো জানা গেছে, গত বছরের ১৩ জানুয়ারি ছাতক ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলাকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাল্যবিয়ে মুক্ত ঘোষণা করা হয়। সর্বশেষ গত ২৯ সেপ্টেম্বর তাহিরপুর উপজেলাকে আনুষ্ঠানিক বাল্যবিয়ে মুক্ত ঘোষণা করা হয়। ১১ উপজেলায় আনুষ্ঠানিকভাবে সমাবেশ, র‌্যালি, সচেতনতামূলক কর্মসূচির মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এলাকাকে বাল্যবিয়ে ঘোষণা করেন প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ।
আজ ‘বাল্যবিয়ে মুক্ত সুনামগঞ্জ ঘোষণা’ ও শপথবাক্য পাঠের আগে ছাতক উপজেলায় ২০,০০০ হাজার লাল কার্ড, বিশ্বম্ভরপুরে ৫,৫০০, জগন্নাথপুরে ১৫ হাজার, জামালগঞ্জে ৫ হাজার, শাল্লায় ৫ হাজার, দোয়ারাবাজারে ১১ হাজার, ধর্মপাশায় ৭ হাজার, দক্ষিণ সুনামগঞ্জে ৭ হাজার, দিরাই উপজেলায় ১১ হাজার, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় ১২ হাজার এবং তাহিরপুরে ১৫ হাজার ৮২৩ টি লাল কার্ড দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন বিদ্যালয়ে বাল্যবিয়ে মুক্ত ঘোষণার লাল কার্ড পাঠানোর পর জেলা প্রশাসন কর্তৃপক্ষ গিনেস বুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। গিনেস বুক কর্তৃপক্ষ আয়োজকদের কিছু গাইড লাইনও দিয়েছে এবং সংশ্লিষ্টদের জানিয়েছে এই কর্মসূচি বৃহৎ পরিসরে এশিয়ায় প্রথম। গাইড লাইন অনুযায়ী কর্মসূচি সম্পন্ন হলে সহজেই গিনেস বুকে বাল্যবিয়ে মুক্ত এই কর্মসূচি স্থান পাবে।
সুনামগঞ্জ শহীদ আবুল হোসেন মিলনায়তন ভেন্যুতে জেলাকে বাল্যবিয়ে মুক্ত ঘোষণা করবেন সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার মো. জামাল উদ্দিন আহমেদ। একযোগে একই সময়ে জেলার প্রায় প্রায় অর্ধ শতাধিক ভেন্যুতে শপথবাক্য পাঠ করাবেন তিনি। বাল্যবিয়েবিরোধী এই কর্মসূচি প্রযুক্তির মাধ্যমে ধারণ করে গিনেস বুক কর্তৃপক্ষকে পাঠানো হবে। এর সচিত্র তথ্য প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী পরিষদ বিভাগসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়েও পাঠানো হবে।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সাবেরা আক্তার বলেন, আজকে যারা কিশোরী হিসেবে বাল্যবিয়েকে লাল কার্ড দেখাবে তাদের মধ্যে যদি ৫০ ভাগও কথা রাখতে পারে সেটাও বড় একটা অর্জন। বাল্যবিয়ে থেকে রক্ষা পেলে অনেক দূর যেতে পারবে মেয়েরা। তারা এগিয়ে গেলেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।
জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন, একদিনে আমরা এই উদ্যোগ নেইনি। ইউনিয়ন থেকে উপজেলা পর্যন্ত সভা-সমাবেশ করেছি, মা সমাবেশ ও অভিভাবক সমাবেশ সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালিয়েছি। তারপরই আমরা বৃহত্তর পরিসরে বাল্যবিয়েকে লাল কার্ড দেখানোর স্বপ্ন দেখি। আজ সেটি বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়বে, এটি একটি সামাজিক আন্দোলনে রূপ নিবে। যার মাধ্যমে সারাদেশ থেকে বাল্যবিয়েবিরোধী সামাজিক আন্দোলন হবে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com