অবকাঠামো উন্নয়ন ও প্রযুক্তি বিকাশের পাশাপাশি গত কয়েক দশকে বড় ধরনের রূপান্তর ঘটেছে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে। সরকারি হিসাবে ৭-এ উন্নীত হয়েছে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশ অতিক্রম করে। নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে দেশের সাধারণ মানুষের বেড়েছে মাথাপিছু আয় ও জীবনযাত্রার মান। কিন্তু অর্থনৈতিক উন্নয়নের এসব সুফল থেকে এখনো বঞ্চিত দেশের বিভিন্ন ক্ষুদ্র পেশাজীবী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। দেশের পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবমতে, বাংলাদেশে বিভিন্ন ক্ষুদ্র পেশাজীবী জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ৫৬ লাখেরও বেশি। পিছিয়ে পড়া পেশাজীবীদের মধ্যে রয়েছে কামার, কুমার, জেলে, স্বর্ণকার, বেত ও বাঁশের আসবাব প্রস্তুতকারক, কাঠমিস্ত্রি, মিষ্টি প্রস্তুতকারক, ক্ষৌরকার বা নাপিতসহ আরো আছে নিগ্রহের শিকার দলিত, হরিজন ও বেদে সম্প্রদায়। বিচ্ছিন্ন, চরম অবহেলিত, উপেক্ষিত জনগোষ্ঠী এরা। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি উত্তরোত্তর বেড়ে চলছে, অথচ স¤পদ বণ্টনে সাম্যের দিক থেকে অনেক পিছিয়ে আমরা। তাই প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উচ্চকোটির জনগোষ্ঠীর সঙ্গে স¤পদ ও আয়বৈষম্য ক্রমে দিন দিন বেড়ে চলেছে। দেশে অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত ও সার্বিক উন্নয়নের সুফল প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছাতে হলে তাদের মূলধারায় স¤পৃক্ত করণে সংশ্লিষ্টদের এদিকে দৃষ্টি দিতে হবে।
পিছিয়ে থাকা বিভিন্ন ক্ষুদ্র পেশাজীবী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে মূলধারায় স¤পৃক্ত করতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে বর্তমান সরকার। তাদের আর্থসামাজিক উন্নয়নে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বর্তমানে ১৪ জেলায় এ কার্যক্রম সম্প্রসারণের পরিকল্পনা চলছে। এ কর্মসূচির আওতায় স্কুলগামী দলিত, হরিজন ও বেদে শিক্ষার্থীদের শিক্ষিত করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে চার স্তরে উপবৃত্তি দেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে প্রাথমিকে জনপ্রতি মাসিক ৩০০ টাকা, মাধ্যমিকে ৪৫০, উচ্চ মাধ্যমিকে ৬০০ এবং উচ্চতর শিক্ষায় ১ হাজার টাকা হারে উপবৃত্তি দেয়া হচ্ছে। এছাড়া ৫০ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সের অক্ষম ও অসচ্ছল ব্যক্তিকে প্রতি মাসে ৪০০ টাকা করে বিশেষ ভাতা দেয়া হচ্ছে। বিআরডিবির মূল কার্যক্রমের পাশাপাশি সমবায় অধিদপ্তর, আরডিএ বগুড়া, বার্ড কুমিল্লা, পিডিবিএফ ও এসএফডিএফের আওতায় এসব কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
কামার, কুমার, জেলে, স্বর্ণকার, বেত ও বাঁশের আসবাব প্রস্তুতকারক, কাঠমিস্ত্রি, মিষ্টি প্রস্তুতকারক, ক্ষৌরকার, নাপিত, দলিত, হরিজন ও বেদে সম্প্রদায় স্বার্থে এ কার্যাক্রমের আওতা আরো বাড়ানো জরুরি। পাশাপাশি দ্রুততম সময়ে সেগুলোর সুষ্ঠু বাস্তবায়ন করা দরকার। না হলে শুধু অর্থ খরচই হবে, এর সুফল মিলবে না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে মনে রাখতে হবেÑ শুধু প্রশিক্ষণ দিয়েই প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দক্ষতা বাড়ালে হবে না, কাজের ক্ষেত্রও প্রস্তুত করতে হবে।