1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৫:৪১ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

গল্প নয় সত্যি, মাত্র কয়েক বছর আগের কথা : ৫১

  • আপডেট সময় শনিবার, ১৪ জানুয়ারী, ২০১৭

সতর্কীকরণ : বুদ্ধিজীবীরা না পড়লে খুশি হব।
আশা করি ডিমের সাথে সবারই পরিচয় আছে। হাঁস-মুরগি ডিম পাড়ে, আমরা মজা করে হাফ ভয়েল-ফোল বয়েল, মামলেটসহ কতভাবে যে খাই তা লেখা-জোখা নেই। কিন্তু ডিম পাড়ার সময় যে কষ্ট তা হাঁস-মুরগিই বলতে পারে। সারা বিশ্বে, বাংলাদেশের প্রায় এক কোটি মানুষ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কর্মরত আছেন। আমরা যারা ভাই-ভাতিজা, আত্মীয়-স্বজন তাদের পাঠানো টাকায় দেশে ফুটানি করে বেড়াই তারা কিন্তু জানিনা প্রবাসীরা জীবনবাজি রেখে সারাদিন রোদে পুড়ে, বরফের ঠান্ডায় নিস্তেজ হয়ে কাজ করে দেশে টাকা পাঠায়। সেই টাকা ধান-চালের মতো খরচ করে বাহবা কুড়াই।
সৌদিআরবের মরুভূমিতে উটের রাখালি আর লন্ডনের রেস্টুরেন্টের কিচেনে তীব্র শীতের মাঝেও বাসন-কোসন ধৌত করা কী যে কষ্ট তা একমাত্র হতভাগ্য বিদেশে কর্মরত মানুষটিই জানে।
আমি অল্পবিদ্যা ভয়ংকরী, হাতে কলমে কাজ করার কষ্ট সম্বন্ধে ভালই অভিজ্ঞতা আছে। ১৯৮০ সালে জেদ্দা সমুদ্র বন্দরে সুপারভাইজার পদে কাজ করার জন্য সৌদিআরব যাই। আমাকে বাইশ জনের একটি দল দিয়ে বলা হল, জাহাজের একটি খোল থেকে মালামাল নামানোর জন্য। নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে দেখি এমন দুর্গন্ধ, পেটের নাড়িভুঁড়ি বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম। সেখানে সারি সারি বস্তা রাখা রয়েছে যা আমাদের নামাতে হবে। কৌতূহল বশত একজন একটি বস্তা ছিঁড়ে দেখে ঘোড়া ও গরুর গোবর শুকিয়ে সৌদি আমদানি করা হয়েছে তাদের কৃষি কাজে ব্যবহারের জন্য। আরেকটি বস্তা নাড়ার সাথে-সাথেই কালো পোকার ঝাক আমাদের দিকে তেড়ে আসে। নিজের জান বাঁচানোর জন্য বাইশজন মিলে একসাথে দৌড় শুরু করি। দৌড়ে পালিয়ে একটা সেডের নিচে বসতেই আমেরিকান এক অফিসার আমাদের দিকে চেঁচিয়ে হেড়ে গলায় এগিয়ে আসে। যতই ব্যাটাকে ইংরেজি-বাংলায় বোঝাতে চেষ্টা করি ততই সে তেলে-বেগুনে রেগে উঠে। সাথে সাথেই তার হাতে রক্ষিত খাতায় লিখে আমাকে সাসপেন্ড করে। আমি নাকি কর্মীদেরকে কাজ না করার জন্য উস্কানি দিচ্ছিলাম। এহেনও আইন অমান্যকারী (বাংলাদেশী) আমাকে দ্রুত দেশে পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য সুপারিশ করে। একমাস ডিউটি ছাড়া ক্যা¤েপ ছিলাম। এই একমাসে দেখেছি মানুষের কীযে কষ্ট, দুঃখ আর যন্ত্রণা। একমাস পর আমাকে তিন মাসের বেতন ও বিমানের টিকিট দিয়ে দেশে পাঠিয়ে দেয়। বিদেশ গিয়ে বড়লোক হওয়ার স্বপ্ন তাসেরঘরের মতো ভেঙে যাওয়ার পর দেশেই ব্যবসা শুরু করি এবং সফলও হই।
আমার শ্বশুর বাড়ি তালা-চাবি মারা। বসবাস করবার নিজের লোক নাই। এন্ডা-বাচ্চাসহ সবাই বৃটেনের রাজধানী লন্ডন শহরে বসবাস করছে। তারা প্রায়ই আমন্ত্রণ জানায় লন্ডন গিয়ে বেড়িয়ে আসার জন্য। কিন্তু আমার আলসেমির দরুণ যাওয়া হয় না। আমার স্ত্রী মাঝেমাঝে লন্ডনে বাপের বাড়ি নাইওর যান। ২০১২ সালের দিকে তাদের আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করতে না পারায় লন্ডন যাই। এক নাগাড়ে প্রায় ছয় মাস অবস্থান করি। অবশ্য এতদিন থাকার পিছনে কারণ, আমার বেয়াই লন্ডন আওয়ামী লীগ নেতা জনাব ইলিয়াস মিয়া ও আমার শালা নিজামের অবদান ও সঙ্গদানই বেশি। তিন মাসের মাথায় মনে হল যে মাস দুয়েক চাকরি করলে বেশ কিছু পয়সা রোজগার করতে পারব। আমার শালা সেলিমের ফ্রাই চিকেনের দোকানে কাজে ভর্তি হই। দুই দিন কাজ করার পর দেখি কোমর আর হাঁটুর ব্যথায় প্রাণ যায় যায় অবস্থা। তিনদিনের দিন সেলিমের কাছ থেকে আরো চার দিনের এডভান্স বেতন নিয়ে আর ওইমুখী হইনি।
সম্মানিত পাঠক, এই হল আমার শীত ও গরমের দেশে অভিজ্ঞতা। আমি আবার পেটের ভিতরের কোনো কথা কাউকে না বলে রাখতে পারি না।
আপনাদেরকে সুখ-দুঃখের সাথী ও আপন ভেবে এই কথাগুলো বললাম। আপনারা তো আর বুদ্ধিজীবী নন তাই আপনাদের কাছে বলতেও কোনো দ্বিধা নেই। কারণ, তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা কথায় কথায় খালি খুঁত ধরে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস, আমি সেখানে গিয়ে এবং দেশ থেকে প্রবাসীদের সাথে নিয়মিত টেলিফোনে যোগাযোগ থাকায় বুঝতে পেরেছি যে, তাদের মন আমাদের প্রতি ভালো নয়। তারা টাকা দেবে আর আমরা বসে বসে খাব আর ফুটানি করব এটা তারা মেনে নিতে পারছে না।
নতুন প্রজন্ম, বিশ্বের অন্যান্য দেশের ছেলে-মেয়েদের তুলনায় লেখাপড়ায় ভালো করছে আমাদের বাঙালি সন্তানরা। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তারা প্রতিযোগিতা করে টিকে আছে। তারা কিন্তু অমুক চাচার মেয়ের বিয়ে, তমুক মামার ছেলের খতনাতে টাকা দিতে রাজি নয়। তারা ছুটিতে দেশে আসতেও রাজি না। কারণ, মেট্রিক ফেল ছেলের সাথে অক্সফোর্ডের ডিগ্রিধারী মেয়ে শুধু বাপের কথা রক্ষার জন্য বিয়ের পিঁড়িতে বসতে রাজি নয়। তারা এখন ছুটি কাটাতে দুবাই, সিঙ্গাপুর আর কুয়ালালামপুরে বেড়াতে যায় কিন্তু বাংলাদেশে আসতে চায় না। সুতরাং,আমি নিজেতো সাবধান হচ্ছিই, আপনাদেরকেও সাবধান করে দিচ্ছি। এই ফকফকা দিন নাও থাকতে পারে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com