মানব সভ্যতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান হচ্ছে গণতন্ত্র। পাশ্চাত্যে এর সূচনা হলেও বর্তমানে পৃথিবীর সর্বত্রই এর বিকাশ ঘটেছে। বর্তমানে গণতন্ত্রের বিকাশ কেবল রাষ্ট্র পরিচালনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই, বরং মানব সভ্যতার সামাজিক, সাংগঠনিক প্রক্রিয়ায় গণতন্ত্রের প্রয়োগ আমরা দেখতে পাই। গণতন্ত্রের মাধ্যমে মানুষ তথা জনগণ তার নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারে যথার্থ অর্থে জনগণের মধ্যে থেকে এবং জনগণের দ্বারা জনগণের জন্য সরকারই হচ্ছে গণতান্ত্রিক সরকার।
জনপ্রতিনিধি মানে জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী বিশেষ ব্যক্তি, যিনি জনগণের দ্বারা নির্বাচিত হন। তাদের সরকারের কাছে যতটা না তার চেয়ে বেশি জবাবদিহিতা করতে হয় জনগণের কাছে। জনগণের দুঃখ-দুর্দশা দেখা ও লাঘব করার দায়িত্ব জনপ্রতিনিধিদেরই। জনপ্রতিনিধি হয়ে জনগণের ও দেশের সেবা করা অতিউত্তম কাজ।
‘স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সম্মানি বাড়িয়ে দ্বিগুণ’ বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। সংবাদে উল্লেখ, স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীন পাঁচ স্তরের জনপ্রতিনিধিরা গত বছরের ১ জুলাই থেকে নতুন হারে সম্মানি পাবেন। সিটি করপোরেশনের মেয়রদের মাসিক সম্মানি ৪৪ হাজার ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮৫ হাজার টাকা এবং কাউন্সিলরদের সম্মানি ১৭ হাজার ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের মাসিক সম্মানি ৫৪ হাজার টাকা ও আপ্যায়ন ভাতা ৫ হাজার টাকা এবং সদস্যদের মাসিক সম্মানি ৩৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার। আগে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানদের মাসিক সম্মানি ৪০ হাজার ছিল।
সরকারের নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ‘ক’ শ্রেণির পৌরসভার মেয়র ৩৮ হাজার টাকা ও কাউন্সিলর ৮ হাজার টাকা, ‘খ’ শ্রেণির পৌরসভার মেয়র ২৮ হাজার টাকা ও কাউন্সিলর ৭ হাজার টাকা এবং ‘গ’ শ্রেণির পৌরসভার মেয়র ২৪ হাজার টাকা ও কাউন্সিলর ৬ হাজার টাকা মাসিক সম্মানি পাবেন। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের মাসিক সম্মানি ২০ হাজার ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪০ হাজার টাকা এবং ভাইস চেয়ারম্যানের সম্মানি ১৪ হাজার ৬০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৭ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের সম্মানি ৮ হাজার টাকা (সরকারি অংশ ৩,৬০০ টাকা, ইউপি অংশ ৪,৪০০ টাকা) এবং সদস্যদের মাসিক সম্মানি ৫ হাজার টাকা (সরকারি অংশ ২,৩৭৫ টাকা ও ইউপি অংশ ২,৬২৫ টাকা) করে নির্ধারণ করা হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
জনপ্রতিনিধি ছাড়া দেশের আঞ্চলিক ও নাগরিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। গণতন্ত্র ও সুশাসনের ভিতও শক্তিশালী হয় না। সে জন্য সবার আগে স্থানীয় সরকারের উন্নয়ন জরুরি। স্থানীয় সরকারকে বলা যায় তৃণমূল পর্যায়ে জনগণের সরকার। আমরা মনে করি গণতন্ত্র চর্চার ও গ্রামীণ জনপদের উন্নয়নের জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সম্মানি বাড়ানোর বিষয়টি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের একটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত। জনপ্রতিনিধিদের এ সম্মানি স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা শক্তিশালী হওয়ার জন্য দেশের সামগ্রিক শাসনপ্রণালি ও উন্নয়ন মজবুত ভিতের ওপর দাঁড়াবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।