সুখেন্দু সেন ::
(পূর্ব প্রকাশের পর)
ভারতীয় প্রতিরক্ষা গোয়েন্দারা গোপন বেতার বার্তা ইন্টারসেফট করে জানতে পারে পাকিস্তানি বাহিনী আগরতলা দখলের পরিকল্পনা করেছে এবং আজ রাতেই বিশাল বাহিনী নিয়ে অভিযান চালাবে। সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন। এমনিতেই তিনদিক দিয়ে পাকিস্তানের পেটের ভেতর ঢুকে থাকা ত্রিপুরার অবস্থান প্রথম থেকেই ঝুঁকিপূর্ণ। সাজসাজ রব পড়ে যায় সর্বত্র। সীমান্ত এলাকা থেকে সকল লোকজনদেরকে দ্রুত সরিয়ে নেয়া হয়। আগরতলা শহরের লোকদের সরে যেতে বলা হয় ভেতরের দিকে। সীমান্ত এলাকার বাড়ি ঘরে অবস্থান নেয় ভারতীয় সেনা আর মুক্তিবাহিনী। ট্যাংকের বহর ছুটে চলছে সীমান্তের দিকে। খচ্চর বাহিনী বয়ে নিয়ে যাচ্ছে জিনিসপত্র। মজুদ করা হচ্ছে গোলা-বারুদ। দিনের আলোর শেষে সন্ধ্যার আঁধার ঘনিয়ে আসার সাথে সাথেই ব্রিগেডিয়ার মিশ্রের ভারতীয় বাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকবাহিনীর উপর। ক্যাপ্টেন গফ্ফারের মুক্তিবাহিনী কসবার দিক থেকে আক্রমণ শুরু করে। আগরতলা দখলে নিজেদের অভিযান শুরু করার আগেই আক্রান্ত হয়ে হতচকিত হয়ে পাকিস্তান বাহিনী রণে ভঙ্গ দিয়ে পিছু হঠতে বাধ্য হয়। রক্ষা পায় আগরতলা। শহরে স্বস্তি ফিরে আসে।
২৮ অক্টোবর পর্যন্ত ত্রিপুরায় আগত শরণার্থী ১৪ লক্ষাধিক। ২৭৬টি শরণার্থী শিবির ছাড়াও স্থানীয় জনসাধারণ সরকারি-বেসরকারি সংস্থার সহায়তায় তারা আশ্রয়গ্রহণ করে বিভিন্ন স্থানে। খোলা আকাশের নিচে, পাহাড়ের পাদদেশেও ঠাঁই নিয়েছে।
জেলা- রেজিস্ট্রেশনকৃত শরণার্থীর সংখ্যা
পশ্চিম ত্রিপুরা ৭ লক্ষ ১৯ হাজার ৭৯১ জন
দক্ষিণ ত্রিপুরা ৪ লক্ষ ৩৩ হাজার ৬৭৩ জন
উত্তর ত্রিপুরা ১ লক্ষ ২৭ হাজার ৩৬৭ জন
মোট : ১৩ লক্ষ ৪০ হাজার ৮৩১ জন
রেজিস্ট্রেশন বহির্ভূত ৬৮ হাজার
সর্বমোট : ১৪ লক্ষ ৮ হাজার ৮৩১ জন
* তথ্যসূত্র : দৈনিক গণরাজ, আগরতলা, ৪ নভেম্বর সংখ্যা, সংগ্রহ : মুক্তিযুদ্ধে ত্রিপুরার সংবাদপত্রের ভূমিকা : ড. আবুল কালাম আজাদ।
পরবর্তীতে এ সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পায়। অনেকের মতে, তা ২০ লক্ষে পৌঁছে।
আভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে শরণার্থী জর্জরিত দুই রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরা একই ভাগ্য বরণ করে। পশ্চিমবঙ্গে অজয় মুখার্জীর যুক্তফ্রন্ট সরকারকে বরখাস্ত করে রাষ্ট্রপতির শাসন জারি হয় আরো আগেই। এবারে ত্রিপুরাতে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন শচীন্দ্র কুমার সিংহের মন্ত্রিসভা ভেঙে জারি হয় রাষ্ট্রপতির শাসন। রাজ্যের লেফটেনেন্ট গভর্নর জরুরি অবস্থা জারির প্রেক্ষিতে বেতার ভাষণে বলেনÑ বিপুল সংখ্যক শরণার্থী আগমনের ফলে উদ্ভুত পরিস্থিতি, সীমান্ত সংঘর্ষ, অনুপ্রবেশকারীদের অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকান্ডে ত্রিপুরায় প্রায় জরুরি অবস্থার মতো পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে। পাকিস্তান আমাদের সীমান্ত বরাবর প্রচুর সৈন্য মোতায়েন করে আমাদের ভূখন্ডে অনবরত গোলাগুলি নিক্ষেপ করছে। প্রায় ২শ জন নিহত ও ৫শ জন সাধারণ নাগরিক আহত হয়। সীমান্ত অঞ্চল থেকে অনেকেই বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। অন্তর্ঘাতমূলক কার্যকলাপ, শরণার্থীর বিপুল সমাগমে ত্রিপুরার স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়েছে। এই অবস্থার প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপতি এক আদেশের মাধ্যমে ত্রিপুরার মন্ত্রিপরিষদ ও বিধান সভার কার্যক্রম চার মাসের জন্য স্থগিত ঘোষণা করেছেন। (অসমাপ্ত)