মো. আমিনুল ইসলাম ::
নানা সংকটে জর্জরিত জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের বেহাল অবস্থার নেই কোন পরিবর্তন। এ সংকট হচ্ছে আরো ঘনিভূত। লোকবল সংকটে জেলার হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে সেবার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠছে বার বার। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতেও নেই উদ্যোগ। মাঝেমধ্যে জেলার স্বাস্থ্যসেবার মান নিয়ে সভা সেমিনারে আলোচনা চলে আসলেও নেই সমস্যা সমাধানের কার্যকর কোন পদক্ষেপ। তার উপর আবার পিছু ছাড়ছে না হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোর যানবাহন ও যন্ত্রপাতি সংক্রান্ত সমস্যা। চাহিদার তুলনায় সীমিত সংখ্যক যন্ত্রপাতি দিয়ে চলছে সেবা কার্যক্রম। এর মধ্যে অধিকাংশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে যন্ত্রপাতি থাকলেও টেকনিশিয়ান না থাকার ব্যাপারটি যেনো অনেকটাই ‘মরার উপর খাড়ার ঘা’ অবস্থা।
জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরেই এ সংকট নিয়ে চলছে সেবাকার্যক্রম। যন্ত্রপাতি ব্যবহৃত না হওয়ার কারণে রোগীদের বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার কাজগুলো টাকার বিনিময়ে সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বাইরে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে করাতে হচ্ছে নিয়মিত। এতে বাড়ছে ভোগান্তি।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ি, হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে দীর্ঘদিন যাবৎ যানবাহন ও ভারী যন্ত্রপাতি সংক্রান্ত সমস্যা বিরাজমান। এর মধ্যে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের সর্বমোট ১২ অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে চালু আছে ৬টি এবং দীর্ঘদিন ধরেই অচল অবস্থায় রয়েছে ৬টি অ্যাম্বুলেন্স। অচল অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের ১টি, জগন্নাথপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ১টি, জামালগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ১টি, তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নৌ অ্যাম্বুলেন্স ১টি, শাল্লা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নৌ অ্যাম্বুলেন্স ১টি ও ধর্মপাশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নৌ অ্যাম্বুলেন্স ১টি।
এছাড়া বিভিন্ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫টি জিপের মধ্যে চালু রয়েছে ৩টি এবং অচল অবস্থায় রয়েছে ২টি। জরুরি কাজে স্বাস্থ্য বিভাগে দেয়া ৩টি স্পিডবোটের মধ্যে চালু রয়েছে মাত্র ১টি। বাকি ২টি দীর্ঘদিন ধরেই অকেজো রয়েছে।
অপারেশনকালীন সময়ে বিদ্যুতের বিকল্প ব্যবস্থার জন্য বিভিন্ন সময়ে সরকার প্রদত্ত ১০টি জেনারেটরের মধ্যে সচল রয়েছে ৬টি। এগুলো দিয়ে চলছে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতাল, জগন্নাথপুর, বিশ্বম্ভরপুর, দোয়ারাবাজার, দিরাই ও ধর্মপাশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। আর ৪টি জেনারেটর অকেজো থাকায় বিদ্যুতের লোডশেডিংকালে অন্ধকারে থাকতে হচ্ছে ৪ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের রোগীদের। ভোগান্তি পোহাচ্ছেন ছাতক, তাহিরপুর, জামালগঞ্জ ও শাল্লা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের রোগীরা।
অন্যতম সমস্যা হচ্ছে এক্স-রে মেশিনের টেকনেশিয়ান না থাকার বিষয়টি। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যে জানা যায়, জেলার কেবল সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতাল এবং ছাতক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ছাড়া আর কোন উজেলায়ই এক্স-রে মেশিনের টেকনিশিয়ান নেই। এর মধ্যে সদর হাসপাতালে চালু রয়েছে ২টি এক্স-রে মেশিন ও ছাতক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১টি মেশিন। অন্যদিকে ধর্মপাশা, দিরাই, শাল্লা, জগন্নাথপুর, দোয়ারাবাজার, বিশ্বম্ভরপুর, জামালগঞ্জ ও তাহিরপুর উপজেলাস্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ কৈতক হাসপাতাল ও বক্ষব্যাধি ক্লিনিকে এক্স-রে মেশিন আছে ঠিকই কিন্তু কোন টেকনেশিয়ান না থাকার কারণে কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, সুনামগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি গৌরী ভট্টাচার্য্য বলেন, জেলার অনেক প্রসূতি সেবা নেই। সেখানে অ্যাম্বুলেন্স বিকল থাকায় গর্ভবতী মায়েদের সমস্যা হয়। এ বিষয়টি স্বাস্থ্য বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজর দেয়া উচিত।
এ বিষয়ে সিভিল সার্জন ডা. আব্দুল হাকিম বলেন, আমরা তীব্র সংকটের মধ্যে সেবা কার্যক্রম কোনরকমে চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের প্রচুর লোকবলের অভাব রয়েছে, যানবাহনের সমস্যা রয়েছে, টেকনেশিয়ান প্রয়োজন। এতোসব সমস্যায় আমরা এতো সংখ্যক রোগীদেরকে সেবা দিতে অনেকটাই হিমশিম খাচ্ছি। আমি অনেকবার এ বিষয়ে উপরে লেখালেখি করেছি। এসব সমস্যার সমাধান জরুরি।