বিশেষ প্রতিনিধি ::
সোমবার বেলা সাড়ে ১১টা। চর্মরোগের ডাক্তার দেখাতে নোয়াগাঁও গ্রামের সুন্দর আলী এসেছেন সদর হাসপাতালে। ৫ টাকা দিয়ে টিকেট কেটে ডাক্তার দেখাতে গেলে বিপত্তি দেখা দেয়। কারণ সংশ্লিষ্টরাই জানেননা চর্মরোগের ডাক্তার কোথায় বসেন। তাই ডাক্তার না দেখিয়েই ফিরে আসেন তিনি।
একইভাবে পায়ের গোঁড়ালির ব্যথা নিয়ে সাবিহা বেগম নামের এক নারী দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থেকে এসেছেন অর্থোপেডিক ডাক্তার দেখাতে। জরুরি বিভাগের পাশের রুমে সংশ্লিষ্ট ডাক্তারের নেইমপ্লেইট ঝুললেও বরাবরের মতো তিনি কক্ষে ছিলেন না। এভাবেই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন জেলার প্রত্যন্ত এলাকা থেকে আসা রোগীরা। ‘ভালো ডাক্তার’ দেখানোর আশায় তারা গ্রাম থেকে সময় ও অর্থ ব্যয় করে হাসপাতালে আসলেও ডাক্তারকে খুঁজে পান না।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সদর হাসপাতালে সার্জারি, শিশু, গাইনী, অর্থোপেডিক, ইএনটি, মেডিসিন, দন্তসহ বিভিন্ন বিভাগের ১২জন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার রয়েছেন।
এর মধ্যে কয়েকজন ডাক্তারের সেবা পেলেও বাকিরা হাসপাতালে আসেন কি-না বা দায়িত্ব পালন করেন কি না তা জানেননা রোগীরা। ফলে তারা সেবা না পেয়েই ফিরে যাচ্ছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও সাধারণ রোগীরা জানান, সিনিয়র বিশেষজ্ঞ (শিশু) ডা. সামিউল হক, ডা. বিশ্বজিৎ গোলদার (সার্জারি), ডা. মোজাফ্ফর হোসেন (গাইনী), জুনিয়র কনসালটেন্ট এনেসথিসিয়ান ডা. মুকুল রঞ্জন চক্রবর্তীর কাছ থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হিসেবে নিয়মিত চিকিৎসা পান রোগীরা। মাঝে-মধ্যে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার (অর্থোপেডিক) রাফি আহমদ ও জুনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন) ডা. বিষ্ণুপ্রসাদ চন্দকে তাঁদের কক্ষে দেখা যায়। তাঁদের কাছ থেকে নিয়মিত সেবা পাননা রোগীরা। এছাড়া জুনিয়র কনসালটেন্ট (চর্ম ও যৌন) ডা. মঈনুল ইসলাম চৌধুরী নান্না, জুনিয়র কনসালটেন্ট (এনেসথিসিস) ডা. জয়ন্ত কুমার, জুনিয়র কনসালটেন্ট (কার্ডিওলজি) ডা. গোলাম মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, জুনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারি) ডা. ফরিদুল হক, সিনিয়র কনসালটেন্ট (দন্ত) ডা. নূরুল আমিন মিয়া এবং সিনিয়র কনসালটেন্ট (নাক, কান ও গলা) ডা. ইমাদ হোসেন চৌধুরীর কাছ থেকে কোন সেবা পাচ্ছেন না রোগীরা।
জেলা সদর হাসপাতালে রোগীদের সেবাদানের জন্য ১২ জন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার থাকলেও কাক্সিক্ষত সেবা না পেয়ে অনেক রোগীকেই ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। হাসপাতালের অফিস সূত্রে জানা গেছে, নিয়মিত না আসলেও এসব বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা নিয়মিত বেতন-ভাতা উত্তোলন করছেন। ছুটি না নিয়েও তারা দিনের পর দিন অনুপস্থিত থাকেন বলে একটি সূত্র জানায়।
সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের হাসপাতালে ১২জন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার রয়েছেন। কক্ষ সংকটের কারণে তাঁরা বসতে পারেন না। যে কারণে সেবা নিতে আসা রোগীরা তাদের খুঁজে পাননা। নতুন হাসপাতাল চালু হলে এই সংকট থাকবেনা বলে তিনি জানান।
সুনামগঞ্জ সিভিল সার্জন ডা. মো. আব্দুল হাকিম বলেন, কয়েকজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হয়ে গেছেন। যে কারণে রোগীরা তাদের দেখতে পান না। অন্যরা নিয়মিত সেবা দিচ্ছেন বলে তিনি জানান।