1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
শুক্রবার, ০৯ জুন ২০২৩, ০৬:০৪ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

৩৮ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সঙ্কটে বিএনপি

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
চলমান পরিস্থিতিতে কোনোভাবেই ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না বিএনপি। প্রতিষ্ঠার পর বিভিন্ন সময় দলটি বিপর্যয়ের মুখে পড়লেও বারবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু এবারই সবচেয়ে বড় সঙ্কটে রয়েছে দেশের অন্যতম বৃহৎ এ রাজনৈতিক দল। ফলে ঘুরে দাঁড়ানোর চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে ৩৮ বছরের পুরোনো এ দলটি। বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে।
বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, গত এক বছরে দলীয় বা জাতীয় ইস্যুতে সক্রিয় কোনো কর্মসূচি দিয়ে রাজপথে নামতে পারেনি বিএনপি। এ ছাড়া ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ভোট বর্জনের পর আরেকটি নির্বাচন আদায়েও ব্যর্থ হয়েছে দলটি। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ ইস্যুতে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিলেও তাতে সাড়া পাননি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিলের দাবি জানালেও সক্রিয় কর্মসূচি দিয়ে রাজপথে নামতে পারেনি দলটি।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, সরকারের নানামুখী নির্যাতনের কারণে সক্রিয় কর্মসূচি দিয়ে এখনই রাজপথে নামতে চাচ্ছে না বিএনপি। যে কারণে দল গোছানোর দিকে মনোযোগী হয়েছেন দলীয় প্রধান। দলকে শক্তিশালী করে তারপরই আন্দোলনের দিকে যেতে চান তিনি। তবে বিএনপির নতুন কমিটি আশার আলো দেখাতে পারেনি। এতে অনেকেই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন। এ ছাড়া সরকারের ‘মদদে’ দলের শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে ওয়ার্ড পর্যায়ের কর্মীদেরও মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ রয়েছে। যে কারণে রাজপথে নামতে পারছে না বিএনপি নেতাকর্মীরা।
তবে দলের কেউ কেউ দাবি করেছেন, আজকের এই অবস্থার জন্য বিএনপির নতজানু পররাষ্ট্রনীতিও অনেকটা দায়ী। বিএনপি বিশাল জনসমর্থন থাকার পরও ঐক্য গড়ে তুলতে পারছে না। এত দিন পরে কেন রামপাল ইস্যুতে আন্দোলন? কেন ভারত নীতিতে বিএনপির হ-য-ব-র-ল অবস্থা? এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খায় নেতাকর্মীদের মধ্যে। জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় গত কয়েক বছর ধরে ভারতবিরোধী জোরালো কোনো প্রতিবাদ করতে পারেনি বিএনপি। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে আওয়ামী লীগ সুবিধা আদায় করে নিচ্ছে এটা অনেকটাই পরিষ্কার।
এদিকে ২৯ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বৈঠক করেন। মার্কিন দূতাবাসে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকের পর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, ‘তারা (যুক্তরাষ্ট্র) আশাবাদী, আমরাও (বিএনপি) আশাবাদী যে, মার্কিন সহযোগিতার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে, একই সঙ্গে এখানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে কথা হয়েছে। আগামী নির্বাচন স¤পর্কে, গণতন্ত্র স¤পর্কে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।’
এ ছাড়া ১৯ মার্চ বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় সম্মেলনের সাড়ে চার মাস পর মোট চার ধাপে দলের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। তবে এখনো স্থায়ী কমিটির দুটি পদ ছাড়াও আন্তর্জাতিক-বিষয়ক স¤পাদকের দুটি, যুববিষয়ক, ছাত্রবিষয়ক স¤পাদক ও সহ-স¤পাদকের পাঁচটি পদে কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। খালেদা জিয়া অনুমোদিত দলের নতুন এ কমিটি গত ৬ আগস্ট ঘোষণা করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপি আইনজীবী সূত্রে জানা যায়, খালেদা জিয়ার নামে প্রায় ৩০টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ২টি মামলার বিচারকাজ শেষের দিকে। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলা সাক্ষী গ্রহণ শেষ হয়েছে। এ ছাড়া জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলা সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে। বিএনপির সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নামেও প্রায় ১৩০টি মামলা রয়েছে। অর্থপাচারের একটি মামলায় তারেকের সাত বছরের কারাদন্ড ও ২০ কোটি টাকা জরিমানাও করা হয়েছে। এ ছাড়া ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা শেষের দিকে। সারাদেশে বিএনপি নেতাদের নামে প্রায় এক লাখ মামলা রয়েছে।
এ বিষয়ে বিএনপির সহ-আইনবিষয়ক স¤পাদক অ্যাডভোকেট সৈয়দ জয়নাল আবেদিন মেজবাহ বলেন, ‘সারাদেশে নেতাকর্মীদের নামে প্রায় ১ লাখ মামলা রয়েছে। এসব মামলা বিএনপিকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, কর্মী থেকে শীর্ষ নেতাদের পর্যন্ত রিমান্ডের নামে হয়রানি করা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘এর মূল কারণ হচ্ছে, বিএনপি যাতে রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী হয়ে ঘুরে দাঁড়াতে না পারে। মিথ্যা অভিযোগে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘কিছু সংকট কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই এগিয়ে যেতে হবে। বিএনপির বড় একটি দল তিনবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় এসেছে। বর্তমানে দলের বড় বড় রথি-মহারথিরা মামলায় জর্জরিত, জেল খাটছেন। সংকট থাকবেই। তারপরও আমি বলব, বিএনপি এখনো ভাঙেনি, সুসংহত আছে।’
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। এরপর সেনাবাহিনীতে অভ্যুত্থান-পাল্টা অভ্যুত্থানের পটভূমিতে ওই বছরের ৭ নভেম্বর ক্ষমতায় চলে আসেন জিয়াউর রহমান। প্রথমে তিনি ১৯ দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগদল)। পরবর্তীকালে ডান-বাম বিভিন্ন রাজনৈতিক মত ও পথের অনুসারীদের এক মঞ্চে এনে ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপিতে রূপান্তরিত করেন। দল গঠনের মাত্র ৩ বছরের মাথায় ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামে একদল বিপথগামী সেনা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে হত্যা করে। পরে দলের হাল ধরেন জিয়াউর রহমানের স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। দলটির ৩৮ বছরের ইতিহাসে প্রায় ৩৫ বছর ধরে দলের চেয়ারপারসনের দায়িত্ব পালন করছেন খালেদা জিয়া। এ ছাড়া দেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন খালেদা জিয়া।
জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর দলটি প্রথমবারের মতো নেতৃত্ব সংকটে পড়ে। তৎকালীন উপ-রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আব্দুস সাত্তার দলের হাল ধরেন। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ জেনারেল এরশাদের সামরিক অভ্যুত্থানে তিনি ক্ষমতাচ্যুত হন। বিচারপতি সাত্তারের ক্ষমতাচ্যুতির মাধ্যমে বিএনপি অস্তিত্ব সংকটে পড়ে। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদসহ বিএনপির অনেক নেতাই তখন জেনারেল এরশাদের সরকারে যোগ দেন। সংকটকালে ১৯৮৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বিএনপির হাল ধরেন খালেদা জিয়া।
জেনারেল এরশাদের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার আপোসহীন ভূমিকা ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসে। এরপর ২০০১ সালে আবারও ক্ষমতায় আসে দলটি। বর্তমানে প্রায় ৯ বছর ধরে দলটি ক্ষমতার বাইরে। সর্বশেষ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির সাধারণ নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com