মো.শাহজাহান মিয়া ::
আজ ৩১ আগস্ট জগন্নাথপুর উপজেলার শ্রীরামসি গণহত্যা দিবস। দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের লক্ষ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীনের জন্য পাক হানাদার বাহিনীর সাথে সারাদেশে মুক্তিযোদ্ধারা তুমুল যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। দেশে স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন স্থানীয় রাজাকারদের প্ররোচনায় প্রথমে নৌকাযোগে সিলেট থেকে হানাদার বাহিনী জগন্নাথপুরে আসে। পাকিস্তানি বাহিনী জগন্নাথপুর এসেই জগন্নাথপুর থানা ভবনসহ সবকিছু দখল করে নেয়। জগন্নাথপুর থানা ভবন ও থানার পার্শ্ববর্তী ব্যারিস্টার মির্জা আব্দুল মতিনের বাড়িতে পাকিস্তানি বাহিনীর ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। এ সময় পাকিস্তানি বাহিনী স্থানীয় রাজাকারদের দিয়ে কমিটি করে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সাব অফিস বানিয়ে দেয়। এসব অফিস নিয়ন্ত্রণ করা হতো ক্যাম্প থেকে। রাজাকাররা এসব অফিস থেকে সব সময় মুক্তিযোদ্ধাদের খবর পাকবাহিনীর কাছে আদান-প্রদান করতো। এসব রাজাকারদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালাতো পাকবাহিনী।
এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালের ৩১ আগস্ট স্থানীয় রাজাকারদের প্ররোচনায় জগন্নাথপুর ক্যাম্প থেকে নৌকাযোগে পাক হানাদার বাহিনী উপজেলার মিরপুর ইউনিয়নের শ্রীরামসি বাজারে যায়। সেখানে গিয়ে শান্তি কমিটির আহ্বানে এলাকার সর্বস্তরের নিরীহ লোকদের রাজাকারদের মাধ্যমে ডেকে এনে বাজারে জড়ো করে। এক পর্যায়ে এসব সমবেত নিরীহ লোকদের বাজারের পার্শ্ববর্তী ২টি বাড়িতে নিয়ে যায় পাকবাহিনী। সেখানে নিয়ে সবাইকে পিঠমোড়া দিয়ে হাত বেঁধে লাইন ধরিয়ে পৃথকভাবে প্রায় শতাধিক নিরীহ লোকজনের উপর নির্বিচারে গুলি করে নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালায় মানুষরূপী পাষন্ডরা। হত্যার পর তাদের লাশ বাড়ির পুকুরে ফেলে এসে শ্রীরামসি বাজার পুড়িয়ে দেয় পাক বাহিনী। এ সময় গুলিবিদ্ধ কয়েকজন মরে যাওয়ার ভান করে বেঁচে গিয়েছিলেন। এ নির্মম হত্যাকান্ডের পর পুরো উপজেলায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। লোকজন নিজেদের বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে বিভিন্ন স্থানে চলে যান। প্রায় মানব শূন্য হয়ে পড়ে জগন্নাথপুর।
দেশ স্বাধীনের পর এসব শহীদদের গণকবরে পৃথকভাবে শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়। সেই সাথে এসব শহীদদের স্মরণে প্রতি বছরের এই দিনে শ্রীরামসি গণহত্যা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। শ্রীরামসি শহীদ স্মৃতি সংসদ নামের একটি সামাজিক সংগঠন রয়েছে। এ সংগঠনের উদ্যোগে প্রতি বছর এ দিবসটি পালিত হয়ে থাকে।
শ্রীরামসি শহীদ স্মৃতি সংসদ সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৭ সাল থেকে শ্রীরামসি গণহত্যা দিবস পালন হয়ে আসছে। প্রতি বছরের মতো এবারো দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে শ্রীরামসি শহীদ স্মৃতি সংসদের সিনিয়র সহ-সভাপতি মাহবুব হোসেন জানান, এবার শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল, শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ, শোকসভা, স্মৃতি সংসদের উদ্যোগে মেধা বৃত্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ, আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান এমপি।