সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
রিজার্ভ থেকে চুরি হয়ে যাওয়া অর্থের প্রায় ১২২ কোটি টাকা (১৫ দশমিক ২৫ মিলিয়ন ডলার) দ্রুত দেশে ফেরত আনা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ ভবনে সরকারি প্রতিষ্ঠান স¤পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এ তথ্য জানানো হয়। তবে এই বৈঠকে এ সংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া কথা থাকলেও তা দেওয়া হয়নি।
বৈঠক শেষে কমিটির সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক সাংবাদিকদের বলেন, চুরি যাওয়া টাকা উদ্ধারের বিষয়ে তাদের অগ্রগতির প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। তারা মনে করে, ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজাল ব্যাংককে জরিমানা আরোপ করায় জালিয়াতির সঙ্গে ব্যাংকটির জড়িত থাকার বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকের চুরি যাওয়া পুরো টাকা ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংক লিখিত ভাবে জানায়, ফিলিপাইনের ক্যাসিনো ব্যবসায়ী কিম অং চুরি হয়ে যাওয়া টাকা থেকে ১৫ দশমিক ২৫ মিলিয়ন ডলার ফিলিপাইনের অ্যান্টি মানি লন্ডারিং কাউন্সিলের কাছে জমা দিয়েছে। বাংলাদেশকে এই টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য কাউন্সিল ও কিম অং আদালতে আবেদন করলে গত পহেলা জুলাই আদালত তা বাজেয়াপ্ত করার আদেশ দেন। পরে ফিলিপাইনের স্থানীয় আইন অনুযায়ী সেই দেশের ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য আবেদন করেছে। এখন আদালত আদেশ দিলেই বাংলাদেশ ১২২ কোটি টাকা ফেরত পাবে।
কমিটি সূত্র জানায়, আগের বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংককে ড. ফরাস উদ্দিনের তদন্ত প্রতিবেদন উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছিল। কিন্তু প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুহিবুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা নিজেরাই এখনো প্রতিবেদনটি পাননি। এটি অর্থমন্ত্রীর কাছে জমা আছে। তারা পেলে প্রতিবেদনটি কমিটির কাছে উত্থাপন করবে।
উল্লেখ্য, গত ৪ ফেব্রুয়ারি হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের ৮১ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ৮৪৮ কোটি টাকা) চুরি হয়। পরে এই টাকা ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের চারটি হিসাবে জমা হয়। সেখান থেকে টাকা ক্যাসিনোতে চলে যায়। বাংলাদেশ ব্যাংক কমিটিকে জানিয়েছে, অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকায় ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজাল ব্যাংককে ২১ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ১৬৮ কোটি টাকা) জরিমানা করেছে।
এদিকে বৈঠকে জানানো হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনার পর এ ধরনের ঘটনা এড়াতে আইটি নিরাপত্তা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এ লক্ষে বাংলাদেশ ক¤িপউটার কাউন্সিল, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এবং আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ, বাংলাদেশ ব্যাংকের আইটি গভর্নেন্স ও রিস্ক ম্যানেজমেন্ট ¯েপশালিস্ট (আন্তর্জাতিক পরামর্শক) এবং ব্যাংকটির কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি উচ্চমানের বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়েছে। এরই মধ্যে এই কমিটি ব্যাংকটির বর্তমান আইটি নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যালোচনা করে উপযুক্ত আইটি নিরাপত্তা পরিকল্পনা তৈরি করেছে। খুব শিগগিরই বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক পর্ষদের অনুমোদন নিয়ে উক্ত পরিকল্পনা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করা হবে।