সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
জাগৃতির প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন হত্যাকান্ডে জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার ছাতকের শামীম ওরফে সমীর ওরফে সিফাত আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। সোমবার ঢাকা মহানগর হাকিম আহসান হাবীবের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন তিনি। জবানবন্দি শেষে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।
এদিকে, ৬ দিনের রিমান্ড শেষে সোমবার তাকে আদালতে হাজির করেন মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ফজলুর রহমান। এ সময় তার স্বেচ্ছায় জবানবন্দি রেকর্ড করার জন্য আবেদন করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।
গত ২৪ আগস্ট তাকে সিএমএম আদালতে হাজির করে মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ফজলুর রহমান। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম আহসান হাবীব ৬ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে গত ২৩ আগস্ট দিনগত রাতে টঙ্গী থেকে দীপন হত্যাকান্ডের প্রধান ও পুরস্কার ঘোষিত আসামি মইনুল হাসান শামীমকে (সাংগঠনিক নাম সিফাত, সামির, ইমরান) গ্রেফতার করে পুলিশ।
ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান ও অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, দীপন হত্যায় জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহর যে সিøপার সেলটি কিলিং মিশনে ছিল, ওই জঙ্গিদের প্রধান ছিল গ্রেফতার হওয়া এই শামীম ওরফে সিফাত। আর অভিজিতের মতো দীপন হত্যারও পরিকল্পনাকারী বা মাস্টারমাইন্ড সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত মেজর জিয়াউল হক জিয়া। কিলিং মিশনের দায়িত্ব পালনকারী জঙ্গিদের কাছে জিয়াই তাদের কথিত ‘বড় ভাই’। বিজ্ঞানবিষয়ক লেখক অভিজিৎ রায়সহ কমপক্ষে ১০ জন লেখক ও ভিন্নমতাবলম্বী খুনের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের ছয় জঙ্গির ছবি প্রকাশ করে তাদের ধরিয়ে দিতে ১৮ লাখ টাকা পুরস্কার ষোষণা করে ডিএমপি। ওই ৬ জঙ্গির মধ্যে শামীম ওরফে সিফাতও একজন। বোমা তৈরির বিষয়ে তার বিশেষ প্রশিক্ষণ রয়েছে। পুলিশের ভাষ্য, সিফাত ছাড়াও সামির, ইমরান এসব নামে পরিচিত শামীম। দীপন হত্যাকান্ডের সার্বিক সমন্বয়কারী ছিলেন ছাতকের ছেলে শামীম। দীপন হত্যায় অংশগ্রহণকারীদের প্রশিক্ষকের দায়িত্বও পালন করেন তিনি।
এবিটি জঙ্গি শামীম ওরফে সিফাতকে গ্রেফতার প্রসঙ্গে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান ও ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানান, প্রকাশক ফয়সল আরেফীন দীপন হত্যা মামলার প্রধান আসামি শামীম প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে মেজর জিয়াই তাদের বড় ভাই। সে-ই তাদের সব প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। মনিরুল ইসলাম বলেন, এবিটি স্লিপার সেলের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের তাদের ভাষায় ‘মাসুল’ বলা হয়। দীপন হত্যায় ৫ জন অংশ নেয়। শামীম তাদের মধ্যে একজন। তিনি বলেন, দীপন হত্যার আগে শামীমের নেতৃত্বে ¯ি¬পার সেলটি টঙ্গীর একটি বাসায় প্রশিক্ষণ নেয়। পরে মহাখালিতে চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিয়ে দীপনকে হত্যা করে। এই প্রস্তুতি তাদের ভাষায় ‘মারকাজ’ নামে পরিচিত। তিনি আরো জানান, শামীম ২০১৪ সাভারে এক ছাত্র হত্যায় জড়িত ও তার বিরুদ্ধে ছাতকে একটি মামলা আছে। তার গ্রামের বাড়ি ছাতক উপজেলার কালারুকা ইউনিয়নের মাধবপুর গ্রামে। ছয় ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট তিনি। বাবা আবদুল কুদ্দুছ মারা গেছেন বছর পাঁচেক আগে। সে মদনমোহন কলেজের ছাত্র ছিল।
প্রসঙ্গত, গত বছর ৩১ অক্টোবর বিকেলে শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটে নিজের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান জাগৃতি প্রকাশনীর কার্যালয়ে খুন হন দীপন। ব্লগার ও লেখক অভিজিৎ রায়ের বইয়ের প্রকাশক ছিলেন তিনি।