শামস শামীম ::
রোড পারমিট, টেক্স ফিটনেস, রেজিস্ট্রেশন এবং লাইসেন্স ছাড়াই সুনামগঞ্জের আভ্যন্তরীণ সড়কে চলছে দুই হাজারেরও অধিক অটো টেম্পু। এতে সরকার মোটা অংকের রাজস্ব বঞ্চিতের পাশাপাশি সড়কে ঘনঘন দুর্ঘটনাও ঘটছে। দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনাও বাড়ছে। এসব পরিবহনের চালক ও যানবাহনের বৈধ কাগজপত্র না থাকায় দুর্ঘটনার পর তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থাও নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া চালক-হেলপারদের হাতে যাত্রীদের হয়রানি হতে হচ্ছে। এদিকে অভিযোগ রয়েছে, রেজিস্ট্রেশন নীতিমালা ভঙ্গ করে সমিতি প্রতিনিয়ত রেজিস্ট্রেশন ছাড়াই মোটা অংকের ফি নিয়ে গাড়ি সমিতিতে অন্তর্ভুক্ত করছে।
সুনামগঞ্জ অটো টেম্পু হিউম্যান হলার সমিতি সূত্রে জানা গেছে, জেলায় প্রায় ২ হাজার অটো টেম্পু ও অটো রিকশা রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৮০০ লেগুনা এবং বাকিগুলো অটোরিকশা ও অন্যান্য যানবাহন। প্রায় ১৫ হাজার টাকা নিয়ে প্রতিনিয়ত এসব গাড়ি অন্তর্ভুক্ত করছে সমিতি। নিবন্ধিত সমিতি হওয়ার পরও সেই সংগঠনের অডিট হয়নি বলে জানাগেছে।
সুনামগঞ্জ বিআরটিএ অফিস সূত্রে জানা যায়, অটো টেম্পু হিউম্যান হলার ও অটো রিকশার সরকারি রোড পারমিট মাত্র ১৪ কি.মি.। সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কসহ আভ্যন্তরীণ সড়কে রোড পারমিট ছাড়াই যাতায়াত করছে হাজারো যানবাহন।
জানা গেছে, সমিতির অধীনে প্রায় ২০০০ হাজার অটোটেম্পু ও অটো রিকশা রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ২২৭টি গাড়ির রেজিস্ট্রেশন রয়েছে। তবে ৯৯ ভাগ গাড়ির টেক্স ফিটনেস নেই। ১০ ভাগ চালকেরও লাইসেন্স নেই। রোড পারমিট, লাইসেন্স ও রেজিস্ট্রেশন ছাড়াই দাপটের সঙ্গে গাড়ি চলছে। রেজিস্ট্রেশন ও রোড পারমিটবিহীন অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে প্রশাসন ব্যবস্থা নিতে চাইলে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দিয়ে চরম যাত্রী ভোগান্তির সৃষ্টি করেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রায় ৩ বছর আগে এসব অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে গিয়ে শহরের ইকবালনগর এলাকায় জেলা প্রশাসনের এক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে নাজেহাল হতে হয়েছিল। যতবারই রেজিস্ট্রেশনবিহীন গাড়ি ও চালকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চাওয়া হয়েছে ততবারই মালিক ও শ্রমিকরা বাধা প্রদান করেছেন। সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। যাত্রীরা এসব অভিযোগ করলে চালক ও হেলপারদের হাতে তাদের লাঞ্ছিত হতে হয়। সম্প্রতি সদর উপজেলার সরদারপুর পয়েন্টে এক যাত্রীকে এ কারণে হয়রানি করা হয়।
বিআরটিএ অফিস সূত্রে জানা গেছে, ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনার সময় মালিক-শ্রমিকরা নানাভাবে বাধা প্রদান করে। সড়কে অভিযান চলছে খবর পেলে তারা দূরে গাড়ি রেখে যাত্রীদের হয়রানি করে। ওই সূত্র আরো জানায়, সরকারি নিবন্ধিত সমিতি হিসেবে প্রতি বছর অডিট করানোর কথা থাকলেও সমিতি কখনো অডিট করায় না।
গত ২৫ আগস্ট সুনামগঞ্জ বাস মিনিবাস ও মাইক্রোবাস মালিক গ্রুপের কার্যালয়ে সিলেট বিভাগের মালিক – শ্রমিকদের জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই সভায় সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে রোড পারমিটবিহীন অটোটেম্পুর কারণে দুর্ঘটনা বাড়ছে বলে বক্তারা জানান। তারা অবিলম্বে রোড পারমিটবিহীন অটো টেম্পু হিউম্যান হলার বন্ধের জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান। বক্তারা বলেন, সুনামগঞ্জ সিলেট সড়ক এবং সুনামগঞ্জের আভ্যন্তরীণ সড়কে রোড পারমিট ছাড়াই হাজার হাজার অটোটেম্পু চলছে।
সুনামগঞ্জ অটোটেম্পু হিউম্যান হলার মালিক সমিতির সভাপতি তাজিদুর রহমান বলেন, সিএনজিসহ আমাদের প্রায় ২ হাজারের মতো গাড়ি সমিতির অধীনে রয়েছে। কতগুলো গাড়ির রোড পারমিট, রেজিস্ট্রেশন ও টেক্স ফিটনেস রয়েছে তা আমার জানা নেই। ধীরে ধীরে গাড়িগুলোকে শৃঙ্খলার ভেতরে নিয়ে আসার জন্য চেষ্টা করছি। তাদেরকে সিস্টেমে নিয়ে আসতে আমরা নোটিশও পাঠিয়েছি। তবে ১৫ হাজার টাকা নিয়ে রেজিস্ট্রেশন ও রোড পারমিট ছাড়াই গাড়ি সমিতিতে অন্তর্ভুক্তের কথা স্বীকার করেন তিনি।
সুনামগঞ্জ বিআরটিএ অফিসের মোটরযান পরিদর্শক মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরী বলেন, আমরা নিয়মিতই ভ্রাম্যমাণ আদালতে অভিযান পরিচালনা করি। অভিযানের খবর পেয়েই অটো টেম্পুর সংশ্লিষ্টরা যাত্রীদের দূরে নামিয়ে সটকে পড়েন। সুনামগঞ্জের প্রায় সব অটো টেম্পু এবং হিউম্যান হলার রোড পারমিট ছাড়াই চলছে। হাতেগোনা যে কয়েকটি যানবাহন রেজিস্ট্রেশন নিয়েছে তাদেরও ৯৯ ভাগের টেক্স ফিটনেস নেই। এসব যানবাহনের ১০ ভাগ চালকের লাইসেন্স নেই বলে তিনি জানান।
সুনামগঞ্জ ট্রাফিক সার্জেন্ট সালাহ উদ্দিন মোহাম্মদ কাজল বলেন, পুলিশ, প্রশাসন, বিআরটিএ এবং আরটিসি মিলে যদি অভিযানে নামে তাহলে অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব। একা কোন প্রতিষ্ঠানের পক্ষেই এই সমস্যা দূর করা সম্ভব না। তবে আমরা প্রতিদিনই রেজিস্ট্রেশনবিহীন, লাইসেন্সবিহীন এবং রোড পারমিটবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি। তাদেরকে মামলা ও জরিমানা করছি।