বিশেষ প্রতিনিধি ::
সুনামগঞ্জ – সিলেট সড়কের মতো নি¤œমানের বাস দিয়ে যাত্রীসেবা দেশের আর কোথাও নেই। লক্কর-ঝক্কর, মেয়াদোত্তীর্ণ বাস দিয়ে সাধারণ ও বিরতিহীন যাত্রীসেবার কারণে সাধারণ মানুষ আমাদের উপর ক্ষুব্ধ, অতীষ্ঠ। কারণ দেশের আর কোথাও এই সড়কের মতো অতিরিক্ত সিট বসিয়ে ব্যবসা করার নজির নেই। আমরা পরিবহন মালিক সমিতির নেতারা সময়ের প্রয়োজনে আধুনিক ও উন্নত বাস নামাতে ব্যর্থ হয়েছি। তাই আমাদের এই ব্যর্থতার সুযোগ নিয়ে যদি কোন সিন্ডিকেট এই সড়কে আধুনিক ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাস নামায় তখন আমাদের করণীয় কিছুই থাকবেনা। কারণ জনগণ তখন আমাদের পক্ষে থাকবেনা। তাদেরকে যারা ভালো ও উন্নত সেবা দিবে তাদের কথাই তারা বলবে। আমরা ব্যবসা করব আবার গ্রাহকের স্বার্থ দেখব-তা হয় না। সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কে উন্নত ও আধুনিক বাস নামানো এখন সময়ের দাবি।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ‘সুনামগঞ্জ বাস মিনিবাস মাইক্রোবাস মালিক গ্রুপ’র কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সিলেট ও সুনামগঞ্জের চারটি মালিক সমিতি ও দুটি শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের নিয়ে মতবিনিময়ে ‘সুনামগঞ্জ বাস মিনিবাস মাইক্রোবাস মালিক গ্রুপ’র এক নেতা এভাবেই কথা বলেন।
ওই নেতার মতো সুনামগঞ্জ জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সাহার উদ্দিনের কণ্ঠেও একই কথা প্রতিধ্বনিত হয়। সুনামগঞ্জের মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতারা বিভেদ ভুলে জরুরি ভিত্তিতে এই সড়কে বিরতিহীন বাস সার্ভিসসহ অন্যান্য বাসের যাত্রীসেবার মানোন্নয়ন ও আধুনিক বাস সড়কে নামানোর আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কে রোড পারমিট ছাড়া যেসব লেগুনা, অটো রিকশা হিউম্যান হলার অবৈধভাবে সেবা দিচ্ছে তা বন্ধেরও আহ্বান জানান নেতৃবৃন্দ।
সুনামগঞ্জ বাস মিনিবাস মাইক্রোবাস মালিকগ্রুপের সভাপতি হাজী আব্দুল মান্নানের সভাপতিত্বে ও সংগঠনের সাবেক সেক্রেটারি মোহাম্মদ জুয়েল মিয়ার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন সিলেট মোটর বাস মাইক্রোবাস মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুর রহিম, সিলেট মাইক্রোবাস মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি হাজী খলিলুর রহমান, সুনামগঞ্জ বাস মিনিবাস মাইক্রোবাস মালিকগ্রুপের মহাসচিব হাজী মোজাম্মেল হক, সিলেট বিভাগীয় পরিবহন শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি ফলিক মিয়া, সেক্রেটারি রকিব উদ্দিন রফিক, সুনামগঞ্জ জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সাহার উদ্দিন, সেক্রেটারি নূরুল হক প্রমুখ। মতবিনিময় সভায় চারটি মালিক সমিতি এবং দুটি পরিবহন শ্রমিক সংগঠনের প্রায় অর্ধ শতাধিক নেতাকর্মী অংশ নেন। তবে সুনামগঞ্জের মালিক ও শ্রমিকদের কণ্ঠে একই দাবি অনুরণিত হয়েছে। সাধারণ যাত্রীদের আক্ষেপ ও হতাশার কথাই উঠে এসেছে নেতৃবৃন্দের কণ্ঠে।
সুনামগঞ্জ বাস মিনিবাস মাইক্রোবাস মালিকগ্রুপের সাবেক সেক্রেটারি মোহাম্মদ জুয়েল মিয়া তার বক্তব্যে নেতৃবৃন্দের উদ্দেশে বলেন, যাত্রীসেবার মান্নোয়ন ঘটাতে হবে। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পরিবহন সেবা দিতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। আমরা ন্যূনতম ভালো বিরতিহীন বাস সার্ভিস দিতে পারছিনা। রাস্তায় রাস্তায় দাঁড় করিয়ে আমাদের চালকরা যাত্রী তুলেন। অতিরিক্ত টাকা দিয়েও বিরতিহীনের নামে আমাদের যাত্রীরা সাধারণ সেবাও পাচ্ছেনা। তিনি সুনামগঞ্জ ও সিলেটের শ্রমিক নেতাদের এ বিষয়ে কঠোর হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, দুই জেলার দুই শ্রমিক নেতারা বিরতিহীনের নামে এই দুর্ভোগের যাত্রীসেবায় যারা জড়িত থাকবে শ্রমিক নেতারা তাদের যে শাস্তি দিবেন আমরা মালিকরা মেনে নেব। আমাদের ব্যর্থতার কারণে অন্য কোন সিন্ডিকেট এই সড়কে আধুনিক সেবার জন্য ভালো বাস নামালে আমাদের করণীয় কিছু থাকবেনা। কারণ জনগণ তখন ভালোসেবাই গ্রহণ করবেন।
সুনামগঞ্জ জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সাহার উদ্দিন সুনামগঞ্জ ও সিলেট মালিক সমিতির নেতাদের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, গত বছর উন্নত সেবার জন্য সিদ্ধান্ত হয়েছিল গাড়ি থেকে অতিরিক্ত সিট অপসারণের জন্য। কিছু সিট অপসারণের পর অন্যরা না করায় ফের যারা সিট অপসারণ করিয়েছিলেন তারাও নতুন করে সিট লাগিয়ে নেন। এটা ঠিক না। ব্যবসা করতে হলে লাভ-লোকসান মেনেই ব্যবসা করতে হবে।
মতবিনিময় সভায় সুনামগঞ্জ ও সিলেটের মালিক ও শ্রমিকরা সময়ের প্রয়োজনে সিলেট বিভাগে পিছিয়ে থাকা সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কে উন্নত বাস সার্ভিস চালু, বিরতিহীন বাসে যাত্রীসেবার মানোন্নয়নে ঐক্যমতে পৌঁছেন। একই সঙ্গে ওই সড়কে নির্ধারিত রোড পারমিটে অটো টেম্পু হিউম্যান হলার চলাচলের দাবি জানান তারা। উন্নত ও আধুনিক বাস সার্ভিসের অন্তরায় হয়ে আছে অটো টেম্পু হিউম্যান হলারসহ অন্যান্য ছোট যানগুলো। এমন মন্তব্য করেন তারা।