বিশেষ প্রতিনিধি ::
বোরো ফসল হারানো কৃষকের আর্তচিৎকার থামতে না থামতেই গত মাসে সুনামগঞ্জে পাহাড়ি ঢল ও বর্ষণে কৃষিরও ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। ‘তথ্য লুকানো’র কারণে বোরোহারা কৃষকরা ক্ষতিপূরণ পাননি। এখন এই কৃষকরাই আবার পাহাড়ি ঢল ও বর্ষণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বারবার ক্ষতির মুখে পড়লেও ক্ষতিপূরণ পাননি তারা। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা ক্ষতিপূরণ প্রদানের জন্য জোর দাবি জানিয়েছেন।
সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি বন্যায় আমন, রোপা আমন ও বীজতলাসহ প্রায় দুই হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। এতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৪ কোটি টাকা। তাছাড়া মৎস্য বিভাগ এক পরিসংখ্যানে জানিয়েছে, সহ¯্রাধিক পুকুরের মাছ ভেসে যাওয়ায় এতে প্রায় ৬ কোটি টাকার ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। এভাবে ক্ষতির পাল্লা ভারি হলেও ক্ষতিপূরণ তো দূরের কথা, কৃষিতে কোন ভর্তুকি বা ঋণ সহায়তা পাচ্ছেন না কৃষকরা।
কৃষকদের অভিযোগ, স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কৃষকদের ক্ষয়-ক্ষতির প্রকৃত চিত্র সরকারের কাছে আড়াল করায় কৃষকরা সহায়তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এসব অভিযোগ চলতি বছর বোরো মওসুমে ফসল হারানোর পর কৃষক নেতা ও স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা বিভিন্ন ফোরামে অভিযোগ করেছেন।
কৃষক নেতা এনামুল কবির বলেন, এই বছর দুই বার ফসল হারিয়েছেন কৃষকরা। তাদের ডাবল ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু কোন ধরনের সহায়তা তো দূরের কথা, ভর্তুকি বা ঋণ সুবিধাও পাচ্ছেন না তারা। এভাবে কৃষক প্রতিনিয়ত ক্ষতি গুনছেন। তাই কৃষি অর্থনীতি বাঁচিয়ে রাখতে কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
তাহিরপুরের বাবরুল হাসান বলেন, এবার বোরো মওসুমে অন্যান্য ব্যবসা রেখে কৃষিতে মনোযোগী হয়েছিলাম। কিন্তু একমুঠো ধানও গোলায় তোলতে পারিনি। পুরো ফসল শিলাবৃষ্টি এবং পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে গেছে। এতে আমার প্রায় লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে। এই ক্ষতি কোনভাবেই পূরণ করতে পারছিনা। এভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে কৃষক কৃষির প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে।
সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. জাহেদুল হক বলেন, আমরা বোরোর ক্ষতির চিত্র সরকারকে পাঠিয়েছি। এবার ২০-২৫ ভাগ বোরো ফসলের ক্ষতি হয়েছে। তাছাড়া সাম্প্রতিক বন্যায় আরো ৩-৪ কোটি টাকার আমনের ক্ষতি হয়েছে। ভর্তুকি বা সহায়তা নেওয়া সরকারের কাজ। সরকার সহায়তার উদ্যোগ নিলে আমরা কৃষকদের তা পৌঁছে দিব।