সামছুল ইসলাম সরদার ::
দিরাই উপজেলাকে বাল্যবিয়ে মুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। শনিবার দুপুরে উপজেলা সদরের বিএডিসি মাঠে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম এ ঘোষণা দেন।
দিরাই উপজেলা প্রশাসন এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন, আজকের এই ঘোষণা দীর্ঘ সামাজিক আন্দোলনের ফসল। সরকারি, বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার নানামুখী সচেতনতামূলক কর্মকান্ড বাল্যবিয়ের রোধে ভূমিকা রেখেছে। পর্যায়ক্রমে এক একটি করে ইউনিয়কে বাল্যবিয়ে মুক্ত করে আজ পুরো উপজেলা এই সামাজিক ব্যাধির হাত থেকে মুক্ত।
তিনি বলেন, নারী শিক্ষার প্রসার, মাতৃমৃত্যুর ঝুঁকি হ্রাস-সহ নানাবিধ কারণে বাল্যবিয়ে বিরোধী এই সমাজিক আন্দোলন গোটা দেশে ছড়িয়ে দিতে হবে।
জেলা প্রশাসক আরও বলেন, আজ ভাটি অঞ্চল বাল্য বিবাহের অভিশাপ থেকে মুক্ত হতে যাচ্ছে। আমি আজ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের সামনে এ ঘোষণা দিয়েছি। প্রশাসনের একার পক্ষে এ ঘোষণা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। এ জন্য আপনাদের সকলকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে কাজ করতে হবে। হাওরাঞ্চলে বাল্যবিবাহ বৃদ্ধির কারণ হচ্ছে এ অঞ্চল শিক্ষায় পিছিয়ে থাকা, আর অভিভাবকদের অসচেতনতা। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে কাজী, মসজিদের ইমাম, পুরোহিত ও জনপ্রতিনিধিদের। আপনাদের একান্ত সহযোগিতায়ই এ ঘোষণা বাস্তবায়ন সম্ভব।
বাল্যবিবাহের কুফল তুলে ধরে জেলা প্রশাসক বলেন, বাল্যবিবাহের কারণেই আমাদের দেশে মাতৃমৃত্যু, শিশুমৃত্যু ও অপুষ্টিজনিত রোগ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব মরণব্যাধি থেকে মুক্তি পেতে হলে সবার আগে শিক্ষার হার ও মান বাড়াতে হবে। শিক্ষার মান উন্নয়নে জনপ্রতিনিধিদের বেশি বেশি করে বিদ্যালয় পরিদর্শন করতে হবে এবং ঝরেপড়া শিক্ষার্থীদের রোধে অভিভাবকদের সচেতন করে তুলতে হবে।
তিনি বলেন, ইতিমধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাওরাঞ্চলে শিক্ষার মান উন্নয়নে ও ঝরেপড়া রোধে আবাসিক বিদ্যালয় গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছেন। আমি হাওরপাড়ের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখেছি। হাওরপাড়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে অনেক প্রতিভা আছে। উপযুক্ত পরিবেশ পেলে তারা নিজেকে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারবে। আজকের সমাবেশে মেয়ে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে ভাটি অঞ্চলের মেয়েরা তাদের অধিকার স¤পর্কে অনেকটা সচেতন হয়েছেন।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন, তোমাদের নিজেদের অধিকার স¤পর্কে সচেতন হলেই বাল্য বিবাহ, যৌতুক, নারী নির্যাতন, ইভটিজিং প্রতিরোধ সম্ভব।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলতাফ হোসেন।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেনের পরিচালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান তালুকদার, দিরাই পৌরসভার মেয়র মোশাররফ মিয়া, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ছবি চৌধুরী, দিরাই কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অনুকূল চন্দ্র দেব, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত মহিলা কলেজর অধ্যক্ষ মিহির রঞ্জন দাস, দিরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল জলিল, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আছাব উদ্দিন সরদার, সহ সভাপতি সুহেল আহমদ, সিরাজোদৌলা।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ইউপি চেয়ারম্যান রতন তালুকদার, রেজুয়ান খান, মুজিবুর রহমান, রেজুয়ান খান, দিরাই প্রেসক্লাব সভাপতি সামছুল ইসলাম সরদার।
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন দিরাই উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাফর ইকবাল, রাজানগর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক রাকেশ রঞ্জন সরকার, দিরাই প্রেসক্লাবে যুগ্ম সাধারণ স¤পাদক মুজাহিদুল ইসলাম, অর্থ স¤পাদক সৈদুর রহমান তালুকদার, এজলাসের উপজেলা সমন্বয়কারী আব্দুস সামাদ নয়ন প্রমুখ।
উপজেলাকে বাল্যবিয়ের মুক্ত ঘোষণা করার পূর্বে উপজেলা সদরে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়।