সমর চক্রবর্ত্তী ::
“মানসম্মত শিক্ষা জাতির প্রতিজ্ঞা” ২০১৬ এর প্রতিপাদ্য বিষয়। দেরিতে হলেও আমরা শিক্ষার মান নিয়ে ভাবছি। এটাই আশার কথা। মানসম্মত শিক্ষা অর্জনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখছে বর্তমান প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণি কার্যক্রম। গবেষণা অনুযায়ী ৫ম শ্রেণির/২০১৬ইং বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় ৬৫ পৃষ্ঠার তথ্য নিচে সংযোজন করলাম।
ধরণ ছাত্র ছাত্রী
ঝরে পড়া ৮৪% ৮১%
পঞ্চম শেণিতে উত্তীর্ণ কিন্তু ফলাফল ভাল নয় ৩৪% ৩২%
ভালো ফলাফল নিয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ ২৮% ২৮%
মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে আমাদের যা করণীয় তা আলোচনা করব। তার পূর্বে একটু বলে নেই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও অন্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের পার্থক্য কেন?
যদি কোন একটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৫ম শ্রেণির ছাত্র ধরেন ৩০ জন। এরা সমাপনী পরীক্ষায় বেশির ভাগ পাস করে। এ+ পায় ২০-২৫ জন অন্যরা এ পেয়ে যায় তবে মাঝে মাঝে ১/২ জন ফেল করে।
অন্যদিকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যদি ৩০ জন ছাত্র থাকে, সেখানে এ+ পায় ১টি বা নাই। বাকিরা পায় এ, এ-, বি, সি, ডি ইত্যাদি। এই চিত্র বেশির ভাগ বিদ্যালয়গুলোতে লক্ষণীয়। তুলনা করলাম যাতে আমরা কারণগুলো স্পষ্ট করতে পারি।
আসুন পূর্বের মানসম্মত শিক্ষায় করণীয় বিষয়ে ফিরে যাই।
মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে হলে যে যে উপাদান রয়েছে সেগুলো সম্পর্কে জানা দরকার।
১) শিক্ষার্থী
২) অভিভাবক/ পরিবার
৩) শিক্ষক
এই তিনের সঠিক সমন্বয় ঘটলেই মানসম্মত শিক্ষা বাস্তবায়ন সম্ভব।
একটু ভেবে দেখুন প্রত্যেকটি বিদ্যালয়েই কিছু না কিছু অগ্রবর্তী শিক্ষার্থী থাকে। তার কারণ তার পরিবার। এবার আসি পূর্বের কথায়।
* শিক্ষার্থী : কিছু শিক্ষার্থী আছে তারা আলাদা বৈশিষ্ট্য ও স্বাতন্ত্র্য রয়েছে। সে অল্পতেই অনেক কিছু ধারণ করতে পারে। তার মধ্য থেকেই নতুন কিছু বের হয়।
আবার আরো কিছু শিক্ষার্থী রয়েছে যারা নতুন কিছু করতে বা বলতে পারেনা। তাকে বলে দিলে বা দেখিয়ে দিলে আস্তে আস্তে বলতে ও করতে পারে।
আরো এক ধরনের শিশু রয়েছে যারা আরো কম ক্ষমতা সম্পন্ন। এরা উপরের দুই শ্রেণির শিক্ষার্থী থেকে আলাদা। তারা সব কিছুই দেরিতে বুঝে বা ধরে রাখার ক্ষমতাও কম। এমনকি ক্লাস শেষে দেখা যায় সে কিছুই বলতে পারে না।
এক্ষেত্রে তিনটি পর্যায়ের শিক্ষার্থী নির্ধারণ করে তার বৈশিষ্ট্য মোতাবেক আলাদা করে পাঠদান করতে পারলে তাদের সার্বিক উন্নতি করা সম্ভব।
* অভিভাবক/পরিবার : যে পরিবারের মা শিক্ষিত বা মোটামুটি লেখাপড়া জানেন তাদের শিক্ষার্থীরা একটু অগ্রবর্তী। কারণ একটি শিশু ৫+ বয়স পর্যন্ত তার পরিবারেই বেড়ে ওঠে, তার পরিমন্ডলে অনেক কিছু সে শিখতে পায়। তাই এই পরিবারের শিক্ষার্থীরা অগ্রবর্তী হয়। তারা শিক্ষকদের সহায়তায় আরো অগ্রগতি লাভ করে। এ পরিবারের শিক্ষার্থরা পরিপাটি হয়ে, খাওয়া দাওয়া করে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে বিদ্যালয়ে আসে।
আরেক শ্রেণির অভিভাবক যারা নিজেরা কিছু লেখাপড়া জানেন কিন্তু শিক্ষর্থীরদের দিকে নজর দেন না, শুধু বলেন পড় পড়। বিদ্যালয়ে যাওয়া আসা করে কিনা খোঁজ নেন মাঝে মাঝে এপর্যন্তই। তবে এই ধরনের শিক্ষার্থীরা স্কুল ড্রেস পরে পরিপাটি হয়ে আসার চেষ্টা করে। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রও নিয়ে আসে।
অন্যদিকে কিছু অভিভাবক রয়েছেন যারা নিজেরা লেখাপড়া জানেন না এবং বাচ্চারও খোঁজ-খবর রাখেন না। এ পরিবারের শিক্ষার্থীরা খাওয়া-দাওয়া না করে অপরিচ্ছন্ন অবস্থায়, স্কুল ড্রেস, জুতা, খাতা-কলম ছাড়াই বিদ্যালয়ে চলে আসে। এর বিদ্যালয়ের পরিবেশ বুঝে না। এরা শিক্ষকদের কথায় বিদ্যালয়ে আসে আবার উপবৃত্তির জন্যও আসে। কিন্তু বাস্তবে এই পিছিয়ে পড়া শিশুদের জন্য একটি শ্রেণিতে পূর্ণাঙ্গ পাঠদান করা যায় না। ভিন্ন ক্যাটাগরির ভিন্ন শিশু একই শ্রেণিতে থাকে তাই পাঠদান কার্যক্রমও সাবলীল হয় না।
* শিক্ষক : উপর্যুক্ত বিষয়গুলো মাথায় রেখে আমরাও সব সময় কাজ করতে পারি না। আবার একই ক্লাসে বিভিন্ন স্তর বিবেচনা করেও আমরা দেখি না। তাছাড়া ক্লাসে যেটুকু সময় থাকে তাতে সঠিকভাবে শিখনফল অর্জন করাতে পারিনা। তাছাড়া বিরতিহীন ক্লাস শিক্ষকদের ক্লান্ত করে দেয়।
উপর্যুক্ত বিষয়গুলো বিবেচনা করে যদি শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করে বিদ্যালয় পর্যায়ে বাস্তবায়ন করা যায় তাহলে আমরা শিক্ষার গুণগত মানকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব এই আশাবাদ ব্যক্ত করেই শেষ করলাম।
[লেখক : প্রধান শিক্ষক, উজানীগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, সুনামগঞ্জ।]