সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএসএম কিবরিয়া হত্যা মামলায় কারাবন্দী থাকা সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী (সাময়িক বরখাস্ত) ও হবিগঞ্জ পৌর মেয়র (বরখাস্ত) জি.কে গউছকে এক যুগ আগে দিরাইয়ে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের জনসভায় বোমা হামলায় আসামি করা হচ্ছে। সিসিক মেয়র আরিফুল হককে ওই মামলায় জড়ানো ‘ষড়যন্ত্র মূলক’ দাবি করে বিক্ষোভ করেছে আরিফ মুক্তি সংগ্রাম পরিষদ।
দিরাইয়ে জনসভায় বোমা হামলা মামলায় বিএনপি এই দুই নেতাকে অভিযুক্ত করার জন্যে তাদের গ্রেপ্তারে আদালতে আর্জি জানিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) হবিগঞ্জ জোনের সহকারী পুলিশ সুপার বসু দত্ত চাকমা। আদালত ২৮ জুলাই এ ব্যাপারে শুনানি দিন করেছেন।
সূত্রমতে, ২০০৪ সালের ২১ জুন দুপুরে আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের নির্বাচনী এলাকা দিরাই উপজেলা সদরের জগন্নাথ জিউর মন্দিরের কাছে জনসভা মঞ্চের পাশে গ্রেনেড বিস্ফোরিত হয়। ১২ বছর পর এই হামলায় আরিফ-গউছকে গ্রেপ্তার দেখাতে সুনামগঞ্জের আদালতে আবেদন জানিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, কারাবন্দী আরিফ-গউছকে অভিযুক্ত করে তাদের গ্রেপ্তার দেখাতে ২০ জুলাই আবেদন করেন মামলার তদন্ত সিআইডির এএসপি বসু দত্ত চাকমা। এ আবেদনর শুনানির জন্য আদালত ২৮ জুলাই তারিখ নির্ধারণ করেছেন।
আদালতে করা আবেদনে বসু দত্ত চাকমা উল্লেখ করেন, ‘প্রাথমিকভাবে সাক্ষ্য প্রমাণে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের জনসভায় গ্রেনেড হামলার ঘটনায় আরিফুল হক চৌধুরী ও জিকে গউছের স¤পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে।’
উল্লেখ্য, সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের জনসভামঞ্চের পাশে গ্রেনেড হামলায় ঘটনাস্থলে ওয়াহিদ মিয়া নামে এক যুবলীগ কর্মী নিহত ও ২৯ জন আহত হন। হামলার সময় সুরঞ্জিত সেন অল্পের জন্য রক্ষা পান। এ ঘটনায় ওইসময় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে দিরাই থানায় মামলা করেন এসআই হেলাল উদ্দিন।
২০০৬ সালের ৪ সেপ্টেম্বর হরকাতুল জিহাদের সিলেট অঞ্চলের সংগঠক শরিফ শাহেদুল আলম ওরফে বিপুল ও হাফেজ সৈয়দ নাঈম ওরফে আরিফ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হলে তাদের স্বীকারোক্তি থেকে গ্রেনেড হামলার বিষয়টি প্রকাশ পায়। পরে সিআইডি মামলার অধিকতর তদন্ত করে ২০০৮ সালের ১৪ ডিসেম্বর আদালতে চার্জশিট দাখিল করে।
সিআইডি পুলিশের ইন্সপেক্টর শফিকুর রহমানের দাখিল করা চার্জশিটে হরকাতুল জিহাদের শীর্ষস্থানীয় জঙ্গি মুফতি হান্নান, তার ভাই মহিবুল্লাহ ওরফে অভি, মইনুদ্দিন ওরফে আবু জান্দাল, দেলোয়ার হোসেন ওরফে রিপন, নাজিউর রহমান ওরফে নাজু, শরীফ সাহেদুল আলম বিপুল ও হাফিজ সৈয়দ নাঈম আহমদ আরিফকে অভিযুক্ত করা হয়।
ঘটনাটি চাঞ্চল্যকর হওয়ায় মামলাটি সিলেট বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়।
২০১০ সালের ৩০ জুন সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মাহবুব উল ইসলামের আদালতে মামলার চার্জ গঠন করা হয়।
পরবর্তীকালে তদন্তে কিছু বিষয় অ¯পষ্ট থাকায় এবং আসামিদের দেয়া জবানবন্দির সাথে তদন্ত প্রতিবেদনের অসামঞ্জস্য থাকায় রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১০ সালের ১২ অক্টোবর সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মাহবুব উল ইসলাম অধিকতর তদন্তের জন্য নথিপত্র পুনরায় সুনামগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
প্রসঙ্গত, ২০০৫ সালে হবিগঞ্জে কিবরিয়ার জনসভায় হামলার ১১ বছর পর এই মামলায় ২০১৪ চার্জশিটে আরিফুল হক চৌধুরীর নাম আসে। বিষয়টি আলোচনায় আসার পর এক ধরনের আত্মগোপনে চলে যান আরিফ। কিছুদিন এভাবে থাকার পর ওই বছরের ডিসেম্বরে হবিগঞ্জের আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চান। আদালত তা নামঞ্জুর করে তাঁকে জেল হাজতে পাঠিয়ে দেন।
এরপর ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে মেয়র পদ থেকে ‘সাময়িকভাবে’ তাকে বরখাস্ত করা হয়। একই সময়ে বরখাস্ত করা হয় জিকে গউছকেও।
২০১৫ সালের পৌর নির্বাচনে গউছ কারাগার থেকে প্রার্থী হয়ে বিজয়ী হন।পরে নতুন করে শপথও নেন। কিন্তু তাকে নতুন দায়িত্বে ফিরতে না দিয়ে আবার বরখাস্ত করা হয়।