সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
সোমবার দুপুরে জঙ্গি সন্দেহে আটক হওয়া শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আব্দুল আজিজ আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সমন্বয়ক ছিলেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। ২০১৫ সালের প্রায় পুরো বছর ক্যা¤পাসেও অনুপস্থিত ছিলেন তিনি।
জানা যায়, শাবির ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল এন্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং (আইপিই) বিভাগের চতুর্থ বর্ষ দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী আজিজের নিষিদ্ধ ঘোষিত উগ্র ধর্মীয় সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সাথে জড়িত থাকার সুনির্দিষ্ট তথ্য পেয়ে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের বিশেষ দল সিলেটে এসে তাকে আটক করে ঢাকায় নিয়ে যায়।
এ ব্যাপারে ডিএমপি উপকমিশনার মাসুদুর রহমান বলেন, “আব্দুল আজিজ আনসারুল্লাহ বাংলা টিম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সমন্বয়কের কাজ করতেন বলে আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে।”
মঙ্গলবার শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, আজিজ গত বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুপস্থিত ছিলেন। তবে ওই সময়টায় তিনি কি নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন তা কেউ জানেন না। আইপিই বিভাগের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মোকাদ্দেস বলেন, আজিজ ২০১০-১১ সেশনের ছাত্র। ২০১৫ সালে সে দুটি সেমিস্টার ড্রপ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুপস্থিত ছিল। ওই সময় তাঁর অবস্থান স¤পর্কে আমরা জ্ঞাত নই। ২০১৬ তে এসে সে আবার নিয়মিয় হয় বলে জানান তিনি। আজিজ পড়াশোনায় খুবই ভালো ছিল, বলেন অধ্যাপক মোকাদ্দেস।
আজিজের গ্রামের বাড়ি সিলেটের কো¤পানিগঞ্জ উপজেলায়। ৫ ভাইবোনের মধ্যে আজিজ সবার ছোট। আজিজ সিলেট নগরীর একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাশ করার পর সিলেট ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হন। ক্যাডেট কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করার পর শাবিতে আইপিই বিভাগে সুযোগ পান তিনি। আজিজ নিয়মিত নামাজ পড়তেন এবং তাবলীগ জামায়াতের সাথেও স¤পৃক্ত ছিলেন বলেও জানা যায়।
আজিজের বড় ভাই আব্দুল কাদির বলেন, আমার ভাই নিরীহ, কোন অন্যায়ের সাথে সে যুক্ত হতে পারে না।
আব্দুল কাদির বলেন, আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো নয়। এই সেদিনও পরীক্ষার ফি যোগাড় করতে না পেরে আমার ভাই আমাকে ফোনে জানিয়েছিল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুপস্থিতির কারণ বিষয়ে তিনি বলেন, অর্থনৈতিক কারণেই সে দুই সেমিস্টার ক্যা¤পাসে যায়নি, তবে সিলেটেই ছিল।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আব্দুল আজিজের নামে একটি ফেসবুক একাউন্ট পাওয়া গেছে। ওই একাউন্ট থেকে বিভিন্ন সময়ে জিহাদী পোস্ট করা হত বলে দেখা যায় তবে ওই আইডিতে আজিজের নিজের কোন ছবি পাওয়া যায়নি।
২০১৫ সালের ১৪ মে আজিজের নামে শেয়ার করা এক পোস্টে দেখা যায় – “আল্লাহকে গালমন্দকারীর শাস্তি হিসেবে হত্যা করা হবে এমনকি তওবা করলেও কাউকে ছাড় দেয়া হবে না, গালমন্দকারীর শাস্তি মৃত্যুদন্ড।” এমন বেশ কিছু লেখা রয়েছে সেখানে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিষয়ক পরিচালক প্রফেসর ড. রাশেদ তালুকদার মুঠোফোনে জানান, “সোমবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যা¤পাসের ক্যাফেটেরিয়ার সামনে থেকে সাদা পোশাকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সন্দেহভাজন হিসাবে তাকে আটক করে নিয়ে যায়। এসময় উপস্থিত থাকা জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কেন তাকে আটক করা হচ্ছে তা পরে জানানো হবে বলে নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীকে কেন ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তা জানার অধিকার আছে কর্তৃপক্ষের। তবে, স্থানীয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে থাকা কিছুটা আস্থা পেয়েছি এবং তিনি পোশাকধারী ছিলেন। বাকি ৪/৫ জনের আভিযানিক দলের সবাই ছিলেন সাদা পোশাকের।”
পরে জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আক্তার হোসেন বলেন , “তাকে আটক করেছে বিশেষ ইউনিট”।