1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
শুক্রবার, ০৯ জুন ২০২৩, ০৭:৩৬ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

মানবতাবিরোধী অপরাধে ৩ জনের ফাঁসি, ৫ জনের আমৃত্যু কারাদন্ড

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১৯ জুলাই, ২০১৬

সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামালপুরের ৮ জনের মধ্যে ৩ জনকে ফাঁসি ও ৫ জনকে আমৃত্যু কারাদন্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। মৃত্যুদন্ড প্রাপ্তরা হলেন-আশরাফ হোসেন, আবদুল মান্নান ও আবদুল বারী।
মামলার অপর পাঁচ আসামি অ্যাডভোকেট শামসুল হক, এস এম ইউসুফ আলী, অধ্যাপক শরীফ আহমেদ ওরফে শরীফ হোসেন, মো. হারুন ও মো. আবুল হাশেমকে আমৃত্যু কারাদন্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। এদের মধ্যে অ্যাডভোকেট শামসুল হক এবং এস এম ইউসুফ আলী আটক রয়েছেন। বাকিরা পলাতক।
সোমবার বিচারপতি মো. আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাদের বিরুদ্ধে এ রায় ঘোষণা করেন। সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে এ ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম ২৮৯ পৃষ্ঠার রায় পড়া শুরু করেন। পরে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হক আসামীদের দ- ঘোষণা করেন। এ সময় মামলার আসামি অ্যাডভোকেট শামসুল হক এবং এস এম ইউসুফ আলী ট্রাইব্যুনালে হাজির ছিলেন।
আসামিদের বিরুদ্ধে আনা ৫টি অভিযোগের মধ্যে ১ ও ৫ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। ২ নম্বর অভিযোগে আশরাফ হোসেন, আবদুল মান্নান ও আবদুল বারীকে মৃত্যুদন্ড এবং শরীফ হোসেন ও আবুল হাশেমকে আমৃত্যু কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে।
৩ নম্বর অভিযোগে শরীফ হোসেন, মো. আশরাফ হোসেন, মো. আব্দুল মান্নান, মো. আব্দুল বারী, মো. আবুল হাশেম, শামসুল হক, এস এম ইউসুফ আলীকে আমৃত্যু কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। আর ৪ নম্বর অভিযোগে শরীফ হোসেন, মো. আশরাফ হোসেন, মো. আব্দুল মান্নান ও মো. আব্দুল বারীকে আমৃত্যু কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে।
রায়ের পর প্রতিক্রিয়ায় প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ বলেন, ‘আসামিদের বিরুদ্ধে ৫টি অভিযোগ আনা হয়েছিল। কিন্তু দুটি অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। দীর্ঘদিন পর বিচার হচ্ছে তাই সাক্ষ্য প্রমাণ সংগ্রহ করা কষ্টকর ছিল। তারপরও তিনজন আসামির মৃত্যুদন্ড ও ৫ জন আসামিকে আমৃত্যু কারাদন্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। আমরা এই রায়ে সন্তুষ্ট।’
পলাতকদের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ট্রাইব্যুনাল বলেছেন পলাতকরা এক মাসের মধ্যে আত্মসমর্পন করলে আপিল করতে পারবেন। এছাড়া পলাতকদের ইন্টারপুলের মাধ্যমে গ্রেফতারে ব্যবস্থা নিতে পুলিশ মহাপরিদর্শকের প্রতি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
অপরদিকে আটক থাকা দুই আসামি অ্যাডভোকেট শামসুল হক ও এস এম ইউসুফ আলীর আইনজীবী গাজী এম এইচ তামিম আপিল করবেন বলে জানিয়েছেন। রায়ের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার দু’জন মক্কেলকে ট্রাইব্যুনাল একটি করে অভিযোগে আমৃত্যু কারাদন্ড দিয়েছেন। আমরা রায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তবে এই রায়ের বিরুদ্ধে আমরা সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল করব। আশা করছি আপিল বিভাগ তাদের খালাস দেবেন।’
২০১৫ সালের ২৪ মার্চ রাজধানীর ধানমন্ডিতে তদন্ত সংস্থার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ৮ রাজাকারের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এতে তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী ৫ ধরনের অভিযোগ আনা হয়। একই বছর ২৯ এপ্রিল আসামিদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। ২২ জুলাই পলাতক জামালপুরের ৬ রাজাকারকে হাজির হতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছিলেন ট্রাইব্যুনাল। চলতি বছর ১৯ জুন উভয়পক্ষের শুনানি শেষে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষামাণ রাখা হয়। ১৭ জুলাই রোববার রায়ের জন্য গতকাল সোমবার সময় নির্ধারণ করেন ট্রাইব্যুনাল। সেই অনুযায়ী আজ এই রায় প্রদান করা হয়।
পাঁচ অভিযোগ :
প্রথম অভিযোগ : মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতে ইসলামীর নেতা ও শান্তি কমিটির সদস্য শামসুল হক, এস এম ইউসুফ আলী ও তাদের সহযোগীরা তৎকালীন জামালপুর মহকুমায় সাধারণ মানুষকে অপহরণ, নির্যাতন, হত্যা ও অগ্নিসংযোগের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ কর্মকান্ড ঘটায়। একাত্তরের ২২ এপ্রিল থেকে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত জামালপুরে স্বাধীনতাকামী এক হাজার লোককে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
দ্বিতীয় অভিযোগ : আসামি আশরাফ হোসেন, শরীফ আহমেদ, আব্দুল মান্নান, মো. হারুন ও আব্দুল বারী ১৯৭১ সালের ৭ জুলাই থেকে ১৪ জুলাই এবং ২২ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত জামালপুরের সরিষাবাড়ী থানার মইষ ভাদুরিয়া ও ধূপদহ গ্রামের শহীদ আব্দুল হামিদ মোক্তারের বাড়ি, মো. সাইদুর রহমান ভূঁইয়ার বাড়ি, আমির আলী খানের বাড়ি, পিটিআই হোস্টেলের টর্চার ক্যা¤প ও জামালপুর শ্মশানঘাটে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে।
এ ঘটনায় শরীফ হোসেন, মো. আশরাফ হোসেন, মো. আব্দুল মান্নান, মো. আব্দুল বারী ও হারুনের বিরুদ্ধে অপহরণ, নির্যাতন, হত্যা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ আনা হয়েছে।
তৃতীয় অভিযোগ : ১৯৭১ সালের ১০ জুলাই রাত ৩টার দিকে আসামি শরীফ আহমেদ, আশরাফ হোসেন, আব্দুল মান্নান, আব্দুল বারী, আবুল হাশেম, শামসুল হক, ইউসুফ আলী ও আল-বদর বাহিনীর সদস্য ও শান্তি কমিটির সদস্যরা জামালপুরের সিঅ্যান্ডবি রোডের (পুরাতন) দয়াময়ী লেনের মল্লিক ভিলা থেকে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠন শহীদ নুরুল আমীনকে অপহরণ করে। তারপর ওইদিন সকাল ১০টায় তার মরদেহ ব্রহ্মপুত্র নদের চ্যাপতলা ঘাটে ভেসে ওঠে।
এ ঘটনায় শরীফ হোসেন, মো. আশরাফ হোসেন, মো. আব্দুল মান্নান, মো. আব্দুল বারী, মো. আবুল হাশেম, শামসুল হক, এস এম ইউসুফ আলীর বিরুদ্ধে অপহরণ ও হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।
চতুর্থ অভিযোগ : তৎকালীন জামালপুর মহকুমার ছাত্র সংঘের সভাপতি আশরাফ হোসেনের নেতৃত্বে বদর বাহিনী গঠিত হয়। আশরাফ হোসেন জামালপুরের আশেক মাহমুদ ডিগ্রি কলেজকে ‘টর্চার সেল’ হিসেবে ব্যবহার করেন। একাত্তরের ২২ এপ্রিল থেকে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আসামিরা সেখানে অনেককে আটকে রেখে নির্যাতন ও হত্যা করেছে।
এ ঘটনায় শরীফ হোসেন, মো. আশরাফ হোসেন, মো. আব্দুল মান্নান ও মো. আব্দুল বারীর বিরুদ্ধে আটকে রেখে নির্যাতন ও হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।
পঞ্চম অভিযোগ : ১৯৭১ সালের ২২ এপ্রিল থেকে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আসামি শরীফ আহমেদ, আশরাফ হোসেন, আব্দুল মান্নান, আব্দুল বারী, আবুল হাশেম, শামসুল হক ও ইউসুফ আলী এবং স্থানীয় আল বদর বাহিনীর সদস্য ও পাক সেনারা জামালপুরের পিটিআই হোস্টেলকে নির্যাতন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করত। সেখানে হাজারখানেক নিরস্ত্র মানুষকে আটকে রেখে নির্যাতন করা হতো এবং রাতে তাদের ব্রহ্মপত্র নদের তীরে শ্মশান ঘাটে নিয়ে হত্যা করে নদীতে ফেলে দেওয়া হতো।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com