সাইফ উল্লাহ ::
দেশের বৃহত্তম কয়লা আমদানির শুল্কস্টেশন তাহিরপুর উপজেলার বড়ছড়া, চারাগাঁও ও বাগলি শুল্কস্টেশন দিয়ে আগামী ১ অক্টোবর থেকে আবারও কয়লা আমদানির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ভারতের মেঘালয় মাইন ওনার্স এক্সপোর্টার এসোসিয়েশনের দায়িত্বশীলরা গত বুধবার তাহিরপুর কয়লা আমদানিকারক গ্রুপের দায়িত্বশীলদের এই তথ্য জানিয়েছেন। সুনামগঞ্জের এই তিন শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফের কয়লা আমদানির খবরে কয়লা আমদানিকারকসহ এর সাথে জড়িত পরিবহন শ্রমিকদের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরে এসেছে। উল্লেখ্য প্রায় দুই বছর ধরে কয়লা আমদানি বন্ধ থাকায় সরকার মোটা অংকের রাজস্ব বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি শ্রমিকরা বেকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
জানা গেছে, ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পরিবেশ আদালতের এক আদেশে গত ২ বছর ধরে এসব শুল্কস্টেশন দিয়ে কয়েকদফা কয়লা আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। মাঝে-মধ্যে স্বল্প সময়ের জন্য খুললেও এতে লাভ হচ্ছে না। শুল্কস্টেশন বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পড়েছেন বাংলাদেশের প্রায় চার শতাধিক কয়লা আমদানিকারক। অপেক্ষাকৃত ভালমানের ভারতের মেঘালয়ের কয়লা আমদানি বন্ধ থাকায় দেশের কয়লার বাজার দখল করে নিয়েছে কম দামের কয়লা। এ তথ্য জানিয়েছেন একাধিক কয়লা ব্যবসায়ী।
ভারতের মেঘালয়ের পরিবেশবাদী সংগঠন ডিমাহাসাও একটি বাম ছাত্র আন্দোলনের আবেদনের প্রেক্ষিতে মেঘালয় রাজ্য আদালত ২০১৪ সালের ১৭ এপ্রিল ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল (এনজিটি) মেঘালয় সরকারকে কয়লা খনন ও পরিবহন বন্ধের নির্দেশ দেন। একই বছরের ৬ মে সংশ্লিষ্ট বিভাগের বিভাগীয় মুখ্যসচিব এ ব্যাপারে প্রতিটি জেলায় নির্দেশ জারি করেন। এই নির্দেশে গ্রিন ট্রাইব্যুনালের নির্দেশ কার্যকর করতে বলা হয় মেঘালয়ের জেলা প্রশাসকদের। এ কারণে ২০১৪ সালের ১৩ মে থেকে মেঘালয়ের সীমান্ত জেলাগুলোয় ১৪৪ ধারা জারি করে কয়লা পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
এরপর থেকে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সবচেয়ে বড় শুল্ক স্টেশন তাহিরপুরের বড়ছড়া, চারাগাঁও ও বাগলি দিয়ে কয়লা আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। ঝিমিয়ে পড়ে কোলাহলমুখর এই তিন স্টেশন। পরে রপ্তানিকারকরা আইনি লড়াই করে প্রথমে উত্তোলিত কয়লা রাজস্ব জমা দিয়ে ২ মাস রপ্তানীর সুযোগ পান। পরে এই সময় ৪ দফায় বাড়িয়ে আরো প্রায় ৭ মাস সময় বাড়িয়ে রপ্তানী কার্যক্রম চালু রাখেন। এই সময়ের মধ্যে কেবল উত্তোলিত কয়লা রপ্তানি করেছেন মেঘালয়ের রপ্তানিকারকরা। কিন্তু নতুন করে কয়লা মাইনিং করতে পারেননি। ফের চলতি বছরের ১৬ মে কয়লা রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়। এপারের তিন শুল্ক স্টেশনের ৪০০ আমদানিকারক বেকায়দায় পড়েন। বেকার হয়ে পড়েন কমপক্ষে ৩০ হাজার শ্রমিক।
তাহিরপুর কয়লা আমদানিকারক গ্রুপের দায়িত্বশীলরা জানান, মেঘালয় মাইন ওনার্স এক্সপোর্টার এসোসিয়েশনের দায়িত্বশীলরা বুধবার তাহিরপুর কয়লা আমদানিকারক গ্রুপের সভাপতিকে মৌখিকভাবে জানিয়েছেন উত্তোলিত কয়লার রয়েলিটি জমা দিয়ে আরো ৩ মাস রপ্তানি করার সুযোগ দিয়েছেন ভারতের ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল। এর ফলে পয়লা অক্টোবর থেকে এই আদেশ কার্যকর হবে।
তাহিরপুর কয়লা আমদানিকারক গ্রুপের সভাপতি আলকাছ উদ্দিন খন্দকার বলেন, ‘পহেলা অক্টোবর রপ্তানীকারকরা রয়েলিটি জমা দিতে পারলে, পরদিন এলসি করে আমদানিকারকরা ফের কয়লা আমদানি শুরু করতে পারবেন। অক্টোবরের শুরুতে স্টেশন চালুর সম্ভাবনা রয়েছে।