1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৯:২৭ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

১৭ বছরে ভিন্নমাত্রায় বাংলাদেশের জঙ্গি তৎপরতা

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১৫ জুলাই, ২০১৬

সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
রাজধানীর গুলশান ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের পাশে সন্ত্রাসী হামলার পর থেকেই বাংলাদেশে গ্রাম অঞ্চলের চায়ের দোকান থেকে রাষ্ট্রের শীর্ষ পর্যায়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে জঙ্গিবাদ। এর আগে বাংলাদেশে একাধিকবার বড় সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটলেও তা মানুষের মধ্যে এতোটা আতঙ্ক ছড়াতে পারেনি। অতীতের সব সন্ত্রাসী হামলায় যেন হার মানিয়েছে সম্প্রতি জঙ্গিদের ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা।
কথিত ইসলামিক স্টেটের (আইএস) নামে চালানো এ বড় ধরনের হামলা দেশব্যাপী এক ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। সন্ত্রাসীদের চালানো এ পৈশাচিক হত্যাকান্ড আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছে সর্বত্র।
বাংলাদেশে প্রথম জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে ১৯৯৯ সালে। এরপর ২০০৫ সাল পর্যন্ত দেশে ঘটতে থাকে একের পর এক এ ধরনের হামলা। দেশব্যাপী ৬৩ জেলায় একযোগে বোমা হামলার ঘটনায় বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ আলোচনায় চলে আসে। দেশে ব্যাপকভাবে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে জঙ্গিবাদ। উত্থান ঘটে কুখ্যাত বাংলা ভাই ও আবদুর রহমানের। এ সময় জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশ (জেএমজেবি), জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি), হরকাতুল জিহাদুল ইসলামী ও হিজবুত তওহিদ এ চারটি জঙ্গি সংগঠন নানাভাবে তৎপর ছিল।
২০০৬ সালে বাংলা ভাইসহ কয়েকজন জঙ্গি নেতা গ্রেফতার ও পরবর্তীতে তাদের ফাঁসি কার্যকর করার পর বড় ধরনের জঙ্গি হামলাও আড়ালে চলে যায়।
এরপর প্রায় ৭ বছর দেশে জঙ্গি হামলার তেমন কোন ঘটনা ঘটেনি। তবে ২০১৩ সালে হঠাৎ করেই আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠে জঙ্গিবাদ। সাধারণ মানুষের ওপর চালানো হয় একের পর এক নৃশংস হামলা। এসব হামলা অতীতের হামলাগুলোর থেকে স¤পূর্ণ ভিন্ন ধরনের।
২০০১ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত দেশে জঙ্গি হামলাগুলো চালানো হয় রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ ও রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্য করে। ওইসব হামলায় ব্যবহার করা হয় বোমা। আর সাম্প্রতিক সময়ের হামলাগুলোর শিকার হয়েছে সাধারণ নিরীহ মানুষ। হামলায় নিরীহ মানুষগুলোকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
দীর্ঘ বিরতির পর দেশে আবার জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার পিছনে বিশ্ব গণমাধ্যমে বাংলাদেশের দুই প্রধান দলকে সরাসরি দায়ী করা হয়েছে। দোষারোপের রাজনীতিই গুলশানের হামলার রাস্তা তৈরি করে দিয়েছে বলেও দাবি করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকেও সাম্প্রতিক সময়ের জঙ্গি হামলার জন্য জাতীয় ঐক্যের অভাবকে কারণ হিসেবে দাঁড় করানো হয়েছে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা প্রথম থেকেই সরকারকে বলে আসছি গণতান্ত্রিক পরিবেশ, মানবিধিকার ও ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনতে। যখন একটি দেশে অস্থিরতা, হতাশা, গণতন্ত্র থাকে না, তখন এ ধরণের জঙ্গিরা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। আমরা সরকারকে বলেছি, কিন্তু সরকার শুনেনি। এখন আমরা তারই ফল দেখছি।’
তিনি বলেন, ‘উগ্রবাদিরা দেখছে বাংলাদেশ এখন ভঙ্গুরতার মধ্যে, হতাশার মধ্যে রয়েছে। এ পরিস্থিতেকেই তার হামলার জন্য বেছে নিয়েছে। গুলশানে যেভাবে বিদেশিদের হত্যা করা হয়েছে, তাতে প্রকাশ পেয়েছে দেশের বিরুদ্ধে সড়যন্ত্র করা হচ্ছে। এ ধরনের পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য জাতীয় ঐক্যের দরকার। আমাদের চেয়ারপারসন জাতীয় ঐক্যের আহ্বান করেছেন, কিন্তু আওয়ামী লীগ তাতে সাড়া দেয়নি।
দেশে ১৯৯৯ সালে প্রথম জঙ্গি হামলা হলেও, জঙ্গি সংগঠনের কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৮০ সালের দিকে। এ বিষয়ে সুইডেনের প্রখ্যাত সাংবাদিক ও লেখক বারটিন লিন্টনার ১৯৯১ সালে একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, ১৯৭৯ সাল থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত চলতে থাকা যুদ্ধে অংশ নিতে দেশ থেকে অনেক বাংলাদেশি মুজাহিদিন আফগানিস্তানে গিয়েছিল। সোভিয়েত সৈন্যদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নিয়ে এরা সশস্ত্র প্রশিক্ষণে পারদর্শী হয়ে ওঠে। আফগানিস্তানে যুদ্ধ শেষ হলে এসব মুজাহিদিন দেশে ফিরে আসে এবং বাংলাদেশে একটি শরিয়াভিত্তিক ইসলামিক রাষ্ট্র রাখতে তৎপর হয়ে ওঠে।
রোহিঙ্গাদের ওপরের ওই প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, ১৯৮০ সালের প্রথম দিকে কক্সবাজারের রোহিঙ্গারা তাদের একমাত্র রাজনৈতিক সংগঠন রোহিঙ্গা প্যাট্রয়োকি ফ্রন্ট ভেঙ্গে মোহাম্মদ ইউসুফের (আরকান) নেতৃত্বে রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন নামে একটি জঙ্গি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। এই সংগঠনটি বহু জঙ্গি সংগঠন থেকে অর্থনৈতিক ও সামরিক সহযোগিতা পেয়ে আসছে।
স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম বড় ধরনের জঙ্গি সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে যশোর টাউন হল ময়দানে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর সম্মেলনে। ১৯৯৯ সালের ৬ মার্চ রাতের ওই ভয়াবহ বোমা হামলায় প্রাণ যায় ১০ জনের এবং আহত হয় প্রায় দু’শ নারী-পুরুষ। এ হামলার পর দেশে আলোচনায় উঠে আসে জঙ্গিবাদের বিষয়টি।
যশোর টাউন হলের ওই ঘটনার ৭ মাস পর ৮ অক্টোবর খুলনার আহমদিয়া মসজিদে চালানো হয় বোমা হামলা। এ হামলায় প্রাণ যায় ৮ জনের। আর আহত হন আরও ৫০ জন। এর আগে ৩০ আগস্ট ইস্কাটনে জনকণ্ঠ ভবনে ব্রিফকেস বোমা পেতে রাখা হয়। পরের বছর ২০০০ সালের ২০ জুলাই গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় শেখ হাসিনার জনসভায় বোমা পেতে রাখা হয়।
এরপরের ৫টি বছর দেশে সন্ত্রাসী ও বোমা হামলা যেন এক প্রকার নিয়মেই পরিণত হয়েছিল। ২০০১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০০৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে দেশে প্রায় ৩০টির মতো বড় সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে।
২০০১ সালের ২০ জানুয়ারি ঢাকার পল্টন ময়দানে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সমাবেশে বোমা বিস্ফোরণে নিহত হয় ৭ জন এবং আহত শতাধিক। সে বছরের ১৪ এপ্রিল রমনা বটমূলে ছায়ানটের বাংলা নববর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা বিস্ফোরণে নিহত হয় ১০ জন। আর আহত হয় আরও শতাধিক।
বছরটিতে আরও ৩টি বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। এরমধ্যে ৩ জুন গোপালগঞ্জের বানিয়ারচরের গির্জায় বোমা বিস্ফোরণে ১০ জন নিহত ও ৩০ জন আহত হন। এ ঘটনার ১৩ দিন পর ১৬ জুন নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগ অফিসে বোমা বিস্ফোরণে প্রাণ যায় ২০ জনের এবং আহত হয় শতাধিক।
দু’মাস না যেতেই সেপ্টেম্বরে আবারও বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। ২৩ সেপ্টেম্বর বাগেরহাট জেলার মোল্লারহাট উপজেলার কে.আর কলেজ মাঠে বাগেরহাট-১ আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী শেখ হেলাল উদ্দিনের নির্বাচনী জনসভায় চালানো ওই ভয়াবহ বোমা হামলায় মারা যান ৯ জন এবং আহত হয় শতাধিক।
পরের বছর ২০০২ সারের ২৬ সেপ্টেম্বর সিরাজগঞ্জে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী আলোচনা সভায় বোমা বিস্ফোরণে ৪ জন নিহত ও আহত ১৫ হয়। দু’দিন পর ২৮ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরা শহরের একটি সিনেমা হলে এবং সাতক্ষীরা স্টেডিয়ামে লায়ন্স সার্কাস প্যানেলে শক্তিশালী বোমা হামলা চালায় জঙ্গিরা। এ ঘটনায় স্কুলছাত্র কাজী মোতাদুল আলম মুক্ত (১৫), হাফিজুর রহমান (২৫) ও ডা. সেলিনা পারভীন (৩৫) নিহত হন। আহত হন দেড় শতাধিক নারী-পুরুষ ও শিশু।
এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ওই বছরের ৭ নভেম্বর সন্ধ্যায় ময়মনসিংহ শহরের চারটি সিনেমা হলে দেড় ঘণ্টার ব্যবধানে পরপর কয়েকটি শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এতে ঘটনাস্থলেই ১১ জন ও ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর আরও আটজন মারা যায়। আহত হয় আরও দুই শতাধিক।
একের পর এক বোমা হামলা অব্যহত থাকে পরের বছরেও। ২০০৩ সালের ১৮ জানুয়ারি টাঙ্গাইলের সখীপুরে বোমা বিস্ফোরণে ৮ জন নিহত ও ৫০ জন আহত হন। ওই বছরের ১ মার্চ খুলনায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় কর্তব্যরত পুলিশের ওপর বোমা হামলা চালানো হয়। এতে একজন নিহত হন। এরপর ২৮ জুন শেরপুরে বোমা তৈরির সময় বিস্ফোরণ এবং ১৫ আগস্ট রাতে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কর্যালয়ের পাশে বোমার বিস্ফোরণে একজন নিহত হন। বছরের শেষ দিকে খুলনা বাস টার্মিনালে হানিফ পরিবহনে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
পরের বছর ২০০৪ সালে ৯টি বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে বছরের শুরুতে ১২ জানুয়ারি সিলেটে হযরত শাহজালালের (র) মাজারে আর্জেস গ্রেনেড বিস্ফোরণে ৭ জন নিহত ও ৭০ জন আহত হয়। এর তিনদিন পরেই ১৫ জানুয়ারি খুলনায় সাংবাদিক মানিক সাহাকে বোমা মেরে হত্যা করা হয়। গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মহিমাগঞ্জ ব্র্যাক অফিসে চালানো হয় বোমা হামলা।
ওই বছরের ৪ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) তালুকদার আবদুল খালেকের মাইক্রোবাস (ঢাকা-মেট্রো-চ-১৪-০৬৩০) লক্ষ্য করে সন্ত্রাসীরা একটি শক্তিশালী বোমা নিক্ষেপ করে। মাস না ঘুরতেই ২১ মে ওলিকুল শিরোমণি হযরত শাহজালালের (র) মাজার প্রাঙ্গণে আবারও শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত আনোয়ার চৌধুরী ও সিলেটের জেলা প্রশাসক আবুল হোসেনসহ শতাধিক আহত হন।
এক মাস পর ২১ জুন সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলা সদরের দিরাই বাজারে ফাইভ স্টার হোটেলের সামনে বিকালে আওয়ামী লীগের জনসভায় বোমা হামলা এবং খুলনায় দৈনিক জন্মভূমি পত্রিকা ভবনের সামনে বোমা মেরে সাংবাদিক ও স¤পাদক হুমায়ূন কবীর বালুকে হত্যা করা হয়। ৭ আগস্ট সিলেটে গুলশান হোটেলে সিলেটে মহানগর আওয়ামী লীগের কর্মীসভায় আর্জেস গ্রেনেড বিস্ফোরণে ১ জন নিহত ও ৪০ জন আহত হয়।
এরপর ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের জনসভায় চালানো হয় ভয়াবহ গ্রেনেড ও বোমা হামলা। এ হামলায় সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ আওয়ামী লীগ এবং তার অঙ্গ সংগঠনের ২৪ জন নিহত হয়। এরপর মৌলভীবাজারে যাত্রা প্রদর্শনীতে বোমা বিস্ফোরণে আহত হয় ১০ জন। বোমা হামলা চালানো হয় সিলেটের সাবেক সংসদ সদস্য জেবুননেসা হকের বাসভবনে। এতে আহত হয় ৭ জন।
পরের বছর ২০০৫ সালের শুরুতেই ঘটতে থাকে একের পর এক সন্ত্রাসী হামলা। বছরের প্রথম হামলাটি চালানো হয় বগুড়ার নাট্যনুষ্ঠানে। শাজাহানপুর উপজেলার লক্ষ্মীখোলা গ্রামে নাট্যানুষ্ঠানে ১৪ জানুয়ারি রাতে চালানো ওই বোমা হামলায় প্রাণ যায় একজনের। এতে আহত হয় আরও ৪০ জন।
দু’দিন পর ১৬ জানুয়ারি নাটোরে যাত্রা মঞ্চের ওপর চালানো হামলায় ৩৫ জন আহত হয়। ২২ জানুয়ারি শ্রীপুরের খয়রায় বোমা হামলায় নিহত হন মাহবুব আলী দেওয়ান। পাঁচদিন পর ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জে এক জনসভায় ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা, সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া নিহত হন। এ হামলায় কিবরিয়ার আপন ভাইয়ের ছেলেসহ আরও ৪ জনের প্রাণ যায়।
ওই বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালবাসা দিবসের অনুষ্ঠানে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এরপর ১৭ আগস্ট ৬৩টি জেলায় একসঙ্গে বোমা বিস্ফোরণে কেঁপে উঠে গোটা দেশ। লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর এবং চট্টগ্রামের কোর্টে বোমা বিস্ফোরণে নিহত হয় ৩ জন। লক্ষ্মীপুর কোর্টের ১ জন বিচারকসহ আহত হন ৩৮ জন।
এরপর ১৪ নভেম্বর ঝালকাঠিতে বিচারকদের বহনকারী গাড়িতে বোমা নিক্ষেপের ঘটনায় সিনিয়র সহকারী জজ সোহেল আহমেদ (৩৮) এবং বিচারক জগন্নাথ পাঁড়ে (৩৫) নিহত হন এবং তিনজন আহত হন। ২৯ নভেম্বর চট্টগ্রামে হামলায় ৩ জন নিহত ও ২০ জন আহত হন। একই দিন গাজীপুর সদরে জেলা আইনজীবী সমিতির হলরুমে বোমা বিস্ফোরণে ৭ জন নিহত ও অর্ধশতাধিক আহত হন। ৯ দিন পর ৮ ডিসেম্বর নেত্রকোনা জেলা শহরের উদীচী কার্যালয়ে আত্মঘাতি বোমা হামলায় ৮ জন নিহত এবং শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়।
একের পর এক জঙ্গি হামলার পর ২০০৫ সালের শেষের দিকে তৎপর হয়ে ওঠে প্রশাসন। ২০০৬ সালের ২ মার্চ সিলেট থেকে গ্রেফতার করা হয় জেএমবি নেতা শায়খ আবদুর রহমানকে। এর চারদিন পর ৬ মার্চ ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা থেকে জেএমবি নেতা বাংলা ভাইকে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) সদস্যরা গ্রেফতার করে। এরপর ২০০৭ সালের ২৯ মার্চ গভীর রাতে বহুল আলোচিত ছয় জঙ্গির ফাঁসি কার্যকর করা হয়।
এদের মধ্যে শায়খ আবদুর রহমানের ফাঁসি কার্যকর হয় কুমিল্লা কারাগারে। সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাই ও আবদুল আওয়ালকে ফাঁসি দেওয়া হয় ময়মনসিংহ কারাগারে। খালেদ সাইফুল্লাহকে ফাঁসি দেওয়া হয় পাবনা কারাগারে। কাশিমপুর কারাগারে ফাঁসি দেওয়া হয় আতাউর রহমান সানি ও ইফতেখার হাসান মামুনকে।
এরপর বেশ কয়েক বছর বাংলাদেশে তেমন জঙ্গি তৎপরতা দেখা যায়নি। তবে দীর্ঘ বিরতির পর ২০১৩ সালে আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠে সন্ত্রাসীরা। ব্লগ ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে লেখালেখির অভিযোগে ওই বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মিরপুরে কুপিয়ে হত্যা করা হয় ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দারকে। এরপর একে একে নৃশংসভাবে আরও ৯ জন ব্লগারকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
ব্লগার হত্যার পাশাপাশি ২০১৫ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীর গুলশানে ইতালির নাগরিক তাভেল্লা সিজার এবং ৩ অক্টোবর রংপুরে জাপানি নাগরিক হোশি কোনিওকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এরপর বিভিন্ন সময়ে হামলা চালা হয়েছে- লালনভক্ত, পীরভক্ত, সাংস্কৃতিককর্মী, খ্রিস্টান, হিন্দু, শিয়া আহমদিয়াসহ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর। ২০১৫ সাল থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ৫০টির মতো এ ধরনের জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেছে।
সাম্প্রতিক সময়ে ১ জুলাই গুলশানের একটি হোটেলে দেশি-বিদেশিদের জিম্মি করে ১৭ জন বিদেশিসহ ২০ জনকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করেছে জঙ্গিরা। এর আগে কখনো বাংলাদেশে এ ধরনের হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেনি। ওই নৃশংস হত্যাকান্ডের ৬ দিন পর কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের পাশে সন্ত্রাসী হামলায় প্রাণ যায় ৪ জনের।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com