বিশ্বসভ্যতার বিবর্তন ও উন্নয়নে যোগাযোগের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। বলা বাহুল্য, মানুষে মানুষে, দেশে দেশে যোগাযোগ সম্ভব না হলে পৃথিবীতে সভ্যতার বিকাশ অসম্ভব হয়ে উঠতো। যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা একটি সভ্যতাবিরোধী প্রবণতা। যে স্থান অন্যান্য স্থান থেকে যতটা বিচ্ছিন্ন থাকে সে স্থান সভ্যতার কিংবা উন্নয়নের নিরিখে ততোটা পশ্চাদপদ বিবেচিত হয়। ভারতের ব্রিটিশ শাসনামলে রেলপথ ও টেলিগ্রাফের বিস্তার ভারতের স্থবির সামন্তবাদী ব্যবস্থাকে দ্রুত ধ্বংস করে দিয়েছিলো। যোগাযোগ ব্যবস্থার যাদুস্পর্শে যে কোনও দেশ কিংবা দেশের বিশেষ এলাকা অতিদ্রুত অনুন্নয়নের অভিশাপ থেকে মুক্তিলাভ করতে পারে।
ব্রিটিশ আমল থেকে সুনামগঞ্জ একটি পশ্চাদপদ এলাকা। এর প্রধান কারণের একটি হলো এখানে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিশেষ করে সড়কের অপ্রতুলতা প্রকৃতিগতভাবে ছিল অবশ্যসম্ভাবী। অর্থাৎ জলভূমিয় এলাকা বলে এখানে স্বাভাবিকভাবেই সড়ক যোগাযোগ গড়ে ওঠেনি। এখানে মাটি বছরে ছয় মাসের অধিক সময় পর্যন্ত জলের নিচে ডুবে থাকে। কালক্রমে যোগাযোগ প্রযুক্তি আধুনিক ও নি¤œভূমিতে সড়ক অবকাঠামো গড়ে তোলার মতো রাষ্ট্রীয় সক্ষমতা তৈরি হলে বিগত শতকের শেষার্ধে সুনামগঞ্জের সড়ক তৈরির কার্যক্রম শুরু হয়। এই কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় শেষপর্যন্ত সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের যথাসম্ভব আধুনিকায়নসহ সুরমা নদীর উপর আব্দুজ জহুর সেতু তৈরি সম্ভব হয়ে ওঠে। যদিও এই উন্নয়ন দীর্ঘসূত্রতার কবলে পড়ে বিলম্বে সম্পন্ন হয়েছে বলে অনেকেই মনে করেন।
যোগাযোগ ব্যবস্থা সভ্যতার বিকাশ ও সমাজের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের প্রধান নিয়ামক। কোনও স্থানকে যোগাযোগ ব্যবস্থা থেকে বঞ্চিত রাখার অর্থই হলো সে স্থানের উন্নয়নের গতিকে সম্পূর্ণ স্থবির করে রাখা। সুনামগঞ্জে সড়ক যোগাযোগের অপ্রতুল্যতা ছিল প্রাচীনকাল থেকেই। তবু বলা যায়, প্রকৃতিক যতোটা না তার চেয়ে বেশি রাজনীতিক কারণে আমাদের সুনামগঞ্জে সুদীর্ঘ সময়ব্যাপী যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের কার্যক্রম গ্রহণ না করার একটি আর্থরাজনীতিক বাস্তবতা সুনামগঞ্জের উন্নয়নকে মন্থর করে রেখেছে।
গতকাল দৈনিক সুনামকণ্ঠের শীর্ষ সংবাদশিরোনাম ছিল, ‘শিক্ষা, যোগাযোগ, বিদ্যুৎ ও স্বাস্থ্যখাত উন্নয়নে বদলে যাচ্ছে সুনামগঞ্জ’। শেখ হাসিনা সরকার সুনামগঞ্জকে উন্নয়নের মূল¯্রােতে অন্তর্ভুক্ত করে যোগাযোগসহ শিক্ষা, বিদ্যুৎ ও স্বাস্থ্যখাতে বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়নের ইতিবাচক প্রভাব সুনামগঞ্জের আর্থসামাজিক ব্যবস্থাকে ক্রমে ক্রমে উন্নয়নের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিচ্ছে বলে অনেকেই মনে করেন। এই কার্যক্রম প্রকৃতপ্রস্তাবে সুনামগঞ্জের উন্নয়নের কার্যক্রমে বিরাজমান অচলায়তন ভেঙে দিয়েছে। আমরা আশা করি এই উন্নয়ন কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে এবং উত্তরোত্তর সুনামগঞ্জের শ্রীবৃদ্ধিতে নিয়ামক ভূমিকা পালন করবে।