ঢাকার বনানীর ১৮ নম্বর সড়ক, ৬০ নম্বর প্লট। আজিজুর রহিম নামের এক লোককে বরাদ্দ দিয়েছিলেন রাজউক। (রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ), ১৯৯৫ সালে। তখন বরাদ্দকৃত প্লটের বিপরীতে তিন লাখ টাকার কিস্তিও পরিশোধ করা হয়েছিল। কিন্তু ২০০৬ সালের ২১ মে রাজউকের বোর্ডসভায় উক্ত বরাদ্দটি বাতিল করে তৎকালের শিল্পমন্ত্রী জামায়াতের আমীর মতিউর রহমান নিজামীর অনুকূলে বরাদ্দ দেওয়া হয়, পাঁচ কাঠা পরিমিত ওই প্লটটি। বাজার চলতি একটি প্রচার আছে যে, তৎকালের প্রধামন্ত্রী খালেদা জিয়া ও মির্জা আব্বাসের সিদ্ধান্তানুসারে এই প্লটটি নিজামীকে বরাদ্দ দেওয়া হয়। এ সময় অর্থাৎ ২০০৬ সালে বিএনপি সরকারের আমলে ‘রাষ্ট্রীয় কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ’ একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের মধ্যে আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ, দেলোয়ার হোসেন সাঈদী প্রমুখসহ অনেককেই সরকারি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়।
গতকালের সুনামকণ্ঠের একটি শিরোনাম ছিলোÑ “যুদ্ধাপরাধীদেরকে বরাদ্দকৃত প্লট ও ফ্ল্যাট বাতিলের সিদ্ধান্ত”। আমরা সরকারি এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। একটি স্বাধীন দেশে, সেই দেশের স্বাধীনতাবিরোধীদের অনুকূলে এমন সরকারি সুবিধা প্রাপ্তির মর্মার্থ হলো ওই দেশের স্বাধীনতা অর্থহীন ও অন্তঃসারশূন্য একটি প্রপঞ্চ।
১৯৭৫-য়ের রাজনীতিক পটপরিবর্তনের সুবাদে রাজাকাররা বাংলাদেশের রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হয় এবং ক্ষমতার স্বাদ গ্রহণ করে অন্যান্য রাজনীতিক সামাজিক সুবিধার সঙ্গে এইসব প্লট/ফ্ল্যাট বরাদ্দ নেওয়ার সুযোগ তৈরি করে। তৎকালে বিএনপি সরকারের সাগ্রহ আনুকূল্যে এসব কিছুই অনাসায়ে সম্ভব হয়। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি বর্তমান সরকার সঙ্গত কারণেই মুক্তিযুদ্ধবিরোধী, মানবতাবিরোধী ও রাজাকারদের এইসব অন্যায় সুযোগ গ্রহণ থেকে বঞ্চিত করার যথোপযুক্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। একটি স্বাধীন দেশে স্বীকৃত স্বাধীনতাবিরোধী ও মানবতাবিরোধী কাজের স্বীকৃতি হতে পারে কেবল এই সব সুবিধা থেকে বঞ্চিত করাই নয়, চূড়ান্ত বিবেচনায় মৃত্যুদন্ড। কারণ তারা ত্রিশ লক্ষ মানুষের হত্যাকারি ও চার লাখ নারীর ধর্ষক।