মো. আমিনুল ইসলাম ::
রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারি ও শোলাকিয়া ঈদগাহে সম্প্রতি জঙ্গি হামলার ঘটনায় নজরদারিতে আসছে দেশের ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল, মাদ্রাসা ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। সারাদেশের মতো সুনামগঞ্জের বিভিন্ন স্কুল ও মাদ্রাসাসহ সন্দেহের তালিকায় থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোকেও নজরদারিতে রাখা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষক ও ছাত্রদের গতিবিধি নজরদারিতে রাখতে সরকারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ নির্দেশনার পর বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা নড়েচড়ে বসেছে। সুনামগঞ্জের নজরদারির বিষয়টি মঙ্গলবার রাতে সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা ও পুলিশের পক্ষ থেকে তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। তাছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা ক্লাসে শিক্ষার্থীদের জঙ্গিবাদে উৎসাহিত করছেন কি না তাও বিবেচনায় নিয়ে অনুসন্ধান চালাচ্ছে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা।
সূত্র জানায়, হামলার পর নিহত জঙ্গিদের ছবি প্রকাশ করায় বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বের হয়ে এসেছে তাদের পরিচয়। এদের মধ্যে অধিকাংশই দেশের নামকরা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী। এ কারণে কয়েকটি ধাপে এ নজরদারি কড়াকড়ি করা হয়েছে বলেও জানানো হয়। প্রথমে সন্দেহভাজন স্কুল ও প্রতিষ্ঠানসমূহের শিক্ষকদের তালিকা করা হবে। তালিকা অনুযায়ী শিক্ষকদেরও ব্যাকগ্রাউন্ড যাচাই-বাচাই করবে গোয়েন্দারা। এদের মধ্যে অধিক গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হবে যেসব শিক্ষক দেশের বাইরে থেকে পড়াশোনা বা চাকুরি করে বর্তমানে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন। তাদের বর্তমান কার্যক্রমসমূহ ও তাদের অতীতের বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়ে নিবিড়ভাবে পর্যালোচনা করবেন পুলিশ ও গোয়েন্দারা। তাছাড়া বিভিন্ন মসজিদের ইমামদেরকেও শুক্রবারেরর বয়ানে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেওয়ার অনুরোধ জানানো হচ্ছে।
বর্তমানে ছাত্ররা কোন সংগঠন বা কোন ব্যক্তিদের সঙ্গে মিশছে কি না বা কোন কোন সংগঠনের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা রয়েছে রয়েছে তা বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর কার্যক্রমও খতিয়ে দেখছেন গোয়েন্দারা। ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল ও বেসরকারি বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষা কার্যক্রমের পাশাপাশি কি কি ধরণের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে তাও নজরে রাখা হয়েছে।
জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে গড়ে ওঠা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, মাদ্রাসা ও অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উপর ইতিমধ্যে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে বলে ওই সূত্র জানিয়েছে। তাছাড়া সাদা পোশাকে গোয়েন্দারা বিভিন্ন স্থানে কার্যক্রম পরিচালনা করছেন বলে জানা গেছে। এসব প্রতিষ্ঠান ছাড়াও জঙ্গি তৎপরতারোধে সর্বোাচ্চ পর্যায়ের সতর্কতা রয়েছে জেলা পুলিশের। জেলার সকল থানাকে এ ব্যাপারে আরো কঠোরভাবে দায়িত্ব পালন করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি সন্দেহপ্রবণ হলেই চালানো হচ্ছে তল্লাশি।
দুই দিন আগে ধর্মপাশা উপজেলার সদর ইউনিয়নের কান্দাপাড়া গ্রাম থেকে জঙ্গি সংগঠনের সদস্য সন্দেহে মোবারক হোসেন (২৩) নামে এক যুবককে আটক করে পুলিশে দিয়েছে জনতা। ওই যুবক ঢাকার একটি মাদ্রাসার শিক্ষক। তার বাড়ি নেত্রকোণা সদরের মঈনপুর গ্রামে।
ধর্মপাশা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. গোলাম কিবরিয়া বলেন, উপজেলার সদর ইউনিয়নের হাওর এলাকার কান্দাপাড়া গ্রামের সামনের সড়কে গত রোববার রাতে মোবারক হোসেন এলোপাতাড়ি ঘোরাঘুরি করছিলেন। এ সময় স্থানীয় এলাকার লোকজন জঙ্গি সংগঠনের সদস্য সন্দেহে তাকে আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন। তিনি ঢাকার সাভারে জামালুল উলুম জমিলা খাতুন কওমি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন বলে জনিয়েছে। আটককৃত মাদ্রাসা শিক্ষক জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সুনামগঞ্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন-অর-রশিদ বলেন ‘আমরা সারা জেলায়ই নজরদারি বাড়িয়েছি। যেসকল স্কুল-মাদ্রাসা ও প্রতিষ্ঠানসমূহ আমাদের সন্দেহের তালিকায় রয়েছে সেগুলোর উপর আমাদের নজরদারি রয়েছে। আমাদের গোয়েন্দারা এ ব্যাপারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।