মো. আমিনুল ইসলাম ::
‘আমি জুনায়েদ ইভান ভাইয়া আর তার ব্যান্ড ‘অ্যাশেজ’-এর খুব বড় একজন ভক্ত। লেখাপড়া-আড্ডাবাজি আর শখের কাজগুলোর পাশাপাশি অ্যাশেজের গানগুলো আমাকে সঙ্গ দেয়। অনেক বেশি কথা বলার চেয়ে অনেক বেশি কাজ করতেই ভালোবাসি। আর যখন ইচ্ছে হয় তখন ইচ্ছেটাকে যতোটা পারি পূর্ণতা দেয়ার জন্য কাজ করে যাই। এভাবেই আমাদের প্রিয় ব্যান্ড ‘মিস্ট্রিয়াস, এর গল্পটা রচিত হয়। শহরে একটা ভালো মানের ব্যান্ডের অভাব অনুভব করছিলাম। তাই চেষ্টা করেছি বন্ধুদের নিয়ে এ শূন্যতাকে কাটিয়ে দিতে, আমরা পেরেছি।’ এভাবেই কথাগুলো বলেন সদ্য আত্মপ্রকাশ হওয়া ব্যান্ড ‘মিস্ট্রিয়াস’ এর স্বপ্নদ্রষ্টা তরুণ আসিফ বখ্ত রাদ। একটা স্বপ্নকে যিনি বাস্তবে রূপ দিয়ে দেখিয়েছেন।
রোববার এক চোখ ধাঁধানো আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে আত্মপ্রকাশ করে ব্যান্ড মিস্ট্রিয়াস। আর এ ব্যান্ডের আত্মপ্রকাশকে ঘিরে সুনামগঞ্জ মাতিয়ে যায় দেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড “অ্যাশেজ”। ফরহাদ শাহী আফিন্দী ও ফারজিয়া হক ফারিনের যৌথ পরিচালনায় জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানের সফলতার পর থেকে বিভিন্ন এলাকা থেকে ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ফোনে অনুভূতি ব্যক্ত করে আয়োজকদের সাধুবাদ জানান অনেকেই। ব্যান্ড মিস্ট্রিয়াসের সম্পর্কে অনেকটাই এখনো অজানা। কারণ এর সাথে যারা রয়েছেন তারা কখনো শহরের পেশাদার শিল্পী ছিলেন না। মূলত বন্ধুদের স্বপ্নপূরণেই জন্ম হয় মিস্ট্রিয়াসের। যার প্রথম স্বপ্নবাজ তরুণ আসিফ বখত রাদ।
তাঁর সাথে আরো দুই স্বপ্নবাজ বন্ধু তাঁকে সফলতার স্বাদ পেতে নিজেদের পর্যায় থেকে সার্বক্ষণিক সহায়তা করেগেছেন। তাঁরা হলেন রুহুল আমিন নাঈম ও নাহিয়ান ওয়াসিম। তারা তিনজনই জুবিলিয়ান। ব্যান্ডদল গঠনের নেশাটা মূলত এ তিনজনেরই ছিল। আর তাঁরা শেষ পর্যন্ত করে দেখিয়েছেন।
আসিফ বখ্ত রাদ জানান, একটা একটা করে রাত পার করে তারা ছুটেছেন স্বপ্নটার পেছনে। টানা দু’মাস শহরের কাজির পয়েন্ট এলাকার চায়ের আড্ডায় ব্যান্ডদল গঠন নিয়ে ভাবতেন তাঁরা। একটার পর একটা নামও তাঁরা নিজেদের মতো করে সাজিয়েছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ‘মিস্ট্রিয়াস’ নামটাই ঠিক করা হয়। তাদের মতে শহরের সবাইকে অবাক করে দেয়ার জন্য যেভাবে তারা নীরবে কাজ করে গেছেন সে ব্যান্ডের নামটাও ‘রহস্য’ অর্থাৎ ‘মিস্ট্রিয়াস’।
ব্যান্ড দলটির সভাপতি আসিফ বখ্ত রাদ ছাড়া বাকি দুই তরুণের মধ্যে সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন নাঈম জানান, প্রথমে তাঁরা তিনজনের মধ্যেই বিষয়টা ছিল সীমাবদ্ধ। কাউকে জানানোও হয়নি কিছুই। পরে ইচ্ছেটা যখন অনেকটাই শক্তিতে রূপ নিতে শুরু করে তখন শহরের আরো কয়েকজনের সাথে তাঁদের স্বপ্নের কথাটা বলা হলে তাঁরাও উৎসাহ দেন। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রথম থেকেই শহরে ‘অ্যাশেজ’ ব্যান্ডকে আনতে চেয়েছিলাম, আর এসব বিষয় নিয়ে পরে রবিনদের সাথে আমরা শেয়ার করেছি। আমাদের বন্ধুরা অনেক উৎসাহ দিয়েছে এবং নিজেরাও ব্যান্ড ‘মিস্ট্রিয়াস’ কে গড়ে তুলতে কাজে লেগে গেছে।’
আসিফ বখ্ত রাদ বলেন, ‘আমাদের মঞ্চে যাদেরকে দেখা গেছে তারা আমাদেরই বন্ধু। এ ৬জন ছাড়াও আমাদের আরো ২০জন ‘মিস্ট্রিয়াস’ সদস্য রয়েছে॥ যারা আমাদের স্বপ্নের ব্যান্ডদল মিস্ট্রিয়াসের শক্তি। তারা পেছনে থেকে কাজ করে গেছেন। তাদের পরিশ্রমেই আমরা এতোবড় একটা প্রোগ্রাম করতে পেরেছি।’
রাদের সাথে তার আরো এক বন্ধু ও ব্যান্ড দলের সহ-সভাপতি নাহিয়ান ওয়াসিম বলেন, ‘আমরা তিনজন জুবিলিয়ান ১৩-ব্যাচ এর ছাত্র। ছোটবেলা থেকেই আমাদের কাজের মধ্যে একই রকম মিল পাওয়া যেতো। তাই বন্ধুত্ব আমাদেরকে এখনো একই সাথে রেখেছে। এখন আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। কিন্তু যখন অবসরে আড্ডা দেই তখন স্বপ্নময় চিন্তাগুলো মাথায় ঘুরতে থাকে। আর এজন্য বেশ কয়েক বছরের মধ্যে ভালোমানের ও পূর্ণাঙ্গ কোন ব্যান্ড দলের শহর কাঁপিয়ে দেয়া উৎসব চোখে না পরায় আমরা নিজেরাই একটা পূর্ণাঙ্গ ব্যান্ড গঠনের স্বপ্ন দেখেছি। আমাদের বন্ধুরাই অনেকে গিটার, ড্রাম বাজাতে পারে। অনেকে ভালো গাইতে পারে। তাই তাদের কাছ থেকে সাড়া পাওয়া গেলো, অবশেষে আমরা পেরেছি…।’
আসিফ বখত রাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, তারুণ্যের এই আয়োজনকে কেন্দ্র করে যখন টিকেট বাজারে ছাড়া হয়েছিলো তখন জেলার বাইরে মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জসহ অন্যান্য অঞ্চল থেকেও ফোনকল পাওয়া গেলো। রোববার জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজিত এ আনুষ্ঠানিকতায় যারা যোগ দিতে চেয়েছেন তারা প্রত্যেকেই টিকেট সংগ্রহ করেছিলেন অনেক আগে থেকে। আর এজন্য মিলনায়তনে ৪০২টি আসনের সবগুলোই বুকিং হয়ে যায় অল্প সময়ে।
বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে নির্ধারিত সময় থেকে সরে সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত চলা অনুষ্ঠানটি যারা উপভোগ করেছেন তারা কেবল অনুষ্ঠান উপভোগই করেছেন। কিন্তু যারা পেছনে থেকে এতোবড় একটি আয়োজনের সফলতা টেনেছেন তারা নিজেদেরকে প্রকাশ করেননি কোনভাবেই। আর তাদের প্রচারবিমুখতাই হয়েছে লোকমুখে প্রশংসনীয়।
শহরের ষোলঘর এলাকার বাসিন্দা নাহিদ হাসান বলেন, ‘আমি সুনামগঞ্জে এই ধরনের আয়োজন খুব কমই দেখেছি। আর শহরে আমার জানামতে সেরকম কোন পূর্ণাঙ্গ ব্যান্ডদল ছিলো না। ‘মিস্ট্রিয়াস’ তাদের যাত্রার মধ্য দিয়ে আমাদেরকেও ব্যান্ড দলের নানা উৎসব উপভোগ করার মতো সুযোগ করে দিলো। আর ‘মিস্ট্রিয়াস’ ও জুনায়েদ ইভানের ‘অ্যাশেজে’র দারুণসব গান আমাদেরকে মুগ্ধ করেছে। সব মিলিয়ে অনুষ্ঠানটা ছিলো অসাধারণ। সবচেয়ে বড় বিষয়টা হলো, এ অনুষ্ঠানে যারা তাদের অর্থ ব্যয় করেছেন, অনেক পরিশ্রম করেছেন, তারা তাদেরকে প্রকাশ করেননি। আড়ালে থেকে মঞ্চের বন্ধুদের শক্তি জুগিয়েছেন, প্রেরণা দিয়েছেন, এটা ভালো লেগেছে’।
মিস্ট্রিয়াসের ভোকালিস্ট শুভজিৎ সেন আপন বলেন, আমরা মঞ্চে গান করেছি। কিন্তু যারা আমাদের পেছনে থেকে সহযোগিতা করেছেন তাদের কথা অবশ্যই উল্লেখ করা উচিত। যারা ‘মিস্ট্রিয়াস’ এর স্বপ্ন দেখেছেন, যারা পরিশ্রম করেছেন, বিশেষ করে রাদ, রবিন, সিয়াম, নাঈমসহ সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার কারণেই আমরা সফল হয়েছি। মিস্ট্রিয়াস থেমে থাকবে না। সকলের সহযোগিতা নিয়ে এর যাত্রা অব্যাহত থাকবে। আমরা গতানুগতিক ধারার বাইরে সুনামগঞ্জবাসীকে ভালো কিছু উপহার দিতে চাই।