সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
ভারতের বিতর্কিত ইসলামী বক্তা জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে ‘জঙ্গিবাদে উৎসাহ যোগানোর’ অভিযোগ ওঠার পর তার পিস টিভির সম্প্রচার বাংলাদেশে বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইন-শৃঙ্খলা স¤পর্কিত মন্ত্রিসভা কমিটির এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয় বলে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসনে আমু সাংবাদিকদের জানান।
এক সপ্তাহের ব্যবধানে দেশে দুই দফা বড় ধরনের সন্ত্রাসী হামলার প্রেক্ষাপটে মন্ত্রিসভা কমিটির এই ‘বিশেষ’ বৈঠক হয়, যাতে আমু সভাপতিত্ব করেন।
জাকির নায়েক পরিচালিত মুম্বাইভিত্তিক ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশনের একটি প্রতিষ্ঠান হল এই পিস টিভি। এ টিভিতে ধর্ম নিয়ে আলোচনায় ইসলামের যে ব্যাখ্যা তিনি দেন, তা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
গত ১ জুলাই গুলশানে বাংলাদেশের ইতিহাসে ভয়াবহতম জঙ্গি হামলায় সঙ্গে জড়িতদের মধ্যে অন্তত দুইজন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে জাকির নায়েকের মত ইসলামী বক্তাদের নিয়মিত অনুসরণ করতেন। তার কথায় প্ররোচিত হয়ে ভারতের কয়েকজন তরুণ আইএসে যোগ দিতে সিরিয়ায় পাড়ি জমিয়েছে বলেও খবর এসেছে।
এ বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর জাকির নায়েকের বিষয়ে উদ্যোগী হয় ভারত সরকার। মহারাষ্ট্র রাজ্য সরকার তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে। মুম্বাইয়ে তার অফিস ঘিরে পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
ভারতের সম্প্রচারমন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নাইডু শুক্রবার ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, “আমরা অভিযোগ তদন্ত করছি। কারণ এটা আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা, সেই সঙ্গে সামাজিক সম্প্রীতির জন্যও হুমকি।”
এদিকে বাংলাদেশেও পিস টিভির সম্প্রচার বন্ধের দাবি জোরালো হয়ে উঠতে থাকে।
বাংলাদেশ কেবল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মীর হোসেন আখতার বলেন, “আমরা পুরো দেশেই চ্যানেলটি বন্ধ করে দিতে চাচ্ছি। তবে সরকারের কোনো নির্দেশনা না থাকায় এই মুহূর্তে তা সম্ভব হচ্ছে না।”
কেবল অপারেটরদের অপর সংগঠন কেবল অপারেটার্স বাংলাদেশের (কব) সাবেক সভাপতি এস এম আনোয়ার পারভেজ বলেন, “আমাদের দেশটা শান্তিপ্রিয় দেশ। আমাদের কোনো প্রয়োজন নাই পিস টিভির।”
এই প্রেক্ষাপটে সরকারের ভেতরেও নড়াচড়ার ইঙ্গিত পাওয়া যায় শনিবার।
তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু সেদিন গণমাধ্যমকে বলেন, “এই টিভিটি স¤পর্কে কিছু অভিযোগ আমাদের গোচরীভূত হয়েছে। এগুলো খতিয়ে দেখা হবে। মন্ত্রণালয়ের অফিস খুললেই কাজ শুরু হবে। অল্প সময়ের মধ্যেই এ বিষয়ে সরকারের স্ট্যান্ড আমরা ¯পষ্ট করব।”
জাকির নায়েক অবশ্য দাবি করেছিলেন, তার বক্তব্যে অনুপ্রাণিত হয়ে তরুণরা জঙ্গিবাদে ঝুঁকছে- এমন অভিযোগ বাংলাদেশ সরকারের লোকজন ‘বিশ্বাস করে না’।
শনিবার এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, “আমি বাংলাদেশ সরকারের লোকদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা আমাকে বলেছেন, বাংলাদেশের জঙ্গিদের আমি নিরীহ মানুষকে হত্যা করতে অনুপ্রাণিত করেছি- এমন অভিযোগ তারাও বিশ্বাস করেন না। তাদের মধ্যে একজন আমার ফ্যান ছিল, সেটা আলাদা বিষয়।”
তবে ঈদের ছুটি শেষে রোববার অফিস খোলার প্রথম দিনই মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে বাংলাদেশে পিস টিভির সম্প্রচার বন্ধের সিদ্ধান্ত এল।
শিল্প মন্ত্রী আমির হোসনে আমুর সভাপতিত্বে এ বৈঠকে বাণিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, পানিস¤পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান, বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি অংশ নেন ।
এছাড়া পুলিশ মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক, ঢাকার পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়াসহ বিভিন্ন বাহিনী ও সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন এ বৈঠকে।
উল্লেখ্য, পিস টিভির লাইসেন্স দুবাইভিত্তিক। বাংলাদেশে তার লাইসেন্স বাতিলের কোনও সুযোগ নেই। তবে সরকারের নির্দেশনা পেলে ক্যাবল অপারেটররা পিস টিভি দেখানো বন্ধ করে দিতে পারে। ২০০৬ সালের ২১ জানুয়ারি থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পিস টিভি সম্প্রচারিত হচ্ছে। ২০১১ সালের ২২ এপ্রিল শুরু হয় পিস টিভি বাংলা চ্যানেল। বাংলা ছাড়াও বিভিন্ন ভাষায় সম্প্রচারিত হচ্ছে বিতর্কিত এ চ্যানেলটি। মুম্বাইভিত্তিক ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশনের একটি প্রতিষ্ঠান ‘পিস টিভি’। এটা পরিচালনা করেন জাকির নায়েক নিজেই। তবে জাকিরের বক্তব্য নিয়ে প্রশ্ন থাকায় অনেক আগেই পিস টিভির সম্প্রচার বন্ধ করেছে মালয়েশিয়া, ব্রিটেন, কানাডার মতো দেশ।