1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
শনিবার, ০৩ জুন ২০২৩, ০৮:২৯ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

নামি বিশ্ববিদ্যলয়ের ছাত্ররা যেভাবে জঙ্গিবাদে দীক্ষা নিচ্ছে

  • আপডেট সময় শনিবার, ৯ জুলাই, ২০১৬

সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
গুলশান হামলায় জড়িতদের পরিচয় যখন প্রথম প্রকাশ পেল, তখন তা স্তম্ভিত করেছিল বাংলাদেশকে। পাঁচ হামলাকারীর তিনজনই ঢাকার উচ্চবিত্ত বা উচ্চমধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। ঢাকার নামি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। বাংলাদেশিদের জন্য দ্বিতীয় ধাক্কাটি এলো কয়েক দিন পর ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া তিন জঙ্গির এক ভিডিও দেখে। এদের একজনের চেহারা ঢাকার টেলিভিশনের জনপ্রিয় এক অনুষ্ঠানে অনেকেই দেখেছেন। গান পাগল তরুণটি কিভাবে জঙ্গিতে পরিণত হলেন, তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করছিলেন গ্রামীণফোনে তারই এক সাবেক সহকর্মী। শোলাকিয়ার ঈদের জামাতে হামলাকারীদের একজনের পরিচয় প্রকাশ করেছে পুলিশ। হামলার সময় নিহত এই তরুণ ছিল ঢাকার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র।
মাদ্রাসাগুলোই ইসলামী জঙ্গিদের আখড়া বলে যারা ধরে নিয়েছিলেন, তাদের জন্য আবারও একটা বড় ধাক্কা। বাংলাদেশে প্রচলিত ধারণা হচ্ছে মাদ্রাসার ছাত্ররাই বুঝি শুধু জঙ্গি তৎপরতায় জড়িত হয়। কিন্তু এখন আমরা দেখছি উল্টো চিত্র। সমাজের উঁচু স্তরের পরিবারের সন্তান বা নামিদামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রদের মধ্যেই এ ধরনের উগ্র মতবাদের প্রবণতা বেশি দেখা যাচ্ছে, বলছিলেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটিজ স্টাডিজের প্রেসিডেন্ট অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মুনীরুজ্জামান।
বাংলাদেশে যে ব্লগারকে হত্যার মধ্য দিয়ে ২০১৩ সালে জঙ্গিরা নতুন শক্তিতে এবং নতুন মাত্রায় তাদের কার্যক্রম শুরু করে, সেই আহমেদ রাজীব হায়দার হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের কয়েকজন ছিল নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়েরই ছাত্র। এরপর আরও কিছু সন্ত্রাসবাদী হামলার ঘটনাতেও এরকম নামি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছাত্রদের যুক্ত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বাংলাদেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর যাত্রা শুরু হয়েছিল ঢাকার বিত্তবান এবং ক্ষমতাবান পরিবারের সন্তানদের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে। সচেতনভাবে এসব বিশ্ববিদ্যালয়কে রাজনীতি থেকে দূরে রাখার চেষ্টা ছিল শুরু থেকে। কিন্তু সেখানে পড়তে আসা সমাজের সুবিধাভোগী শ্রেণির তরুণরাই কেন ঝুঁকে পড়ছে সন্ত্রাসবাদের দিকে?
জেনারেল মুনীরুজ্জামান মনে করেন, এর অনেক কারণ রয়েছে। এ জন্য প্রথমত তিনি দায়ী করছেন বাংলাদেশের সমাজে বিদ্যমান অস্থিরতাকে। সমাজে এক ধরনের অনিশ্চয়তা আছে। যেখানে তরুণরা কোনো রোল মডেল খুঁজে পাচ্ছে না তাদের জীবনের জন্য। এর পাশাপাশি বাংলাদেশে এখন মুক্তভাবে মত প্রকাশের স্বাধীনতার পথও আস্তে আস্তে সংকুচিত হয়ে আসছে। কিন্তু যে তরুণরা উগ্রবাদী কাজে জড়িত হওয়ার জন্য ঘর ছেড়েছে, তারা যে সমাজ-রাজনীতি নিয়ে সিরিয়াস চিন্তা-ভাবনা করতেন, সে রকমটি তাদের পরিচিতজনদের কেউ বলছেন না। দু-একজন বাদে এদের বেশির ভাগের আগের জীবনের যে আভাস তাদের সোশাল মিডিয়ার টাইমলাইনে দেখা গেছে, তাকে এক ধরনের আমুদে এবং ভোগ-বিলাসী জীবনে অভ্যস্ত বলেই মনে হচ্ছে।
এর ব্যাখ্যা তাহলে কি?
জেনারেল মুনীরুজ্জামান মনে করেন, যারা এ ধরনের কাজে জড়িয়ে পড়ছে, তাদের প্রোফাইল বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায় ব্যক্তিগত জীবনে তাদের কোনো একটা হতাশার জায়গা আছে। সেই দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছে রিক্রুটাররা। জঙ্গিবাদে এদের যারা দীক্ষা দিচ্ছে, সেই রিক্রুটাররা যখন এদের হতাশার জায়গাটা চিহ্ণিত করতে পারে, তখন সেই দুর্বলতাকে তারা এক্সপ্লয়েট করতে শুরু করে। এবং একটা পর্যায়ে তাকে সম্পূর্ণভাবে পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়। এটা হালকা ব্যাপার নয়, খুবই টেকনিক্যাল একটা ব্যাপার। কিন্তু তরুণরা যে তাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই এ রকম জঙ্গিবাদের সংস্পর্শে আসছে, এ রকম কোনো প্রমাণ এখনো নেই। কিভাবে তাহলে এরা এ রকম উগ্র মতাদর্শে জড়িয়ে পড়ছে?
এদের র‍্যাডিকেলাইজেশনের ক্ষেত্রে ইন্টারনেট বড় ভূমিকা রাখছে। প্রাথমিক যোগাযোগটা ইন্টারনেটের মাধ্যমেই হচ্ছে, সেটা দেশে হোক বা বিদেশে হোক, বলছেন জেনারেল মুনীরুজ্জামান। গুলশান হামলায় অংশগ্রহণকারীদের সম্পর্কে যতটুকু তথ্য এ পর্যন্ত জানা গেছে, তার ভিত্তিতে জেনারেল মুনীরুজ্জামান বলছিলেন, তারা কিভাবে এই কাজে যুক্ত হয়ে থাকতে পারে। এরা সম্ভবত ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রথমে যোগাযোগ স্থাপন করেছে কোনো হ্যান্ডলারের সাথে। এই হ্যান্ডলারের মাধ্যমেই হয়ত তারা একটা গোষ্ঠীর সঙ্গে পরিচিত হয়েছে। এবং আস্তে আস্তে তারা একটা সেল গড়ে তুলেছে।
ইসলামিক স্টেট যখন কয়েক বছর আগে ইরাক এবং সিরিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চল দখল করে নিয়ে সেখানে তাদের খেলাফত প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়, তখন ইউরোপ এবং আমেরিকা থেকে অনেক মুসলিম তরুণ সেখানে গিয়ে তাদের সঙ্গে যোগ দেয়। ব্রিটেন থেকে বেশ কিছু বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তরুণও তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিল। পশ্চিমা দেশগুলো থেকে সিরিয়ায় যাওয়া এই বাংলাদেশিদের সঙ্গে বাংলাদেশের তরুণদের যোগাযোগের সম্ভাবনা কতটা? জেনারেল মুনীরুজ্জামান এ রকম সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছেন না। পশ্চিমা দেশগুলো থেকে যাওয়া তরুণরা যে ধরনের ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে এসেছে, যে ধরনের নামিদামি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসেছে, তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের এই তরুণদের সম্পর্ক থাকতে পারে। একটা পিয়ার-টু-পিয়ার কমিউনিকেশনের চ্যানেলগুলো এখানে উন্মুক্ত আছে।
গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে যারা হামলা করেছিল, তাদের অনেকেই আগে থেকে নিখোঁজ ছিল। একজন হামলাকারীর বাবা জানিয়েছেন, নিজের সন্তানের খোঁজ করতে গিয়ে তিনি জানতে পেরেছেন, ঢাকার আরও বহু পরিবারের সন্তানরা এভাবে পালিয়ে গেছে। জেনারেল মুনীরুজ্জামান মনে করেন, এই নিখোঁজ তরুণদের হদিস খুঁজে বের করা খুবই জরুরি। এদেরকে খুঁজে বের করতে হবে। একই সঙ্গে তরুণদের জঙ্গিবাদ থেকে দূরে রাখা বা ডি-র‍্যাডিকেলাইজেশনের জন্যে বিভিন্ন স্তরে কার্যক্রম চালাতে হবে। এই কার্যক্রম একেকটা স্তরে একেক রকম হবে। শহরের তরুণদের জন্য একরকম, গ্রামের তরুণদের জন্য একরকম। কিন্তু সে রকম কোনো জাতীয় উদ্যোগ এখনো পর্যন্ত না থাকায় হতাশা প্রকাশ করেন তিনি। সূত্র : বিবিসি বাংলা

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com