1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
শনিবার, ০৩ জুন ২০২৩, ০৮:১৪ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

হিজবুতের হাত ধরেই জঙ্গি তৎপরতা

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ৭ জুলাই, ২০১৬

সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
হিজবুত তাহরিরের হাত ধরেই জঙ্গি তৎপরতায় জড়িয়ে পড়ছে দেশের তরুণ-যুবকরা। সংগঠনটি শুরু থেকেই দেশের উচ্চবিত্তের সন্তানদের টার্গেট করে কার্যক্রম পরিচালনা করে। এজন্য নজর দেয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী-শিক্ষকরা দলেও ভিড়ে।
১ জুলাই রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলাকারীদের মধ্যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী নিবরাস ইসলাম রয়েছেন। এছাড়া ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক হাসনাত আর করিম আর্টিজানে হামলায় সন্দেহজনক হিসেবে পুলিশ হেফাজতে আছেন।
হিজবুত তাহরিরের পৃষ্ঠপোষকতার কারণেই হাসনাত রেজা করিম নর্থ সাউথ ইউনির্ভাসিটি থেকে চাকরিচ্যুত হয়েছিলেন। ২০১২ সালে তাকেসহ চার শিক্ষককে এই কারণে অব্যাহতি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
২০১২ সালের জুনের শেষ ভাগে এই ঘটনা ঘটে। সে সময়ে অভিযোগের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করে। সেই কমিটির রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতেই অব্যাহতি দেয়া হয় হাসনাত রেজা করিমসহ চারজনকে। বিশ্ববিদ্যালয়টির বিজনেস ফ্যাকাল্টির শিক্ষক ছিলেন হাসনাত করিম। ওই বিভাগেরই শিক্ষার্থী ছিলেন গুলশানের হোলি আর্টিসান বেকারিতে হামলাকারীদের একজন নিবরাস ইসলাম। ধারণা করা হচ্ছে, নিবরাসের সঙ্গে হাসনাত রেজা করিমের যোগাযোগ তখন থেকেই ছিল। ২০১২ সালের মে মাসে প্রকাশিত বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি কোর্সের নম্বরপত্রে নিবরাসের নাম রয়েছে। আর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হাসনাত রেজা করিম চাকরিচ্যুত হন ২০১২ সালেরই জুন মাসে।
নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে হিজবুত তাহরিরের কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার নজির আগে থেকেই রয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়া রাইটার রাজীব হায়দার হত্যাকাণ্ডে জড়িতরাও ছিল এই গ্রুপেরই সদস্য, যাদের কেউ কেউ নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
এদিকে আর্টিজানে হামলার প্রশংসা ও আরও হামলার হুমকির ভিডিওবার্তা প্রেরণকারীদের অন্যতম তাহমিদ। তিনি হিজবুত তাহরিরের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে জানা গেছে। তাহমিদের বন্ধুরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ দিকে হিজবুত তাহরির নামে একটি সংগঠনের গল্প করতো এবং তাদের কাজের প্রশংসা করতো। এরপর তার আচার-আচরণে ব্যাপক পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয় এবং হঠাৎ সে নিজের গতিবিধি লুকানোর চেষ্টা করে আমাদের কাছে। তখন আমরা আর যোগাযোগ রাখিনি।
কীভাবে সম্পৃক্ততা হয় জানতে চাইলে জঙ্গিবাদ বিষয়ের গবেষক প্রবাসী নির্ঝর মজুমদার বলেন, উচ্চবিত্ত সন্তানরা পালাচ্ছে বা যোগ দিচ্ছে। কারণ তারাই রিক্রুটমেন্টের লক্ষ্য ছিল। তাদের লক্ষ্য করেই রিক্রুটমেন্ট ক্যাম্পেইন চালিয়েছে জঙ্গিরা। আর যোগ দেয়ার ক্ষেত্রে একটা ধরন লক্ষণীয়। উচ্চবিত্ত ও প্রভাবশালী পরিবারের সন্তানদের টার্গেট করতো হিজবুত তাহরির, যারা আদর্শিকভাবে আইসিসের সমান্তরাল। এদের অধিকাংশই প্রথমে সামাজিক মাধ্যমে জিহাদি লেখা পড়ে অনুপ্রাণিত হয় এবং পরবর্তী সময়ে সরাসরি রিক্রুটার-এর সংস্পর্শে আসে।
ক্লোজ আপ তারকা শিল্পী তাহমিদ যখন পরিবারের সঙ্গে নিকুঞ্জের বাসায় থাকতেন তখন বন্ধুরা তার পরিবর্তন দেখতে পায় এবং তার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় বলে জানিয়েছেন বন্ধুরা।
তাহমিদ সাবেক নির্বাচন কমিশনার সফিউর রহমানের ছেলে। কেবল তাই নয়, তিনি শান্তিনিকেতনে পড়েছেন, বাংলাদেশের জনপ্রিয় রিয়েলিটি শো ক্লোজ আপ ওয়ানের প্রথম আয়োজনে তিনি শীর্ষ ১৫ কণ্ঠশিল্পীর মধ্যে ছিলেন।
একজন সচিবের ছেলে কীভাবে জঙ্গি হলেন সে প্রশ্নে স্বজনরা বলছেন, হঠাৎ করে সে গান বন্ধ করে দেয়। তাদের ‘ধারণা’ তাহমিদের ওরিয়েন্টেশন হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ সময় থেকেই। তবে গ্রামীণফোনে চাকরি সূত্রে তিনি এমন কিছু মানুষের সংস্পর্শে আসে, যারা তাকে অন্যভাবে ভাবতে শিখিয়েছে। আর বিশ্লেষকরা বলছেন, এদের অধিকাংশই প্রথমে সামাজিক মাধ্যমে জিহাদি লেখা পড়ে অনুপ্রাণিত হয় এবং পরবর্তী সময়ে সরাসরি রিক্রুটার-এর সংস্পর্শে আসে। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিপরীতটাও ঘটে। রিক্রুটারের মাধ্যমে সামাজিক সম্পর্ক তৈরি করে তাকে জঙ্গি হওয়ায় উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে এমনটাও হতে পারে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশিদ বলেন, ‘আমাদের দেশে অনেকগুলো জঙ্গি সংগঠন আছে। বর্তমানে যে হামলা হচ্ছে সেগুলো কম্বাইন্ড ফোর্সেস বা সিন্ডিকেটেড হামলা। এদের স্বার্থ যেখানে এক সেখানেই তারা সম্মিলিত হামলা করছে। এখানে জামায়াত-শিবির, হিজবুত তাহরির, জেএমবি, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, হুজি, আনসার আল ইসলাম, হিজবুত তাওহীদসহ আরও অনেক সংগঠন রয়েছে। এসব সংগঠন তরুণদের টার্গেট করে দলে টানছে। এমনভাবে মগজ ধোলাই করা হচ্ছে যাতে তারা জীবন দিতেও কুণ্ঠাবোধ করছে না।’
জঙ্গি তৎপরতার অভিযোগে সাত বছর আগে নিষিদ্ধ হয় হিজবুত তাহরির। এরপর সংগঠনটির অনেক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে এর মধ্যেও বিভিন্ন স্থানে মিছিলের চেষ্টা চালাতে দেখা যায় সংগঠনটির কর্মীদের। মাঝে-মধ্যে সংগঠনটির পোস্টারও চোখে পড়ে রাজধানীসহ দেশের নানা এলাকায়, এর পাশাপাশি অত্যন্ত গোপনে সংগঠনটি তাদের প্রকাশনা বের করা অব্যাহত রেখেছে।
হিজবুতের এই তৎপরতার বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক র‌্যাবের এক পদস্থ কর্মকর্তা বলেন, ‘সংগঠনটি নিষিদ্ধ। এরপরও তারা গোপনে কাজ করছে বলে তথ্য রয়েছে। তবে র‌্যাব-পুলিশের তৎপরতার কারণে তারা অত্যন্ত গোপনে কাজ করার চেষ্টা করছে।’
জঙ্গিদের সমূলে উৎখাত করতে র‌্যাব কাজ চালিয়ে যাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘হিজবুত তাহরিরের অনেক নেতা- সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
আন্তর্জাতিক ইসলামী সংগঠন হিসেবে পরিচিত হিজবুত তাহরিরের প্রতিষ্ঠা ১৯৫৩ সালে জেরুজালেমে। এই দলের প্রতিষ্ঠাতার নাম তকিউদ্দিন আল নাভানী। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান গ্রহণকারী এই সংগঠনটি ইসলামী খিলাফত কায়েমে বিশ্বাসী। বিশ্বের প্রায় ৪০টি দেশে এই সংগঠনের কাজ রয়েছে। এছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই সংগঠনটি নিষিদ্ধ।
বাংলাদেশে হিজবুত তাহরিরের কাজ শুরু হয় ২০০০ সালের কিছু পরে। ২০০৯ সালের অক্টোবরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। তবে হিজবুতের প্রচার কার্যক্রম বলছে, নিষিদ্ধ হওয়ার সাত বছর পরও দলীয় কার্যক্রম গোপনে হলেও চালিয়ে যাচ্ছে সংগঠনটি।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com