বিশেষ প্রতিনিধি ::
নানা ঘটনার পর বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার মনাই নদীর উপর নির্মিত আলোচিত মিছাখালি রাবার ড্যাম উদ্বোধন হতে যাচ্ছে আজ শনিবার। ৩৭ কোটি টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) নির্মিত এই রাবার ড্যামটি নির্মাণের ফলে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার খরচা ও আঙ্গারুলি হাওরের প্রায় ৭০ কোটি টাকার বোরো ফসল আগাম বন্যার হাত থেকে রেহাই পাবে। ফলে নানাভাবে উপকৃত হবে প্রায় ৫০ হাজার কৃষক। ২২০ মিটির দৈর্ঘ্যরে এই রাবার ড্যামটি নির্মাণের ফলে এলাকার কৃষি উন্নয়নে সম্ভাবনার দ্বার খুলেছে বলে মন্তব্য করেছেন এলাকাবাসী।
বিএডিসি সূত্রে জানা গেছে, মিছাখালি রাবার ড্যাম নির্মাণকালে নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের উদাসীনতার কারণে নানা অঘটন ঘটে। এ নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। তবে সব বাধা ডিঙিয়ে অবশেষে আজ স্বপ্নের এই রাবার ড্যামটি উদ্বোধনের উদ্যোগ নেওয়ায় খুশি হাজার হাজার কৃষক। রাবার ড্যামটি নির্মাণের ফলে দুটি হাওরের প্রায় ৭ হাজার হেক্টর জমির বোরো ধান পাহাড়ি ঢলের আগ্রাসন থেকে রক্ষা পাবে। এ কারণে ফসলহানি এড়াতে পারলে প্রায় ৭০ কোটি টাকার বোরো ফসল গোলায় তোলতে পারবেন কৃষক। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছেন পূর্ণাঙ্গ কাজ সারতে এ পর্যন্ত প্রায় ৩৭ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। জেলার দু’টি হাওরের বোরো ফসলকে পাহাড়ি ঢল ও আগাম বন্যার হাত থেকে বাঁচাবে রাবারের বাঁধ।
আজ ২ জুলাই শনিবার বাংলাদেশ সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান রাবার ড্যামটি উদ্বোধন করবেন। অনুষ্ঠানে বিএডিসি’র চেয়ারম্যান মো. নাসিরুজ্জামানসহ স্থানীয় প্রশাসন ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা উপস্থিত থাকবেন। গত বছরের ১৫ জানুয়ারি এই রাবার ড্যামের উদ্বোধন করেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান।
বিএডিসি সূত্র জানিয়েছে, রাবার ড্যাম নির্মাণের আগে বিএডিসির বিশেষজ্ঞ দল হাওর এলাকা সার্ভে করে। এসময় তারা সুবিধাভোগী কৃষকদের কাছ থেকে জানতে পারেন প্রতি বছরই পাহাড়ি ঢলে খরচার হাওর ও আঙ্গারুলি হাওর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসময় কৃষকরা রাবার ড্যাম নির্মাণের পরামর্শ প্রদান করেন। হাওরবাসীর মতামত ও বিএডিসি’র গবেষণাসহ স্থানীয় রাজনীতিবিদদের দাবির প্রেক্ষিতে সরকার রাবার ড্যাম নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। আজ সেই উদ্যোগ আনুষ্ঠানিকভাবে বাস্তবায়ন হতে হচ্ছে।
বাঁধটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হওয়ায় নদীর ভাটিতে অবস্থিত আঙ্গারুলি ও খরচার হাওরের প্রায় সাড়ে ৭ হাজার হেক্টর জমির বোরো ফসল নির্বিঘেœ গোলায় তোলতে পারবেন প্রায় ৫০ হাজার কৃষক। ফলে প্রতিবছর প্রায় কোটি টাকা ব্যয় করে ফসল রক্ষার জন্য মাাটির বাঁধ নির্মাণ করতে হবে না পানি উন্নয়ন বোর্ডকে। সেইসাথে প্রকল্পের সঙ্গে একটি সেতু থাকায় নদীর দুই পাড়ের কয়েকটি গ্রামের মানুষের মাঝে সরাসরি সড়ক যোগাযোগও স্থাপন হচ্ছে। এতে এলাকার আর্থ-সামাজিক উন্নতিও হবে।
বিএডিসি সূত্র আরো জানায়, চৈত্র থেকে জ্যৈষ্ঠ মাসে বোরো ফসল তোলার সময়টাতে ১২০মিটার লম্বা ও ৪ মিটার উচ্চতার অতিকায় রাবারের ব্যাগ বাতাস দিয়ে ফুলিয়ে নদীতে কৃত্রিম বাঁধ দেওয়া হবে। ফসল তোলা শেষে বর্ষায় বাতাস ছেড়ে দিয়ে নদীর পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে আসা হবে। সংশ্লিষ্টদের মতে সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হলে বোরো ফসল রক্ষার ক্ষেত্রে আগামী ৩০ থেকে ৪০ বছর পর্যন্ত এটি কার্যকর থাকবে। হাওরের ফসল পাহাড়ি ঢল থেকে রক্ষা পেলে এলাকার কৃষি অর্থনীতির উন্নতি হবে।
স্থানীয় কৃষক জহুরুল আলম বলেন, আগে পানি উন্নয়ন বোর্ড ফসল রক্ষার জন্য মিছখালি বাঁধে প্রতিবছর কোটি টাকা ব্যয় করত। দুর্নীতির কারণে ঠিকমতো বাঁধের কাজ করা হতো না। যার ফলে বন্যার চাপ একটু বেশি হলে বাঁধ ভেঙে দু’টি হাওরের বোরো ফসল পানিতে তলিয়ে যেতো।
স্থানীয় বাসিন্দা এরশাদ আহমদ জানান, রাবার ড্যাম হওয়াতে আমরা লাভবান হচ্ছি। এখন ফসল রক্ষার পাশাপাশি যোগাযোগ উন্নয়নে বিরাট ভূমিকা রাখবে।
সিলেট বিএডিসির নির্বাহী প্রকৌশলী প্রণজিৎ দেব বলেন, মিছাখালি রাবার ড্যাম নির্মাণের ফলে এই এলাকার কৃষি অর্থনীতির অনেক বড় উপকার হবে। দুটি হাওরের ৭০ কোটি টাকার ফসল রক্ষা পাবে। উপকৃত হবে প্রায় ৫০ হাজার কৃষক। তাছাড়া আশপাশের হাওরও এই রাবারড্যামটির কারণে উপকৃত হবে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।