মো. আমিনুল ইসলাম ::
সুনামগঞ্জ শহরের শপিং সেন্টারগুলোতে জমে উঠেছে ঈদের কেনাকাটা। মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করেই বিপণি বিতানগুলোতে এখন ক্রেতাদের ভিড়। সকাল থেকে শুরু করে বেশ রাত পর্যন্ত চলছে কেনাকাটার ধুম। আর বিক্রেতারা ক্রেতাদের পছন্দ অনুযায়ী পোশাক সরবরাহে পার করছেন ব্যস্ততম সময়। এবারের ঈদে শহরের সুরমা হকার্স সমবায় মার্কেট, লন্ডন প্লাজা, দ্দোজা শপিং সেন্টার, নেজা প্লাজা, ইউনাইটেড শপিং সেন্টার, মৌলা বকস শপিং সেন্টার, এলি প্লাজা, প্রিয়াঙ্গন মার্কেটসহ সবগুলো মার্কেটে ক্রেতাদের ভিড় চোখে পড়ার মতো। তবে ক্রেতাদের অভিযোগ, এবার পোশাকের মূল্য অন্য বারের চেয়ে কয়েকগুন বেশি। যে কারণে সাধ হলেও সাধ্যের মধ্যে না থাকায় পোশাক কিনতে অনেকটাই ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে তাদেরকে। অন্যদিকে ব্যবসায়ীদের দাবি এবছর অন্যবারের চেয়ে পোশাকের গুণগত মান ভালো হওয়ার কারণে দামটাও ‘সেইরকম’ই নিতে হচ্ছে। তবে তারা অতিরিক্ত দামে বিক্রি করছেন না বলে দাবি করেছেন।
শহরের আলফাত স্কয়ার এলাকার দ্দোজা শপিং সেন্টারের ব্যবসায়ীরা জানান, এই শপিং সেন্টারে ছেলেদের বিভিন্ন ধরনের প্যান্ট বিক্রি হচ্ছে সর্বনি¤œ ১ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত মূল্যে। এছাড়া শার্ট ৬শত টাকা থেকে ৯শত টাকা, পাঞ্জাবী ১১শ টাকা থেকে ১৫শ টাকা, মহিলাদের বিভিন্ন ধরনের শাড়ি সর্বনি¤œ ৪০০টাকা থেকে শুরু করে ৩৪হাজার টাকা, লুঙ্গি ২৫০ টাকা থেকে ৯শ টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি হচ্ছে।
শহরের নেজা প্লাজার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা হলে তাঁরা জানান, ছেলেদের বিভিন্ন ধরনের প্যান্ট বিক্রি হচ্ছে সর্বনি¤œ ৬শ টাকা থেকে শুরু করে ২হাজার ৪শ টাকা পর্যন্ত মূল্যে। এছাড়া শার্ট ৫০০টাকা থেকে ১৫শ টাকা, পাঞ্জাবী ৮শ টাকা থেকে ১হাজার ৯শ টাকা, মহিলাদের বিভিন্ন ধরনের থ্রিপিস ১৫শ টাকা থেকে ৫হাজার টাকা, ‘শাহারা’ ২৫শ টাকা থেকে ৫হাজার টাকা, শাড়ি ৫শ টাকা থেকে ২০হাজার টাকা, রাজরাণী ২ হাজার টাকা থেকে সাড়ে ৪হাজার টাকা, মহারাণী ২ হাজার টাকা থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা, শিশুদের বাজিরাও মাস্তানি ১৫শ টাকা থেকে শুরু করে আড়াই হাজার টাকা, লেডিস জিন্স প্যান্ট ৩শ টাকা থেকে ১২শ টাকা পর্যন্ত মূল্যে বিক্রি হচ্ছে।
মুক্তারপাড়া এলাকার লন্ডন প্লাজার ব্যবসায়ীদের তথ্য অনুযায়ী, ছেলেদের প্যান্ট বিক্রি হচ্ছে ৭শ টাকা থেকে আড়াই হাজার টাকা মূল্যে। পাশাপাশি শার্ট বিক্রি হচ্ছে ৭শ টাকা থেকে ১৭শ টাকায়, পাঞ্জাবী ৭শ টাকা থেকে ২২শ টাকায়, শাড়ি ৪শ টাকা থেকে শুরু করে ৪৬ হাজার টাকা মূল্যে বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া সুরমা হকার্স সমবায় মার্কেটে ছেলেদের শার্ট বিক্রি হচ্ছে ৫শ টাকা থেকে ১৬শ টাকা মূল্যে, প্যান্ট ৭শ টাকা থেকে ২২শ টাকা, পাঞ্জাবী ৫শ টাকা থেকে ৩২শ টাকা, শাড়ি ৪শ টাকা থেকে ১০হাজার টাকা, লেহেঙ্গা ২ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা, সাহারা ২ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত মূল্যে।
শপিং সেন্টারগুলোতে চড়া মূল্য ও পোশাক ক্রয়ে ভোগান্তির কথা উল্লেখ করে ক্রেতা শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বাজারে এসেছিলাম পরিবারের সবাইকে নিয়ে ঈদের কেনাকাটা করতে, যেভাবে ব্যবসায়ীরা তাদের ইচ্ছেমাফিক দাম নির্ধারণ করেছে তা শুনেই কেনাকাটার বারোটা বেজে গেছে। এবার কিনবো কি? পোশাকের যে মূল্য তা অন্যান্যবারের চেয়ে কয়েকগুন বেশিই মনে হচ্ছে। এ ব্যাপারে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।
শহরের জেলরোড এলাকার বাসিন্দা সানায়াত উল্লাহ বলেন, ‘ঈদের কেনাকাটা করতে এসে দর-দাম নিয়ে এক রকম বিপদেই পড়েছি। যারা দোকানে একদরে পোশাক বিক্রি করছেন তাদের সাথে বেশি কথা বলা লাগে না। কিন্তু যারা ইচ্ছেমতো মূল্য দিয়ে পোশাক বিক্রি করছেন তারা দাম কমাতেই চায় না। পছন্দ হলেও পরে আর কেনা সম্ভব হচ্ছে না’।
লন্ডন প্লাজার পোশাক ব্যবসায়ী লিটন চৌধুরী বলেন, ‘সারা বাংলাদেশে যেভাবে পোশাকের রয়েছে, সে অনুযায়ীই বিক্রি করছি। ক্রেতারা তাদের পছন্দ অনুযায়ী ক্রয় করছেন। পোশাকের অতিরিক্ত মূল্যের যে অভিযোগ উঠেছে সেটা নিয়েও ভাবা উচিত। কারণ অন্যান্য বারের চেয়ে এবার বাজারে পোশাকের গুণগত মান ভালো’।
সুরমা হকার্স সমবায় মার্কেটের ব্যবসায়ী মেহেদী হাসান মৃদুল বলেন, ‘আমরা কোন পোশাকেরই অতিরিক্ত মূল্য রাখছি না, এক এক শপিং সেন্টারে এক এক ধরণের পোশাক আসে, পোশাকের কোয়ালিটি বলেও একটা কথা আছে, আমরা সে অনুযায়ি মূল্য নির্ধারণ করে থাকি, বর্তমানে কেনাকাটা কেবল জমে উঠেছে। বাজারে আরো ভালো ভালো পোশাক আসছে। আমরা মনেকরি এবারের ঈদে ভালোমানের পোশাক বাজারে এসেছে। শেষ রমজান পর্যন্ত ক্রেতাদের কেনাকাটা এবং আমাদের বিক্রি ভালোই হবে বলে আশা করছি।’
দ্দোজা শপিং সেন্টারের ব্যবসায়ী মহিবুর আলম শাওন বলেন, ‘আমরা ক্রেতাদেরকে সবচেয়ে ভালোমানের পোশাকটি সরবরাহ করছি। ভালো কোয়ালিটির পোশাকের দামটাও অন্যান্য পোশাকের চেয়ে একটু বেশি হয়। অন্যান্য বারের চেয়ে এবার বাজারে গুণগত মানসম্পন্ন পোশাক এসেছে। আমরা ন্যায্য মূল্যেই বিক্রি করছি। পোশাকের মূল্য ক্রেতাদের সাধ্যের মধ্যেই রয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।’