১. রমজানের ২০ তারিখ সূর্যাস্তের পূর্বেই ইতিকাফের নিয়তে মসজিদে উপস্থিত হতে হয়। প্রথম থেকেই পুরো দশদিন ইতিকাফ করার নিয়ত করতে হবে। এক সাথে দশদিনের নিয়ত না করলে সুন্নত ইতিকাফ আদায় হবে না বরং তা নফলে পরিণত হবে।
২. পারিশ্রমিকের বিনিময়ে ইতিকাফ করা বা করানো উভয়টিই না জায়িজ। এতে ইতিকাফ আদায় হয় না (ফাতাওয়া শামী ১/১৫৬)।
৩. ইতিকাফ সহীহ হওয়ার জন্য ওয়াকফকৃত মসজিদ হওয়া জরুরি। জামে মসজিদ হোক বা পাঞ্জেগানা মসজিদ হোক উভয়টিতেই ইতিকাফ করা যায়। কিন্তু অস্থায়ী মসজিদে যেমন মনে করুন কোথাও মসজিদের নির্মাণ কাজ চলছে বিধায় আপাতত কোন ঘরে বা মাঠে কিংবা অন্য কোথাও নামাজ পড়া হচ্ছে এমন অস্থায়ী মসজিদে ইতিকাফ করা সহীহ নয় (ফাতাওয়া শামী ১/১৫৮)।
৪. ইতিকাফকারী বাথরুমের প্রয়োজন সবার জন্য এবং অজু ও ফরজ গোসল করার জন্য মসজিদ থেকে বের হতে পারবেন। এগুলো ছাড়া অন্য কোন কারণে মসজিদ থেকে বের হতে পারবেন না। এতে ইতিকাফ নষ্ট হয়ে যাবে। যেমন কাপড় ধৌত করার জন্য কিংবা কাপড় শুকানোর জন্য অথবা মসজিদের বাইরে রাখা কোন বস্তু মসজিদের ভিতরে আনার জন্য বা ধূমপান ইত্যাদি করার জন্য আদৌ মসজিদের বাইরে যাওয়া জায়িজ নয়। এতে ইতিকাফ ভেঙ্গে যাবে। (ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২১৪)।
৫. ফরজ গোসল ছাড়া স্বাভাবিক গোসলের জন্য মসজিদ থেকে বের হওয়া জায়িজ নয়। তবে খুব বেশি প্রয়োজন দেখা দিলে প্র¯্রাব-পায়খানার জন্য বের হয়ে জরুরত থেকে ফারেগ হওয়ার পর অজু না করে অজুর সময়ের মধ্যে খুব তাড়াতাড়ি করে গোসল সেরে নিতে পারবে। তবে অজুর চেয়ে বেশি সময় ব্যয় করা যাবে না। এমনিভাবে জানাজার নামাজ পড়ার জন্য মসজিদ থেকে বের হতে পারবেন না। এতেও ইতিকাফ নষ্ট হয়ে যাবে। আহসানুল ফাতাওয়া ৪/৫১৫।
৬. মসজিদ এক তলা হোক বা বহু তলা বিশিষ্ট হোক সর্বাবস্থায় মসজিদের ছাদে ইতিকাফকারী যেতে পারবে। কিন্তু উপরে যাওয়ার জন্য যদি মসজিদ থেকে বের হতে হয় অর্থাৎ সিঁড়ি যদি মসজিদের ভিতরে না হয়ে বাইরে হয় তাহলে উপরে যাওয়া যাবে না। গেলে ইতিকাফ ভেঙে যাবে। এমনিভাবে মসজিদের বারান্দায় যদি মসজিদের অন্তর্ভুক্ত না হয় অর্থাৎ নির্মাণের সময় যদি বারান্দাকে মসজিদের অংশ মনে করা না হয়ে থাকে তাহলে ইতিকাফকারী সেখানেও যেতে পারবে না। গেলে ইতিকাফ নষ্ট হয়ে যাবে কাতাওয়া আলমগীরী ১/২২১।
৭. বিনাপ্রয়োজনে এক মুহূর্ত সময় মসজিদের বাহিরে থাকলে ইতিকাফ ভেঙে যাবে। কোন কোন ইতিকাফকারী অজানা বশতঃ বিড়ি-সিগারেট বা ধূমপানের জন্য মসজিদের বাহিরে এসে এসব কাজ করে থাকেন। এতে ইতিকাফ ভেঙে যাবে। তাই এসব কাজ অবশ্যই পরিজার করতে হবে। ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২১২।
৮. কোন কারণে রোজা ভেঙে গেলে অথবা রোজা রাখতে না পারলে ইতিকাফ ভেঙে যাবে। কারণ সুন্নত ও ওয়াজিব ইতিকাফের জন্য রোজা শর্ত। রোজা ছাড়া তা আদায় হয় না। ফাতাওয়া শামী ২/৪৪২।
৯. প্র¯্রাব-পায়খানা বা অজু করার জন্য মসজিদের বাইরে গিয়ে অন্য কোন কাজে সময় ব্যয় করলে যেমন গল্পগুজবে লিপ্ত হলে বা কাপড়-চোপড় আনা-নেওয়া করলে কিংবা বিড়ি-সিগারেট পানে সময় কাটালে ইতিকাফ ভেঙে যাবে। আল-বাহরুর রায়েক ২/৩০২।
ইতিকাফ যেহেতু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আমল এবং তার মর্যাদা অপরিসীম তাই সহীহ শুদ্ধ করে ইতিকাফ করতে হবে। নতুবা কঠোর কষ্টের ইতিকাফ মাসআলা জানা না থাকার কারণে বিনষ্ট হয়ে যাবে। তাই উপরে কয়েকটি মাসআ উল্লেখ করা হলো। মহান আল্লাহ আমাদের সঠিকভাবে ইতিকাফ করার তৌফিক দান করুন। আমিন। (চলবে)