মো. শাহজাহান মিয়া ::
প্রতি বছর ঈদ উৎসব উপলক্ষে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য সরকার সারাদেশে ন্যায্যমূল্যে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি’র) পণ্য খোলাবাজারে বিক্রি করে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় জগন্নাথপুরেও নির্দিষ্ট ডিলারগুলোর মাধ্যমে বিক্রি করা হয় টিসিবি’র পণ্য। অন্যান্য বছর টিসিবি’র পণ্য খোলাবাজারে বিক্রি হলেও এবার জগন্নাথপুরে বিক্রি হয়নি। অভিযোগ উঠেছে এবারের টিসিবি’র পণ্য উন্নতমানের হওয়ায় অতিরিক্ত লাভে চোরাই পথে বিক্রি করে দিয়েছেন ডিলাররা। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন দরিদ্র গোষ্ঠির জনসাধারণ। এ নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্নের দেখা দিয়েছে। যদিও ডিলারদের দাবি এবার তাদেরকে চাহিদা অনুযায়ী পণ্য বরাদ্দ দেয়া হয়নি।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, জগন্নাথপুরে টিসিবি’র ডিলার মোট ৫ জন। এর মধ্যে জগন্নাথপুর পৌর শহরের জন্য ডিলার ফজলু মিয়া ও গিয়াস উদ্দিন। এর মধ্যে গিয়াস উদ্দিন বিদেশ চলে গেছেন। উপজেলার রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের জন্য ডিলার ধণেশ চন্দ্র রায়, সুহেল আহমদ ও জবরুল ইসলাম। তবে উপজেলার আর কোন ইউনিয়নে ডিলার নেই। এবার সরকার ঈদুল ফিতর উপলক্ষে টিসিবি’র পণ্য হিসেবে উন্নত মানের খেজুর, চিনি, সয়াবিন তেল, মসুরি ডাল, ছোলা ইত্যাদি প্রদান করে। এর মধ্যে গত প্রায় দুই সপ্তাহ আগে রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের ডিলার ধণেশ চন্দ্র রায় ও সুহেল আহমদ টিসিবি’র পণ্য সয়াবিন, মশুরী ও ছোলা উত্তোলন করেন। এবার সরকার টিসিবি’র নায্যমূল্য নির্ধারণ করে প্রতি লিটার সয়াবিন ৭৫ টাকা। যা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৮৫ থেকে ৯০ টাকা। প্রতি কেজি মসুরি ডাল নির্ধারণ করা হয় ৮৭ টাকা। যা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা। প্রতি কেজি ছোলা নির্ধারণ করা হয় ৬৯ টাকা। যা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা। ডিলারগুলো টিসিবি’র মাত্র ৩ পদের পণ্য উত্তোলন করলেও বাকি পদগুলো উত্তোলন করেনি।
এ ব্যাপারে স্থানীয় ভুক্তভোগী লোকজন অভিযোগ করে বলেন, এবার সরকারি টিসিবি’র পণ্য উন্নতমানের হওয়ার কারণে ডিলাররা মাল উত্তোলন করে চোরাই পথে বিক্রি করে দিয়েছেন। যে কারণে আমরা এবার কোন পণ্য কিনতে পাইনি। এছাড়া রমজান মাস প্রায় শেষ হয়ে আসলেও এবার জগন্নাথপুর পৌর শহরে কোন ডিলার টিসিবি’র পণ্য বিক্রি করতে দেখা যায়নি। অন্যান্য বছর টিসিবি’র পণ্য কিনতে পেলেও এবার কোন পণ্য না পাওয়ায় হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরছেন সাধারণ মানুষ। তবে কি কারণে এবার তারা টিসিবি’র পণ্য পাচ্ছেন না, তা সঠিকভাবে কেউ কিছু না বলায় নিরাশ হয়ে পড়েছেন ক্রেতারা।
এ ব্যাপারে রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের ডিলার ধণেশ চন্দ্র রায় জানান, এবার সরকার চাহিদা অনুযায়ী পণ্য বরাদ্দ দেয়নি। বিষয়টি সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক অবগত আছেন। এরপরও আমাকে মাত্র ৩০০ কেজি ও ডিলার সুহেল আহমদকে ৩০০ কেজি পণ্য বরাদ্দ দেয়া হয়। তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমাদেরকে সামান্য পণ্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। যা উত্তোলনের সাথে সাথে বিক্রি হয়ে গেছে। চোরাই পথে বিক্রি করার প্রশ্নই উঠে না।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ হুমায়ূন কবির জানান, কি কারণে টিসিবি’র পণ্য বিক্রি হচ্ছে না, তা আমি খোঁজ-খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেবো।