স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়ন বিষয়ে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শনিবার বিকেলে শহরের ইপিআই ভবনে এ সভার আয়োজন করা হয়।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)’র অনুপ্রেরণায় গঠিত সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) ও সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের যৌথ উদ্যোগে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভার শুরুতেই সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মো. রফিকুল ইসলামের পিতার মৃত্যুতে মরহুমের আত্মার শান্তি কামনা করে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
পরে সনাক সভাপতি নুরুর রব চৌধুরীর শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন।
টিআইবি’র এরিয়া ম্যানেজার বিন্দু রিছিল সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতাল সম্পর্কিত সনাক ও ইয়েস-এর পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন ও সুপারিশমালা উপস্থাপন করেন।
সনাক পর্যবেক্ষণে উল্লেখযোগ্য যে সমস্যাগুলো তুলে ধরা হয়েছে তা হল- হাসপাতালে ডাক্তার, নার্সসহ অন্যান্য স্টাফের স্বল্পতা, ঔষধ স্বল্পতা ও বাইরে থেকে ক্রয়, কিছু চিকিৎসকের অনিয়মিত উপস্থিতি, ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের দৌরাত্ম্য বৃদ্ধি, পানির সংকট, দৈনন্দিন ঔষধের তালিকা হালনাগাদ না থাকা এবং ডাক্তার নার্সদের ডিউটি রোস্টার দৃশ্যমান জায়গায় না রাখা ইত্যাদি। এছাড়াও পর্যবেক্ষণে অগ্রগতির যে বিষয়গুলো পরিলক্ষিত হয়েছে তা হল- আধুনিক ল্যাপপ্রোস্কোপ মেশিন স্থাপন, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, চোখের কম্পিউটারাইজড চিকিৎসা এবং হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হওয়া ইত্যাদি।
মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণকারীগণ সদর হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা সম্পর্কিত তাদের মতামত অভিযোগ সুপারিশ তুলে ধরেন।
সাবেক পৌর কাউন্সিলর কলি তালুকদার বলেন, সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের সেবার মান এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা আগের তুলনায় উন্নতি হয়েছে। কিন্তু নারীদের জন্য বিশেষভাবে গর্ভবতী মাদের জন্য বসার কোন ব্যবস্থা নাই। এছাড়াও যে দুটি ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার স্থাপন করা হয়েছে তা অনেক সময় বন্ধ থাকে বা ব্যবহার অনুপযুক্ত।
মুক্তিযোদ্ধা মো. শহিদুর রহমান বলেন, আমরা জানি সরকারি হাসপাতালে মুক্তিযোদ্ধাদের বিনাপয়সায় চিকিৎসা হয়। কিন্তু এই হাসপাতালে আমি পাইনি। তাছাড়া তিনি বলেন, হাসপাতালের অনেক ওয়ার্ড অপরিষ্কার এবং টয়লেট ব্যবহার অনুপযুক্ত ও কোন দরজা নেই, মশার উৎপাত বেশি।
মুক্ত আলোচনায় অন্যান্যদের মধ্যে অংশগ্রহণ করেন সদর হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. বিশ্বজিৎ গোলদার, সনাক সদস্য ধূর্জটি কুমার বসু, যোগেশ্বর দাস, সঞ্চিতা চৌধুরী, অ্যাড. নাজনীন বেগম, কানিজ সুলতানা, মো. আকরাম উদ্দিন, আব্দুল শহীদ, সানজিদা খানম, স¤্রাট মিয়া, মুজাহিদুল ইসলাম মজনু, ইয়েস দলনেতা আসাদুজ্জমান প্রিয়ন ও আবু সাঈফ খান প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিভিল সার্জন ডা. মো. আবদুল হাকিম বলেন, আমরা সীমিত জনবল ও সম্পদ নিয়ে জনগণের সর্বোত্তম সেবা প্রদানে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। হাসপাতালের সেবার মান উন্নয়ন করতে হলে সেবাগ্রহিতা ও সেবাদাতার মধ্যে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করতে হবে। তিনি সনাক ও ইয়েস পর্যবেক্ষণের সাথে একমত পোষণ করে বলেন, হাসপাতালের সমস্যাগুলো তুলে ধরলে আমরা সে অনুযায়ী সমাধানে ব্যবস্থা করতে পারি। তবে অনেক সমস্যা আছে যেগুলো দ্রুত সমাধান করা সম্ভব নয়। রমজানের পরেই ইনডোর আউটডোরে চিকিৎসকগণ রুটিন মাফিক বসে রোগী সেবা প্রদান করার আশ্বাস ব্যক্ত করেন। এছাড়া অন্যান্য সমস্যাগুলো আসতে ধীরে সমাধান করা হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ এবং সুনামগঞ্জ সনাকের স্বাস্থ্য উপকমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক পরিমল কান্তি দে। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি