সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
বাংলাদেশের প্রতিটি জেলার আলাদা আলাদা ইতিহাস, সংস্কৃতি, ভৌগোলিক অবস্থান, জীবন-জীবিকা, আঞ্চলিক ভাষাসহ নানা তথ্য নিয়ে দীর্ঘ কয়েক বছর পর চলতি বছরের জুলাই মাসে দু’টি জেলার গেজেটিয়ার প্রকাশ হবে।
গণমাধ্যমকে এমন কথা জানান পরিসংখ্যান ও তথ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোল্লা মিজানুর রহমান।
১৯৯৮ সালে সংস্থাপন মন্ত্রণালয়কে আলাদা শাখায় পরিবর্তন করা হলে পরিসংখ্যান ও তথ্য বিভাগ জেলা গেজেটিয়ার প্রকাশের দায়িত্ব পায়। তবে সরকারের এ বিভাগের অভিজ্ঞতা না থাকা এবং টেকনিক্যাল সমস্যা থাকায় দীর্ঘদিন বন্ধ থাকে
জেলা গেজেটিয়ার সংস্কার ও প্রকাশ- এমনটাই বললেন মিজানুর রহমান।
তিনি বলেন, ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ দেশের সাত বিভাগের ৭টি জেলার গেজেটিয়ার প্রকাশের জন্য পাইলট প্রকল্পের উদ্যোগ নেয়।
পাইলট প্রকল্পে রয়েছে- খুলনা বিভাগের খুলনা জেলা, ঢাকা বিভাগের ময়মনসিংহ, সিলেট বিভাগের সিলেট, বরিশাল বিভাগের বরিশাল, রাজশাহী বিভাগের বগুড়া জেলা, রংপুর বিভাগের দিনাজপুর এবং চট্টগ্রাম বিভাগের রাঙ্গামাটি।
এসব জেলার পান্ডুলিপির কাজ প্রায় শেষ। কিন্তু তা জুলাই মাসে প্রকাশ হবে না। চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসে প্রাথমিক প্রকল্পের জেলার গেজেটিয়ার প্রকাশ হবে। তবে চলতি বছরের জুলাই মাসে খুলনা ও রাঙ্গামাটি জেলা গেজেটিয়ার প্রকাশ হবে বলে জানান পরিসংখ্যান ও তথ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোল্লা মিজানুর রহমান।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে খুলনা ও রাঙ্গামাটি এ দু’জেলার গেজেটিয়ার খসড়া তৈরি হয়ে গেছে। এছাড়া সিলেট, ময়মনসিংহ, দিনাজপুর ও বগুড়া এ চার জেলার অধিকাংশ কাজ প্রায় শেষ। তবে বরিশাল জেলার গেজেটিয়ার তৈরি হতে একটু সময় লাগবে।
জেলা গেজেটিয়ার পাইলট প্রকল্পের কাজ শেষ হলে নতুন প্রজেক্ট নিয়ে কিংবা নিয়মিত বাজেটের সঙ্গে প্রতি বছর এক বা দু’টি জেলার গেজেটিয়ার বের করা হবে বলে জানা যায়। প্রতিটি জেলার গেজেটিয়ার ২৭টি অধ্যায় থাকবে। তবে কিছুটা নামের পরিবর্তন আসতে পারে। নতুন চ্যাপটারও যুক্ত হতে পারে যেমন- অভিবাসন, জীবন-জীবিকা, সাংবাদিকতা, গণমাধ্যম ইত্যাদি বিষয়।
এদিকে জেলা গেজেটিয়ার অধ্যায়ের (প্রতিটি অধ্যায়ের আলাদা মন্ত্রণালয়) জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মতামত চলমান রয়েছে।
জেলা গেজেটিয়ারে প্রতিটি জেলার অবস্থান, ভৌগোলিক অবস্থান, জলবায়ু, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য, বাসস্থান, জীব-বৈচিত্র্য, নদ-নদী, ভাষা, ধর্ম-বর্ণ, সংস্কৃতি, কৃষি কার্যক্রম, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, ঐতিহাসিক স্থান ও মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সব বিষয়সহ সার্বিক অবস্থা তুলে ধরা হবে। যেখানে বাংলাদেশের শুরু থেকে বর্তমান সময়ের নানা তথ্য দেওয়া থাকবে। সেখানে মুঘল আমল বা তার আগের সময়ের সামাজিক, ভৌগোলিক, সংস্কৃতি, ভাষাসহ নানা বিষয়ের তথ্য জেলা গেজেটিয়ায় থাকবে।
জেলা গেজেটিয়ার প্রকাশের ক্ষেত্রে সব তথ্য সঠিক কিনা তা যাচাই বাছাইয়ের জন্য চার ধরনের কমিটি রয়েছে। প্রতিটি কমিটি সব তথ্য সঠিক বলে মত দিলে গেজেটিয়ার ছাপা হবে। জেলা গেজেটিয়ার প্রকাশে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে। সঠিক তথ্য দিয়ে জেলা গেজেটিয়ার তৈরির জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এক সঙ্গে কাজ করছেন।
জেলা গেজেটিয়ার প্রধান স¤পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. কামাল আবদুল্লা চৌধুরী।
বাংলাদেশের ইতিহাস বিশ্বময় ছড়িয়ে দিতে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ ইন্টারনেটে দেশের সকল জেলার গেজেটিয়ার প্রকাশ করার কথা ভাবছে বলে জানান মিজানুর রহমান।
ইন্টারনেটে জেলা গেজেটিয়ার প্রকাশের উদ্যোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অনলাইনে দেওয়ার সিদ্ধান্ত এখনো চূড়ান্ত নয়। তবে বর্তমানে সব কাজ যেহেতু অনলাইনে হয়, সেক্ষেত্রে জেলা গেজেটিয়ার অনলাইলে অবশ্যই আসবে, আমরা আশা করছি।
প্রাথমিক পর্যায়ে এক হাজার কপি জেলা গেজেটিয়ার ছাপা হবে। যার মধ্যে কিছু সাধারণ জনগণের কাছে বিক্রি করা হবে।
ইংরেজ শাসনের সময় প্রথম জেলা গেজেটিয়ার প্রকাশ হয়। এরপর ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের ১৩টি জেলার গেজেটিয়ার প্রকাশ করা হয়েছিল।
এছাড়া স্বাধীনতার পর বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ, বগুড়া, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ঢাকা, দিনাজপুর, ফরিদপুর, যশোর, খুলনা, কুষ্টিয়া, ময়মনসিংহ, নোয়াখালী, পাবনা, পটুয়াখালী, রাজশাহী, রংপুর, সিলেট ও টাঙ্গাইলের জেলা গেজেটিয়ার স¤পন্ন হয়।
১৯৮১ সালে বাংলাদেশে প্রথম জেলা গেজেটিয়ার হয় কুমিল্লায়। সর্বশেষ ১৯৯৩ সালে প্রকাশ হয় ঢাকা জেলা গেজেটিয়ার।