সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
একটি মাদ্রাসার শিক্ষক আল-আমিন খায়ের। দুই সন্তান ও স্ত্রী নিয়ে তার সংসার। ঈদুল ফিতরের উৎসব ঘনিয়ে এলেও এখনো সন্তান ও স্ত্রীর জন্য কিছুই কিনতে পারেননি। কারণ তার হাতে ঈদ বোনাস ও জুন মাসের বেতন কোনোটিই পৌঁছায়নি। কবে পৌঁছবে সেটিও তিনি জানেন না। ফলে এক অনিশ্চিত সময় পার করছেন।
শিক্ষক বলে সমাজে কারও কাছে হাতও পাততে পারেন না এই মানুষ গড়ার কারিগর। ফলে অব্যক্ত যন্ত্রণা সঙ্গী হয় প্রায়ই। শুধু এবারের ঈদের নয়, প্রতি বছর ঈদের সময় এমনটা ঘটে। গত বছর বেতন-বোনাস পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তার যন্ত্রণা কিছুটা লাঘব হয়েছিল শেষ সময়ে এসে বেতন
পেয়েছিলেন বলে। এবার যেন সেটিও হবে না। কারণ ঈদের আগে আর মাত্র পাঁচ দিন সরকারি কার্যদিবস।
এই অনিশ্চিত অবস্থা শুধু শিক্ষক আল-আমিনের একার নয়; বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার প্রায় পাঁচ লাখ শিক্ষক-কর্মচারীর ভাগ্য একই রকম। এবারের ঈদ উৎসব উদযাপন নিয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছেন তারা। এ ঘটনায় ক্ষোভ আর উৎকণ্ঠা দানা বাধছে শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে। তাদের ভাষ্য, এবারের ঈদ উৎসব উদ্যাপন কি তাদের কপালে নেই। ছেলে-মেয়েদের কীভাবে সান্ত¦না দেবেন তারা।
জানা গেছে, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এসব শিক্ষক নতুন নাকি পুরনো স্কেলে এবার ঈদের বোনাস পাবেন, সেই সিদ্ধান্তই এখনো হয়নি। বিষয়টি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) এবং মন্ত্রণালয়ের মধ্যে চিঠি চালাচালির পর্যায়ে রয়েছে।
মাউশি সূত্র জানায়, শিক্ষকদের ঈদের বোনাসের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সময় লাগবে আরও দুই-তিন দিন। এতে করে শিক্ষকরা শেষ পর্যন্ত বোনাস ঈদের আগে হাতে পাবেন কি না সেই সংশয় থেকে যায়। এ ছাড়া শিক্ষকদের জুন মাসের বেতন এখনো ছাড় হয়নি। ঈদের আগে বেতন পাওয়া নিয়েও রয়েছে বাড়তি সংশয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাউশির পরিচালক (মাধ্যমিক) এলিয়াছ হোসাইন বলেন, “এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নতুন স্কেলে বোনাস দেয়া হবে, নাকি পুরনো স্কেলে দেয়া হবে, সেই সিদ্ধান্ত জানতে আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় অর্থ সংশ্লেষের বিষয়টি জানতে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে। চিঠির জবাব আমরা এখনো পাইনি “এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগামী দুই-এক দিনের মধ্যেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।”
হিসাব করে দেখা যাচ্ছে, ঈদের আর বাকি মাত্র ১২ দিন। এর মধ্যে কর্মদিবস পাঁচ দিন। শুক্র, শনিবার বন্ধ। রবি ও সোমবারে যদি মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত দেয় তাহলে বেতন ছাড় ও শিক্ষকদের অ্যাকাউন্টে অর্থ হস্তান্তর তিন দিনে সম্ভব নয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কারণ প্রথমে মাউশি অর্থ ছাড় করবে। এরপর এই টাকা সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে হস্তান্তর হবে। এই প্রক্রিয়া শেষ করতে ন্যূনতম এক সপ্তাহ দরকার। ফলে শিক্ষকরা ঈদের আগে বেতন ও বোনাস পাওয়া নিয়ে অনিশ্চিয়তার দোলাচলে রয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, ঈদ উপলক্ষে স্বাভাবিকভাবেই ব্যাংকগুলোতে বাড়তি চাপ থাকে। আর শেষ সময়ে এসে অর্থ ছাড় হলেও ব্যাংকের পক্ষে সম্ভব হয় না ঠিক সময়ে গ্রাহকের হাতে সেই টাকা পৌঁছানো।
এক প্রশ্নের জবাবে ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, অধিদপ্তর টাকা ছাড় করলে প্রথমে সেই টাকা জেলার সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে আসে। এরপর এই টাকা ব্যাংকের উপজেলা শাখায় হস্তান্তর করা হয়। এই প্রক্রিয়া স¤পন্ন করতে তিন থেকে চার দিন সময় লেগে যায়।
এ কারণে শিক্ষকরা বেতন পান পরের মাসের ১০-১২ তারিখে। কিন্তু এবার ঈদের আগে ৩০ জুন শেষ কার্যদিবস। তাই ত্বরিত কোনো পদক্ষেপ না নিলে শিক্ষকদের বেতন পাওয়া অনিশ্চিত হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক বেসরকারি শিক্ষাপতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ বলেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ২৬ জুনের মধ্যে দেয়ার নির্দেশনা রয়েছে। এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপনও জারি হয়েছে। বেরসরকারি শিক্ষকদের বেতন ও ২৬ জুনের মধ্যে দেয়ার অনুরোধ জানান তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, “আমরা কম সময়ের মধ্যে শিক্ষকদের বেতন-বোনাস দেয়ার চেষ্টা করছি। অর্থ মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত দিলেই আমরা এ বিষয়ে ত্বরিত পদক্ষেপ নিব, যাতে শিক্ষকরা অল্প সময়ের মধ্যে টাকা পেতে পারেন।”