সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদনের শুনানি কবে হবে তা ঠিক করার জন্য আগামী ২৫ জুলাই দিন ধার্য করেছেন চেম্বার জজ আদালত। একই সঙ্গে আবেদনটি শুনানির জন্য পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।
রিভিউয়ের দিন ধার্য করতে মঙ্গলবার সকালে আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা আবেদন করেন। রিভিউ আবেদনের দ্রুত শুনানির আর্জি জানানো হয়।
১৯ জুন (রোববার) মীর কাসেম আলীর মৃত্যুদন্ড থেকে খালাস চেয়ে ১৪টি যুক্তি দেখিয়ে ৮৬ পৃষ্ঠার রিভিউ আবেদন দাখিল করেন তার ছেলে আইনজীবী মীর আহমেদ বিন কাসেম।
এর আগে গত ৬ জুন মীর কাসেমের ২৪৪ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ পায়। ‘রিভিউ নি®পত্তি এবং রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা’ নিয়ম অনুযায়ী এই দুটি আইনি প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর তার দন্ড কার্যকর করার উদ্যোগ নেবে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
আইন অনুযায়ী রায় প্রকাশের ১৫ দিনের মধ্যে আপিলের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন করার কথা মীর কাসেম আলীর। সে হিসেবে নির্ধারিত সময়ের একদিন আগেই তারা রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) আবেদন করেছেন।
পরিবারের সদস্য ও আইনজীবীরা তিনবার কাশিমপুর কারাগারে মীর কাসেম আলীর সঙ্গে দেখা করেছেন।
পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, নিয়ম অনুযায়ী মীর কাসেম আলী ১৫ দিনের মধ্যে রিভিউ করবেন। রিভিউ করার পর দন্ড কার্যকরের প্রক্রিয়া স্থগিত থাকবে।
৬ জুন দুপুরে রায় প্রকাশের পর সুপ্রিম কোর্ট থেকে রায়ের অনুলিপি বিচারিক আদালতে (ট্রাইব্যুনালে) পাঠানো হয়। পরে ওই দিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ট্রাইব্যুনাল থেকে মীর কাসেম আলীর মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেন বিচারকরা। লাল কাপড়ে মুড়িয়ে পরোয়ানাটি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারা কর্তৃপক্ষ, আইন মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ডিসি অফিস তথা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে পাঠানো হয়।
এর পরের দিন ৭ জুন মঙ্গলবার সকালে কাশেমপুর কারাগার পাট-২ এ মীর কাসেম আলীকে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ এবং মৃত্যু পরোয়ানা জারির বিষয়ে জানানো হয়।
ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদন্ড বহাল রেখে গত ৮ মার্চ মীর কাসেম আলীর আপিল খারিজ করে দেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বিভাগের বেঞ্চ।
আপিলের রায়ে কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিম উদ্দিন আহমেদকে খুনের দায়ে এক অভিযোগে মৃত্যুদন্ড এবং আরও ছয় অভিযোগে ৫৮ বছর কারাদন্ডের সাজা বহাল রাখা হয়েছে। এর মধ্যে ১২ নম্বর অভিযোগে হত্যার দায় থেকে এই জামায়াত নেতা অব্যাহতি পেলেও ১১ নম্বর অভিযোগে সর্বোচ্চ সাজাই বহাল রাখা হয়েছে।
এর আগে ২০১৪ সালের ২ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে দুই অভিযোগে মীর কাসেমের মৃত্যুদন্ড এবং আট অভিযোগে সব মিলিয়ে ৭২ বছরের কারাদন্ড হয়েছিল।
একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ২০১২ সালের ১৭ জুন মতিঝিলে নয়া দিগন্ত কার্যালয় থেকে গ্রেফতার করা হয় দিগন্ত মিডিয়া কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান ও এই ব্যবসায়ীকে। পরের বছর ৫ সেপ্টেম্বর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় তার বিচার। ২০১৪ সালের ২ নভেম্বর ট্রাইব্যুনালের রায়ে মীর কাশেম আলীকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়।