সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
দেশের সবচেয়ে পুরনো রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের ৬৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ বৃহ¯পতিবার। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পুরান ঢাকার কে এম দাস লেনের রোজ গার্ডেনে আত্মপ্রকাশ ঘটে দলটির। বাঙালি জাতির মুক্তির লক্ষ্যে গঠিত হয়েছিল ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’।
প্রতিষ্ঠাকালে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ছিলেন দলটির সভাপতি, শামসুল হক ছিলেন সাধারণ স¤পাদক। পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে লিখেছেন, কোথাও হল বা জায়গা না পেয়ে শেষ পর্যন্ত হুমায়ুন সাহেবের রোজ গার্ডেন বাড়িতে সম্মেলনের কাজ শুরু হয়েছিল। ১৯৫৩ সালে ময়মনসিংহে দলের দ্বিতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে মওলানা আবদুল হামিদ খান
ভাসানী সভাপতি এবং শেখ মুজিবুর রহমান সাধারণ স¤পাদক হন। ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত সাধারণ স¤পাদকের দায়িত্ব পালন করেন শেখ মুজিব।
প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এ দেশে পাকিস্তানি সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে সব আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে আওয়ামী লীগ। ১৯৬৬ সালে ছয় দফাভিত্তিক বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন ও ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানে সাফল্যের পথ ধরে ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে জনগণ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগকে নিরঙ্কুশ রায় দেয়।
১৯৭১ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। দীর্ঘ নয় মাস সশস্ত্র যুদ্ধের পর ওই বছরের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। আওয়ামী মুসলিম লীগ নামে যাত্রা শুরু করলেও অসাম্প্রদায়িক চেতনায় ১৯৫৫ সালে কাউন্সিলে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দেয়া হয়। নতুন নাম হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’। স্বাধীনতার পর ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’ নাম নেয় দলটি।
তবে প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি আব্দুল হামিদ খান ভাসানী রাজনৈতিক মতভিন্নতার জন্য ১৯৫৭ সালে দল ছেড়ে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) গঠন করেন। পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ে মতপার্থক্যের কারণে ১৯৫৭ সালে দলে ভাঙন দেখা দেয়। ওই বছরের ৭ ও ৮ ফেব্রুয়ারি কাগমারি সম্মেলনে দলে বিভক্তির ঘটনা ¯পষ্ট হয়ে ওঠে। এ অবস্থায় মাওলানা ভাসানী ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) নামে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন।
এ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন মওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ ও সাধারণ স¤পাদক শেখ মুজিবুর রহমান বহাল থাকেন।
১৯৬৬ সালের কাউন্সিলে দলের সভাপতি পদে নির্বাচিত হন শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর সঙ্গে সাধারণ স¤পাদক নির্বাচিত হন তাজউদ্দীন আহমদ। এর পরে ১৯৬৮ ও ১৯৭০ সালের কাউন্সিলে সভাপতি ও সাধারণ স¤পাদক অপরিবর্তিত থাকেন।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রথম কাউন্সিলে সভাপতি হন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং সাধারণ স¤পাদক নির্বাচিত হন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান। ১৯৭৪ সালে সভাপতির দায়িত্ব দেয়া এএইচএম কামরুজ্জামানকে। সাধারণ স¤পাদক পদে বহাল থাকেন মো. জিল্লুর রহমান।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর দলটির নেতাদের মধ্যেও দেখা দেয় বিভেদ। ১৯৮১ সালের কাউন্সিলে শেখ হাসিনাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয় এবং সাধারণ স¤পাদক পদে বহাল থাকেন আবদুর রাজ্জাক।
২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। পাঁচ বছর শাসনের পর ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পরাজিত হয়। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে তিন-চতুর্থাংশ আসনে বিজয়ী হয়। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে দলটি টানা দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসে।