1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ০৭:১৪ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পে প্রকৃত কৃষক ও জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ততা চাই

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২১ জুন, ২০১৬

প্রাচীনকাল থেকেই বাংলাদেশের ভাটি অঞ্চল অর্থাৎ হাওরাঞ্চলের একটি গুরুতর সমস্যা ফসলহানি। বিশেষ করে সুনামগঞ্জ জেলার বিভিন্ন হাওরের বোরো ফসলের ক্ষেত্রে এ সমস্যাটি প্রবল ও প্রায় অপ্রতিরোধ্য। ফসলহানি ঘটে প্রধানত শিলাবৃষ্টিতে ও হাওর ডুবে গিয়ে। শিলাবৃষ্টিতে ফসলহানি সম্পূর্ণভাবে অপ্রতিরোধ্য। বাংলাদেশে শিলাপাত প্রতিরোধের কোনও প্রাযুক্তিক ব্যবস্থা গড়েই ওঠেনি, হাওর পানিতে ডুবে যাওয়ার প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ প্রতিরোধযোগ্য। ফসলরক্ষাবাঁধ দিয়ে তা সম্ভব এবং বাংলাদেশের হাওরাঞ্চলে হাওররক্ষাবাঁধ বা ফসলরক্ষাবাঁধ দিয়ে ফসলহানি প্রতিরোধও করা হয়ে থাকে। পদ্ধতিটি তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক দু’দিক থেকে শতভাগ কার্যকর ফলপ্রদ তাতে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু ফসলরক্ষাবাঁধ কার্যক্রম বা বাঁধনির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতি অবলম্বনের কারণে ফসলরক্ষাবাঁধ প্রকল্পের কার্যকারিতা বা ফলপ্রদতা শেষ পর্যন্ত শূন্যের কোঠায় গিয়ে ঠেকে এবং বাস্তবত কৃষকের কষ্টার্জিত ফসল অপক্ক কিংবা পক্কাবস্থায় কাটার আগেই জলের তলে তলিয়ে যায়। গতবছর সুনামগঞ্জে জনপ্রতিনিধি ও সাধারণ মানুষের ধারণামতে কম করে হলেও শতকরা ৮০ ভাগ বোরো ধান পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে। কারও কারও মতে এই ফসলহানির পরিমাণ আরও বেশি, যদিও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সে ফসলহানিকে সম্প্রসারিত না করে সঙ্কুচিত করতে করতে শতকরা ১৫ ভাগে নামিয়ে এনেছে। অভিজ্ঞমহল ক্ষুব্ধ হয়ে কেবল বলেছেনÑ সব কিছুর একটা সীমা থাকা চাই।
ফসলরক্ষার কার্যক্রমটি যখন থেকে সরকারি প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের আওতায় এসেছে, তখন থেকেই এর সঙ্গে অনিয়ম ও দুর্নীতি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে উঠেছে। বিষয়টি সরকারি-বেসরকারি সকল মহলের কাছেই একটি প্রকাশ্য গোপনীয় (ওপেন সিক্রেট) বিষয় এবং এখনও পর্যন্ত চলমান। বিস্ময়ের ব্যাপার এই যে, জানা সত্ত্বেও এই অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধের কোনও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় না, কেবল পত্রপত্রিকায় ব্যাপকাকারে ঢোল পেটাপেটি হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কুম্ভকর্ণের নিদ্রা ভঙ্গ হয় না।
গতকালের সুনামকণ্ঠের একটি সংবাদ শিরোনাম ছিলÑ “শাল্লায় ফসলরক্ষাবাঁধের বরাদ্দ আত্মসাৎ”। তৃতীয় কিস্তির টাকা আত্মসাৎ করেছেন মর্মে অভিযোগ উঠেছে। বাস্তবায়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, তাঁর স্বাক্ষর জাল করে টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। তাঁর অভিযোগ এই যে, প্রকল্পের একতৃতীয়াংশ কাজ না করেই পাউবো ও প্রকল্প সভাপতি মিলে বরাদ্দের টাকা লুট করেছেন। হাওরাঞ্চলে ফসলরক্ষাবাঁধ নির্মাণের ক্ষেত্রে এবংবিধ অনিয়ম-দুর্নীতি নতুন কিছু নয়। প্রতি বছরই এসব ঘটে চলেছে অপ্রতিরোধ্যভাবে। সময়মত বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু করা হচ্ছে না, বাঁধ সম্পূর্ণ হবার আগেই অকাল বন্যার তোড়ে ভেঙ্গে ফসল ডুবিয়ে দিচ্ছে, বাঁধের কাজ সম্পূর্ণ করা হলেও পর্যাপ্ত মাটি না ফেলে নামকাওয়াস্তে মাটি বাঁধের উপর লেপে দিয়ে কাজ শেষ করা হচ্ছে, ফলে সময়মতো বাঁধ ভাঙছেই, এমনকি ক্ষেত্র বিশেষে কোনও কাজ না করেই টাকা উত্তোলন করা হচ্ছে।
ফসলরক্ষাবাঁধ নিয়ে এইসব লঙ্কাকান্ডের সংবাদ সংশ্লিষ্ট সকল মহলেরই জানা। জানেন জনপ্রতিনিধিরা। কিংবা প্রশাসনেরও অজানা নয় বিষয়টি। তারপরও ফসলরক্ষাবাঁধ নিয়ে যতসব অনিয়ম-দুর্নীতি হচ্ছে প্রতি বছর এবং পত্রপত্রিকায় ব্যাপকাকারে লেখালেখির পরও অব্যাহত থাকছে। বাস্তবতা এমন যে, মনে হয় ফসলরক্ষাবাঁধ নির্মাণের প্রকল্পটি ফসলরক্ষা নয় বরং বিশেষ ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর বাড়তি আয়-উপার্জনের অধিকাররক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। এমতাবস্থায় আমাদের প্রস্তাব, ফসলরক্ষা প্রকল্প বাস্তবায়নে মূলত ব্যর্থ পাউবোকে হাওরাঞ্চলের ফসলরক্ষাবাঁধ নির্মাণের কর্মসূচি থেকে প্রত্যাহার করা হোক। সে স্থলে প্রকৃত কৃষক ও জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করে এমন একটি প্রতিষ্ঠান গঠন করা হোক, যে প্রতিষ্ঠানটির হাওররক্ষাবাঁধ নির্মাণে অনিয়ম-দুর্নীতিকে নির্মূল করতে পারবে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com