সম্প্রতি দেশে গুপ্তহত্যা ও জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠেছে। যা রীতিমতো দেশের মানুষের মনে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। সন্ত্রাস ও জঙ্গি দমনে সরকার কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার পরও প্রকৃতপ্রস্তাবে এর লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। ঘাতকরা একের পর এক হত্যাকান্ড ঘটিয়ে চলেছে। যদিও শুরু থেকেই আওয়ামী লীগ সরকার জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স প্রদর্শন করছে। অর্থাৎ জঙ্গিবাদ দমনে এই সরকারের কোন দুর্বলতা নেই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আগের চেয়ে আরও সতর্ক এবং গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। কেবল আইন কিংবা শক্তি প্রয়োগ নয়, গণসচেতনতা তৈরির মাধ্যমে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস এবং গুপ্তহত্যার বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা জরুরি। জঙ্গিদের অর্থায়নকারীদের খুঁজে বের করা হচ্ছে। তার সঙ্গে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দমনে স¤পৃক্ত করা দরকার। মাদ্রাসা, স্কুল ও কলেজের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে জঙ্গিবাদবিরোধী সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে শিক্ষা উপকরণ ও পাঠ্যসূচিতে প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে। গণমাধ্যমে জঙ্গিবাদের নেতিবাচক দিক তুলে ধরে ব্যাপক প্রচারণার ব্যবস্থাও করতে হবে বলে আমরা মনে করি।
কোন ‘যুদ্ধবাজ’ সংগঠনকে ‘জঙ্গি’ এবং তাদের মতবাদকে ‘জঙ্গিবাদ’ বলা হয়ে থাকে। জঙ্গিবাদের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ‘যুদ্ধকেই’ তারা একটি আদর্শ বলে গ্রহণ করে। সহিংসতা তাদের মোক্ষম হাতিয়ার। জঙ্গিবাদিরা আক্রমণাত্মক আদর্শের অনুসারী এবং নিজেদের মতাদর্শকে তারা সর্বশ্রেষ্ঠ মতাদর্শ হিসেবে বিবেচনা করে। এদেশের জঙ্গিবাদিরা তাদের মতাদর্শের ধর্মীয়করণ ঘটিয়েছে। যেমন ইসলামি জঙ্গিবাদ। আর সেই বিভ্রান্তিকর ধর্মীয় চেতনা ও মতাদর্শের আধিপত্য কায়েমের জন্য সেই মতাদর্শের শত্রুদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র নিষ্ঠুর ক্ষমাহীন সংগ্রামের ঘোষণা দিয়ে উদার মানবতাবাদ ও গণতন্ত্রের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। প্রকৃতপ্রস্তাবে ফ্যাসিবাদি হিটলারের মতোই সব জঙ্গিবাদির সাধারণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে আক্রমণ, বলপ্রয়োগ এবং যুদ্ধ করে নিজের মতবাদ ও ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করা। যেমন আইএস বা ইসলামি জঙ্গিরা সব বিধর্মীর বিরুদ্ধে জিহাদ, ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধের আহ্বান জানায়। কেবল ব্যক্তি নয় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত মুসলমান শাসক তাদের মতাদর্শের বিরুদ্ধে থাকলে সহিংস কর্মকান্ড ও অপপ্রচারের মাধ্যমে সেই ক্ষমতাবানদেরও চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয় জঙ্গিরা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও একাধিক জঙ্গিবাদি সংগঠনের অপতৎপরতা রয়েছে। বিভিন্ন পত্রিকান্তরে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, দেশজুড়ে গুপ্তহত্যার মধ্যে জঙ্গি কার্যক্রমের সঙ্গে স¤পৃক্ত চট্টগ্রামের ৫৩ জনের তালিকা তৈরি করে মাঠে নেমেছে পুলিশ। এসব জঙ্গির অধিকাংশই পলাতক। কয়েকজন বিদেশে আছে। কয়েকজন গ্রেফতারের পর জামিনে বেরিয়ে এসেছে। তালিকাভুক্ত জঙ্গিরা নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতুল মোজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি), আনসারউল্লাহ বাংলা টিম, হিযবুত তাহরির ও হরকাতুল জিহাদ এবং শহীদ হামজা ব্রিগেডের সঙ্গে যুক্ত আছে।
আমরা মনে করি, চট্টগ্রামের মতো সারাদেশেই জঙ্গিদের ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা আরো জোরদার করা দরকার। এবং জঙ্গি প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সামাজিকভাবেও সহযোগিতা করতে হবে। মনে রাখতে হবে- জনগণ হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকলে জঙ্গি দমনে আশানুরূপ সাফল্য কখনোই আসবে না।