স্টাফ রিপোর্টার ::
শাল্লা উপজেলার ফসলরক্ষা বাঁধের তৃতীয় কিস্তির প্রায় দেড় লক্ষ টাকা সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষর জাল করে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সংশ্লিষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন প্রকল্পের সেক্রেটারি। স্বাক্ষর জাল করার পাশাপাশি প্রকল্পের পুরো বরাদ্দ এক তৃতীয়াংশ কাজ না করিয়েই পাউবো ও সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের সভাপতি মিলে লুট করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। স্বাক্ষর জালের ঘটনায় তিনি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
জানা গেছে, গত বছর ডিসেম্বর মাসে শাল্লা উপজেলার ছায়ার হাওরের মাদারিয়া খালে ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণে পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রায় ৭ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেয়। পানি উন্নয়ন বোর্ড সংশ্লিষ্ট এলাকার ইউপি সদস্য মিহির কান্তি দাসকে সভাপতি এবং স্থানীয় সাংসদ সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত স্থানীয় গণ্যমান্য হিসেবে এলাকার পিযুষ শেখর দাসকে সাধারণ সম্পাদক করে ১১৫নং পিআইসি (প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি) গঠন করে দেন।
গত ৪ ফেব্রুয়ারি ও ৩ মার্চ প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি মিহির কান্তি দাস চেকে সাধারণ সম্পাদক পিযুষ শেখর দাসের দাসের স্বাক্ষর নিয়ে সুনামগঞ্জ রূপালি ব্যাংকের যৌথ একাউন্ট থেকে দুই দফা টাকা উত্তোলন করেন। তবে প্রথম কিস্তির ১ লক্ষ ৬৩ হাজার ৪৮৫ টাকা উত্তোলন করে সামান্য কাজ হলেও দ্বিতীয় কিস্তির ১ লক্ষ ৫৪ হাজার টাকার কোন কাজ হয়নি। বরং পাহাড়ি ঢলে ছায়ার হাওরের ওই বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার মুহূর্তে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি মিহির কান্তি দাশ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট উপ-সহকারি প্রকৌশলী ইব্রাহিম খলিল প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক পিযুষ শেখর দাসের স্বাক্ষর জাল করে গত ১৭ এপ্রিল ১ লক্ষ ৬০ হাজার ৪০০ টাকা বিল উত্তোলন করে পুরোটাই লুটপাট করেন বলে তিনি অভিযোগ করেন। ওই সময় পিআইসি সেক্রেটারি বাঁধ রক্ষায় স্থানীয়দের নিয়ে প্রায় ৬০ হাজার টাকা খরচ করে বাঁধ রক্ষার কাজ করেন।
প্রকল্পের সাধারণ সম্পাদক পিযুষ শেখর দাস গতকাল সোমবার সুনামগঞ্জ রূপালী ব্যাংকে টাকা উত্তোলনের স্ট্যাটমেন্ট নিতে এসে তৃতীয় কিস্তির ১ লক্ষ ৬০ হাজার ৪০০ টাকা উত্তোলনের স্বাক্ষর জালের বিষয়টি ধরা পড়ে। এ ঘটনায় তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ড, সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তা এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটিকে দায়ি করেছেন।
মাদারিয়া খালের ফসলরক্ষা বাঁধের সাধারণ সম্পাদক পিযুষ শেখর দাস বলেন, রূপালী ব্যাংকে এসে গতকাল সোমবার স্ট্যাটমেন্ট নেওয়ার সময় আমার স্বাক্ষর জাল করে টাকা উত্তোলনের বিষয়টি ধরা পড়ে। এ ঘটনায় আমি পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা, সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ম্যানেজার এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছি। যৎসামান্য কাজ করেই পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি পুরো টাকা আত্মসাৎ করে।
প্রকল্প সভাপতি মিহির কান্তি দাস টাকা উত্তোলনের কথা স্বীকার করে বলেন, সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষর নিয়েই টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। টাকা আত্মসাতের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।
রূপালী ব্যাংক সুনামগঞ্জ শাখার ম্যানেজার চৌধুরী মনিরুজ্জামান বলেন, গত ১৭ এপ্রিল যে টাকা উত্তোলন করা হয়েছে সেই চেকে সভাপতি এবং সম্পাদকের স্বাক্ষর ছিল। যৌথ একাউন্টের টাকা যে কোন একজনই অন্যজনের স্বাক্ষর নিয়ে উত্তোলন করতে পারেন। এক্ষেত্রে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কোন গাফিলতি নেই। তবে স্বাক্ষর যাচাই-বাছাই করে টাকা দেওয়া হয়েছি কি-না জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের কর্মকর্তা মো. ইব্রাহিম খলিল বলেন, বিল পিটিশনে শুধু সভাপতির স্বাক্ষর রাখা হয়। সেক্রেটারির স্বাক্ষরের কোন সুযোগ নাই। স্বাক্ষর শনাক্ত করে টাকা দেওয়া ব্যাংকের দায়িত্ব। এখানে আমাদের কিছু করণীয় নেই।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আফছর উদ্দিনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও তিনি কল ধরেননি।