সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
সুনামগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ বলেছেন, “দেশের ব্যাংকখাত তছনছ হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ দ্বিতীয়বার ক্ষমতাসীন হবার পর ব্যাংক খাত থেকে পনেরো হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়ে গেছে। সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, বেসিক ব্যাংকে বড় ধরনের অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে। কারো কোন সাজা হয়নি। হলমার্ক কেলেঙ্কারিতে প্রতিষ্ঠানটির মালিক জেলে থাকলেও তার স্ত্রী জামিনে থেকে দাপটের সঙ্গে ব্যবসা চালাচ্ছে। দেশে আটশ কোটি টাকা রিজার্ভ চুরি হয়ে গেলেও সরকার নিশ্চুপ। কোন সমাধানমূলক তৎপরতা নাই। এভাবে দেশ চলতে পারে না। মাননীয় অর্থমন্ত্রী বলেছেন, এই হোতাদের হাত অনেক লম্বা। কিন্তু শেয়ার ও ব্যাংক কেলেঙ্কারির নায়কদের হাত যত বড়ই হোক সেটা রাষ্ট্রের চেয়ে বড় নয়। তাদেরকে আইনের আওয়তায় এনে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে।”
সোমবার জাতীয় সংসদে বক্তৃতা রাখতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
জাতীয় পার্টির এই সাংসদ বলেন, “ব্যাংক কেলেঙ্কারিগুলোর সাথে পরিচালকেরা সরাসরি জড়িত হলেও তাদের বিরুদ্ধে কখনই কোন ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না। উল্টো এই পরিচালকরাই রাতের টকশোতে জাতিকে ওয়াজ নসিহত করেন কীভাবে দেশ রক্ষা করা যায়। দেশে শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির মাধ্যমে বিশ হাজার কোটি টাকা উধাও হয়ে গেলেও কারও কোন শাস্তি হয়নি। অথচ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিচারের নজির আছে। যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও বিভিন্ন দেশে সেসব বিচার হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০০৯ সালে এক ব্যক্তির ৭১ বছর বয়সে শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির দায়ে ১৫০ বছরের জেল ও ১৭০ কোটি ডলার জরিমানা করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে এটা কল্পনাও করা যায় না।”
সাংসদ মিসবাহ বলেন, দেশে দুষ্টু লোকদের সংখ্যা বেড়ে গেছে। দুর্নীতি বন্ধ করতে না পারলে সুশাসন সম্ভব নয়। চালের কথা উল্লেখ করে মিসবাহ বলেন, দেশে চালের আমদানি হচ্ছে না রপ্তানি তা বোঝা সত্যিই কঠিন। আমদানি ৩০ গুন বেশি হলেও সরকার রপ্তানির কথাটাই বেশি প্রচার করে। শ্রীলঙ্কায় ৫০ টন চাল রপ্তানি করলেও কয়েক হাজার টন পরিমাণ চাল ভারত থেকে থেকে আমদানি করা হয়েছে।
মিসবাহ আরও বলেন, “অর্থমন্ত্রী ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির কথা বলেছেন। সেজন্যে বিনিয়োগ লাগবে। কিন্তু সেটা কীভাবে বাড়ানো যাবে। তার সুনির্দিষ্ট রূপরেখা তিনি দিতে পারেন নাই। বরং জনগণের ওপর করের বোঝা বাড়িয়েছেন আড়াইগুন বেশি। মোবাইলের ওপর সারচার্জ বাড়ানো হয়েছে। দেশে জনশক্তি রপ্তানি কমেছে। এভাবে অর্থনীতি টেকসই হবে না, দেশও চলতে পারে না।”
তিনি বলেন, ভ্যাটের আওতায় অতিরিক্ত রাজস্ব নির্ধারণ হয়েছে। যা বাস্তবধর্মী নয়। মেডটেশন কীভাবে বাণিজ্যিক হয়, এটা সেবাখাত। পার্শ্ববর্তী দেশেও এটা ভ্যাটমুক্ত উল্লেখ করে তিনি তা বাতিলের দাবি জানান।
পীর মিসবাহ আরও বলেন, বড় বাজেট মানে শুভঙ্করের ফাঁকি। মোট বাজেটের বারো শতাংশ ঋণের সুদ মেটাতেই চলে যাবে। এত বড় ঋণের বোঝা জনগণের ওপর দেয়া ঠিক হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, শুধু বিদেশি ঋণেই ১৭০৩ কোটি টাকা সুদ দিতে হবে। এত ঘাটতি রেখে দেশের অর্থনীতি চলতে পারে না। সাংসদ মিসবাহ বলেন, আগে ইউপি নির্বাচনে দু-একজন মারা যেত। এবারের নির্বাচনে শুধুমাত্র দলীয় প্রতীকের মনোনয়ন বাণিজ্যের কারণে শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছে।
নিজ এলাকা সুনামগঞ্জ সম্পর্কে তিনি বলেন, বোরো ধানের বাম্পার ফলন হলেও অতিরিক্ত বৃষ্টি, বাঁধ ভেঙে যাওয়া, জলাবদ্ধতার কারণে ফসলহানি ঘটেছে। এজন্য কৃষকদের প্রণোদনা দিতে হবে। নদীগুলোকে ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের আওতায় আনতে হবে। মেডিকেল কলেজ ও রেল লাইন, ফায়ার স্টেশন, পর্যাপ্ত ব্রিজ স্থাপনেরও দাবি জানান তিনি।