সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
দীর্ঘ দিন ধরেই হামলা আর মামলার চাপের মধ্যদিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। টানা আন্দোলনে ব্যর্থ হওয়ার পর জাতীয় কাউন্সিলের মধ্যদিয়ে চাঙ্গা হওয়ার একটি সুযোগ তৈরি হয় বিএনপির সামনে। ঘটা করে কাউন্সিল হওয়ার পর ইতোমধ্যেই তিন মাস পার হয়েছে। এরই মধ্যে অন্তত তিন ধাপে আংশিক কমিটিও ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু কমিটি ঘোষণার মধ্যদিয়ে দলে স্বস্তির পরিবর্তে উল্টো অস্বস্তিতে পড়েছে দলের নেতারা। নতুন উদ্যমে মাঠে ঝাঁপিয়ে পড়ার স্বপ্ন দেখলেও নেতাকর্মীদের মাঝে যেন হতাশা ভর করেছে। এসব নিয়ে দলের শীর্ষ নেতারা বিরক্ত। কবে কমিটি হবে সে ব্যাপারেও অন্ধকারে দলের নীতি নির্ধারকেরা। সবাই তাকিয়ে চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার দিকে। কেন্দ্রীয় কমিটি করার ব্যাপারে কাউন্সিলেই সর্বময় ক্ষমতা দেয়া হয়েছে চেয়ারপারসনকে। প্রকাশ্যে এ নিয়ে কেউ মুখ না খুললেও ভেতরে ভেতরে অনেকেই ক্ষোভও প্রকাশ করছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, স্থায়ী কমিটিতে কারা আসবেন তা তো ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) চোখের সামনে ভাসে। তাইলে কেন কমিটি দিতে এত বিলম্ব মাথায় আসছে না। এই প্রতিবেদককে তিনি উল্টো প্রশ্ন করে বলেন, এটা কী দলের জন্য ভালো হচ্ছে?
কবে নাগাদ পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেয়া হবে তা ¯পষ্ট করে বলতে না পারলেও নেতাদের অনেকের ধারণা, চেয়ারপারসন ঈদের উপহার হিসেবে রমজানের মধ্যেই কমিটি ঘোষণা করতে পারেন। তবে ঈদের আগে কমিটি হওয়ার সম্ভাবনা কম বলে মনে করছেন বেশিরভাগ শীর্ষ নেতা। একাধিক নেতার সঙ্গে এ ইস্যুতে আলাপকালে তারা বলেন, আগে কমিটির বিষয়ে গুটিকয়েক নেতার সঙ্গে খালেদা জিয়া কথা বললেও ইদানীং কারো সঙ্গেই এ নিয়ে তিনি কথা বলছেন না। তিনি (খালেদা জিয়া) হয়তো আরো কিছুদিন সময় নিয়ে কমিটি ঘোষণা করতে পারেন।
সবমিলিয়ে কমিটি নিয়ে আশা নিরাশার দোলাচালে রয়েছেন বিএনপির পদপ্রত্যাশীরা।
গত ১৯ মার্চ বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠানের পর দ্রুত সময়ের মধ্যে কমিটি ঘোষণার কথা বলেছিলেন দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। ওইদিন কমিটি করার দায়িত্ব ও পূর্ণাঙ্গ ক্ষমতা চেয়ারপারসনকে দেন আগত কাউন্সিলররা।
ধারণা ছিল, দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে শিগগিরই কমিটি দেয়া হবে। কিন্তু শুরু থেকেই বিষয়টি একাই দেখভাল করছেন খালেদা জিয়া। যে কারণে একুট বেশি সময় লাগছে -বলছেন নেতাদের কেউ কেউ। আর যে কারণে গত তিনমাসে মোট ৪২ জন কেন্দ্রীয় নেতার নাম ঘোষণা করা হয়েছে।
অন্যান্য সময়ে সাধারণত কাউন্সিলের পর স্থায়ী কমিটি ঘোষণার মাধ্যমে দলের পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু হলেও এবারই কেবল ব্যতিক্রম। চেয়ারপারসন, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর তিন ধাপে মহাসচিব, যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক স¤পাদক ও সহ-সাংগঠনিক স¤পাদক পদের নেতাদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে।
প্রথম দফায় ৩০মার্চ, দ্বিতীয় দফায় ৯ এপ্রিল ও তৃতীয় দফায় ১৮ এপ্রিল নতুন কমিটির নেতাদের নাম ঘোষণা করা হয়। এরপর দুই মাস কেটে গেলেও কমিটি ঘোষণার কোনো নামগন্ধও নেই।
তবে কমিটি ঘোষণায় বিলম্বে নেতাদের পাশাপাশি বিএনপিপন্থি বুদ্ধিজীবীরাও নাখোশ। তাদের পরামর্শ দেরি হওয়ায় দলে অস্থিরতা বাড়ছে। তাই কমিটি ঘোষণা হলে স্বাভাবিকভাবেই নেতাকর্মীরা কিছুটা হলেও চাঙ্গা হবে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, কমিটি গঠন নিয়ে খালেদা জিয়া শীর্ষ কোনো নেতার সঙ্গে আলাপ না করায় অনেকেই নাখোশ। এছাড়াও এই দীর্ঘ সময় পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হওয়া অনেকেই অস্বস্তিতে রয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কেউ কেউ বলছেন, নেত্রীর এই আচরণে আমরা অপমানিত বোধ করছি।
কী কারণে কমিটি ঘোষণায় বিলম্ব হচ্ছে বলে মনে করছেন-এমন প্রশ্নের জবাবে সাবেক একজন যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতার বিষয়ে ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) আস্থাহীনতায় রয়েছে বলে শুনেছি। তাদেরকে আরও একটু পর্যবেক্ষণে রাখতে চান চেয়ারপারসন। আর এ কারণেই কমিটি ঘোষণায় বিলম্ব হচ্ছে।’
কবে নাগাদ পূর্ণাঙ্গ কমিটি হওয়ার সম্ভাবনা আছে এমন প্রশ্নে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আশা করি ঈদের আগে কমিটি ঘোষণা হবে। তবে পুরো বিষয়টি নির্ভর করছে চেয়ারপারসনের ওপর। কারণ তিনি নিজেই এটা নিয়ে কাজ করছেন।
একই কথা বলেছেন নতুন কমিটির একজন সাংগঠনিক স¤পাদক। তিনি বলেন, ঈদের আগে কমিটি ঘোষণা হতে পারে আপনাদের মতো আমরাও শুনেছি। তবে সম্ভাবনাও আছে। আর কমিটিতে ভাইস চেয়ারম্যান পদ প্রত্যাশী এক নেতার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শেষ পর্যন্ত কি হয় বলা মুশকিল। কর্মীদের কাছে আমরা কোনো জবাব দিতে পারছি না। আশা করবো দ্রুত চিন্তা থেকে মুক্তি মিলবে।