সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
নিবন্ধিত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের জন্য প্যানেলে থাকা ২৬ হাজার প্রার্থীকে আগামী এক বছরের মধ্যে নিয়োগ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার।
রোববার সংসদে বাজেট প্রস্তাবের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি বলেন, “গত দুই বছরে আমরা ২২ হাজার শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছি। আদালতের নির্দেশনা অনুসারে আরও প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে। এক বছরের মধ্যে আমরা এই নিয়োগ স¤পন্ন করব।”
বাংলাদেশ প্রাথমিক প্যানেল শিক্ষক ঐক্য পরিষদ প্যানেলভুক্ত সবাইকে নিয়োগ দেওয়ার জন্য বেশ কিছুদিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে আসছে। মানববন্ধন ও অবস্থান ধর্মঘটের মত কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে নিজেদের ওই দাবির কথা তুলে ধরেছেন তারা।
রেজিস্ট্রার্ড বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চাকরি (নিয়োগ, পদোন্নতি, শৃঙ্খলা ও কল্যাণ) নীতিমালা-২০০৯ অনুযায়ী সহকারী শিক্ষক নিয়োগের জন্য ২০১০ সালের ২১ এপ্রিল বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সরকার। ওইসব বিদ্যালয়ে পর্যায়ক্রমে নিয়োগ দিতে পরীক্ষার মাধ্যমে ২০১২ সালের ৮ এপ্রিল ৪২ হাজার ৬১১ জনের মেধাতালিকা প্রকাশ করা হয়। এদের মধ্য থেকে ২০১৩ সালের আগ পর্যন্ত ১০ হাজার ৫১৪ জন নিয়োগ পান।
২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২২ হাজার ৯৯৫টি রেজিস্ট্রার্ড বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে সরকারি করেন। ওইসব বিদ্যালয়েই প্যানেলভুক্ত শিক্ষকদের নিয়োগের কথা ছিল। প্রধানমন্ত্রীর এক ঘোষণায় বেশিরভাগ রেজিস্ট্রার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ হলে প্যানেলে থাকা বাকিদের নিয়োগ ঝুলে যায়। এরপর আন্দোলনে নামেন এসব প্রার্থীরা।
দীর্ঘ দিন আন্দোলনে কাজ না হওয়ার প্যানেলভুক্ত ৫০০ প্রার্থী হাই কোর্টে যান। এই পরিপ্রেক্ষিতে আদালতপ্যানেলভুক্ত শিক্ষকদের নিয়োগ দিতে নির্দেশ দেয়। ওই রায়ের বিরুদ্ধে সরকারের আপিলের আবেদনও খারিজ হয়ে যায়। এরপরই প্যানেলে থাকা প্রার্থীদের নিয়োগের পথ খোলে।
হাই কোর্টের নির্দেশে সদ্য জাতীয়করণ হওয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ‘শূন্যপদে’ প্যানেল প্রার্থীদের নিয়োগ দিতে গত ৬ জুন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। প্যানেল থেকে নিয়োগের জন্য প্রায় ২৩ হাজার প্রার্থী নিয়োগের অপেক্ষায় থাকলেও এদের নিয়োগে শূন্যপদের শর্ত জুড়ে দেওয়ায় সবাইকে নিয়োগ দেওয়া যাচ্ছিল না।
শূন্য পদের বাইরেও অন্য পদগুলোতে প্যানেল শিক্ষকদের নিয়োগ দিতে এক সপ্তাহ আগে নতুন আদেশ জারি করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এর পরেও প্যানেলে থাকা সব প্রার্থী নিয়োগ পাবেন না জানিয়ে তারা কর্মসূচি পালন করছেন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী সংসদে বলেন, “প্রাথমিকের প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো মানস¤পন্ন শিক্ষা। এ লক্ষ্যে শিক্ষক ট্রেনিং বাড়ানো হয়েছে। আগে প্রাইমারি ছিল পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত। এখন অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিকের আওতায় আনা হয়েছে। এ জন্য কারিকুলাম তৈরির কাজ চলছে।”
সারাদেশে যেসব স্কুল জরাজীর্ণ অবস্থায় আছে, আগামী ২০১৮ সালের মধ্যে সেগুলোর সংস্কার হবে বলেও জানান তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার বলেন, গতবার প্রাথমিক শিক্ষায় বাজেটে বরাদ্দ ছিল সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকা। এবার সেখানে দেওয়া হয়েছে সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকা। শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয় মিলে গতবার মোট বাজেট ছিল ৩২ হাজার কোটি টাকা। এবার দেওয়া হয়েছে ৫৮ হাজার কোটি টাকারও বেশি।