সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
জামিনের আদেশের পর অ্যাডভোকেট অন রেকর্ডের (এওআর) সার্টিফিকেট দিয়ে কারামুক্তি বাধাগ্রস্ত করাকে বেআইনি বলে সতর্ক করেছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, এভাবে আইনজীবীর সার্টিফিকেট দিয়ে কারামুক্তি বাধাগ্রস্ত করার কোন আইনগত ভিত্তি নেই। এর মাধ্যমে স্বাভাবিক বিচার প্রক্রিয়া ব্যাহত করা হয়। ভবিষ্যতে এ ধরনের কর্মকান্ড থেকে সংশ্লিষ্টদের বিরত থাকতে সতর্ক করেন হাইকোর্ট।
বুধবার বিচারপতি ফরিদ আহম্মদ ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।
সম্প্রতি হাইকোর্ট থেকে জামিন পাওয়ার পরও অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস অথবা অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড-এওআর ফোন করে, ফ্যাক্স পাঠিয়ে অথবা সার্টিফিকেট ইস্যু করে আসামিদের কারামুক্তি আটকে দেন। আপিল করা হবে জানিয়ে কারা কর্তৃপক্ষকে আটকে রাখতে বলা হয়। এ ধরনের ঘটনা একের পর এক ঘটছে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।
সম্প্রতি অর্থ পাচারের এক মামলায় জামিননামা দাখিলের পরও দীর্ঘদিন গিয়াস উদ্দিন, আমিনুর রহমান ও ওসমান গণি নামে তিন ব্যক্তিকে মুক্তি না দিয়ে কারাগারে আটকে রাখা হয়। এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে আদালতে আবেদন করেন বন্দি তিন ব্যক্তির আইনজীবী। এর প্রেক্ষিতে এওআর সুফিয়া খাতুন ও ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার জাহাঙ্গীর কবির, কাশিমপুর কারাগার-১ এর জেল সুপার সুব্রত কুমার বালাকে তলব করেন আদালত। বুধবার তারা আদালতে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করলে তাদের বিরুদ্ধে কোনো আইনগত ব্যবস্থা না নিয়ে তাদের সতর্ক করে দেন আদালত।
জানা গেছে, অর্থ পাচারের মামলায় ২ জানুয়ারি রামপুরা থানায় মামলা হয় পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে। এ মামলায় ৮ মে ৫ আসামি জামিন পান হাইকোর্ট থেকে। ১৬ মে কেন্দ্রীয় কারাগার ও ১৭ মে কাশিমপুর কারাগারে জামিননামা দাখিল করলে দুই আসামিকে মুক্তি দেয়া হয়। কিন্তু আসামি গিয়াস উদ্দিন, আমিনুর রহমান ও ওসমান গণিকে মুক্তি দেয়নি কারা কর্তৃপক্ষ। জামিননামা যাওয়ার পরও কারামুক্তি না পাওয়ায় তারা হাইকোর্টে আবেদন করেন। ৫ জুন এ আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে এওআর সুফিয়া খাতুন এবং দুই জেল সুপার জাহাঙ্গীর কবির ও সুব্রত কুমার বালাকে তলব করেন আদালত। এরপর গত ৯ জুন হাজির হলে তাদেরকে লিখিতভাবে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়। গত ১৩ জুন তারা আদালতে হাজির হয়ে লিখিত ব্যাখ্যা দাখিল করেন। এতে জেল সুপার সুব্রত কুমার বালা বলেন, এওআরের দেয়া ল ইয়ার সার্টিফিকেটের কারণে আমরা আসামিদের মুক্তি দেইনি। কারণ ওই সার্টিফিকেটে বলা হয়েছিল হাইকোর্টের জামিন আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করা হবে।
সুব্রত কুমার আরও বলা হয়, আসামিদের মুক্তি না দেয়াটা ছিলো অনিচ্ছাকৃত ভুল। বিষয়টি আমাদের অজ্ঞাতসারেই হয়েছে। এই ভুলের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
এওআর সুফিয়া খাতুন বলেন, হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে ২৪ মে আপিল দায়ের করা হয়। ৭ জুন আপিল বিভাগ ওই জামিন আদেশ স্থগিত করে দিয়েছে। তবে অজ্ঞাতসারেই এ ল ইয়ার সার্টিফিকেট দেয়া হয়েছে। এজন্য নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
বুধবার রিট নি®পত্তিকালে আদালতে তিন আসামির আইনজীবী আদিলুর রহমান খান ও রুহুল আমিন ভূইয়া উপস্থিত ছিলেন।