1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
মঙ্গলবার, ৩০ মে ২০২৩, ১১:৪৬ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

ধর্ষণ থেকে ‘যৌন সংসর্গ’ : তনু হত্যার তদন্ত কোন পথে

  • আপডেট সময় বুধবার, ১৫ জুন, ২০১৬

সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
সোহাগী জাহান তনুর লাশের দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে ‘হত্যার আগে’ ‘ধর্ষণ’ শব্দের বদলে ‘মৃত্যুর আগে’ ‘যৌন সংসর্গ’ হয়েছিল উল্লেখ করাকে ইচ্ছাকৃত ও উদ্দেশ্যমূলক বলে মনে করছেন মানবাধিকারকর্মী ও আইনজীবীরা।
প্রতিবেদনে পুলিশের অধিকতর তদন্তের কথা উল্লেখ করা হলেও আড়াই মাসের ব্যবধানে ধর্ষণের বদলে ‘যৌন সংসর্গ’ শব্দের প্রতিস্থাপনে শঙ্কার জায়গা আছে বলেও মনে করেন তারা। সংবেদনশীল মামলার মোড় ঘোরানোর জন্য এ ধরনের শব্দের খেলার নজির আছে উল্লেখ করে বিশ্লেষকরা বলছেন, যৌন সংসর্গ নয়, তনুর ধর্ষণ হয়েছে সন্দেহ হলে ‘জোরপূর্বক যৌন সংসর্গ হয়েছে’ উল্লেখ করা যেতে পারতো, যা দ্বিতীয়বারও এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।
মানবাধিকার নেত্রী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামাল মনে করেন, ইচ্ছাকৃতভাবে আলামতকে ভিন্নখাতে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, ‘প্রথম ময়নাতদন্তে ধর্ষণের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি বলেই দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের দরকার হয়েছিল। দ্বিতীয়টার ক্ষেত্রে সিআইডি থেকে বলা হলো, তনুর পোশাকে তিন পুরুষের শুক্রাণু পাওয়া গেছে। অথচ ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে বলা হলো, ‘যৌন সংসর্গ’ ঘটেছে। ‘ধর্ষণ’ না বলে ‘যৌন সংসর্গ’ শব্দের ব্যবহার উদ্দেশ্যমূলক বলেই মনে হচ্ছে।’
সোমবার দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দিয়েছে কুমিল্লা সিআইডি। প্রায় আড়াই মাস কাল ক্ষেপণের পর ময়নাতদন্তের জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের প্রধান কামদা প্রসাদ সাহা সাংবাদিকদের বলেন, ‘১০ দিন পর কবর থেকে তোলা লাশ বিকৃত (ডিক¤েপাজড) হয়ে যাওয়ায় মৃত্যুর কারণ নির্ণয় করা যায়নি।’ ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে ধর্ষণের কথা উল্লেখ নেই। এতে বলা হয়েছে মৃত্যুর আগে ‘যৌন সংসর্গ’ হয়েছিল।
যদিও ব্যারিস্টার অনীক আর হক মনে করেন, শব্দ পরিবর্তন করার ক্ষেত্রে প্রতিবেদনে ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’ কৌশল নেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদন দেখতে পেলে বিষয়টি ¯পষ্ট হতো উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ধর্ষণ বা যৌন সংসর্গ উভয়ক্ষেত্রেই সেক্স্যুয়াল ইন্টারকোর্স ঘটে। কিন্তু একটিতে সম্মতি থাকে আরেকটিতে জোরপূর্বক ঘটে। জোরপূর্বক সেক্স্যুয়াল ইন্টারকোর্সের ক্ষেত্রে কাটাছেঁড়ার চিহ্ন বা জোর জবরদস্তিসহ আরও কিছু বিষয়ের উল্লেখ থাকে। এক্ষেত্রে সেটা না বলে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক বলছেন, যৌন সংসর্গ হয়েছে। এটা একেবারেই উদ্দেশ্যমূলক।
দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের তথ্য প্রকাশ করতে গিয়ে ডা. কামদা প্রসাদ সাংবাদিকদের জানান, মৃত্যুর ১০ দিন পর লাশ পচে যাওয়ায় ময়নাতদন্তে তনুর শরীরে কোনও আঘাতের চিহ্ন শনাক্ত করতে পারেনি মেডিক্যাল বোর্ড। ফলে প্রতিবেদনে তনুর মৃত্যুর কারণ উল্লেখ করা হয়নি। এখন মৃত্যুর সঠিক কারণ উদ্ঘাটনের জন্য পুলিশের অধিকতর তদন্তসহ পারিপার্শ্বিক তদন্ত প্রয়োজন।
সোমবার দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের কথা শুনে তনুর মা আনোয়ারা বেগম এই প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ‘তনুর পিঠে আঘাতের চিহ্ন ছিল। ১০ দিন পরও তা বিকৃত হয়নি। ওর মাথার পেছন দিক ও নাক থেঁতলানো ছিল।’
গত ১৬ মে ডিএনএ প্রতিবেদনে তনুকে ধর্ষণের আলামত পাওয়ার খবরে বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে। তবে তনু হত্যাকান্ডের সার্বিক তদন্তে দৃশ্যমান কোনও অগ্রগতির তথ্য দিতে পারেননি সিআইডির কর্মকর্তারা।
তনু হত্যার পর ময়না তদন্তের আগে সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করা হয়। ময়নাতদন্ত এবং সুরতহাল এক নয়।
সুরতহাল হলো ময়নাতদন্তের আগের ধাপ। মরদেহ যেখানে যে অবস্থায় পাওয়া যায় সে অবস্থার বর্ণনা, শরীরে বাহ্যিক কোনও আঘাতের চিহ্ন আছে কি না বা শরীরের অবস্থান কেমন ছিল তার অনুপুঙ্খ বর্ণনা থাকে সুরতহাল প্রতিবেদনে। আইন অনুযায়ী সুরতহাল প্রতিবেদন পুলিশ তৈরি করে একজন ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে। কিন্তু তনুর সুরতহাল প্রতিবেদন ঘটনাস্থলে না করে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে করা হয়েছে।
এ বিষয়টি উল্লেখ করে আইনজীবী অনীক আর হক বলেন, ‘ঘটনাস্থলকে ক্রাইম সিন হিসাবে সংরক্ষণ করা তদন্তের অপরিহার্য অংশ হলেও তনুর লাশ পড়ে থাকার জায়গার লতা-গুল্ম, ঘাস কেটে ফেলার অভিযোগ আছে। স্বয়ং মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এ অভিযোগ করেছেন। শুনি থেকেই এ মামলায় বেশকিছু এলোমেলো কথা এবং দিকনির্দেশনা দিতে দেখা গেছে। সর্বশেষ এই দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে যৌন সংসর্গের বিস্তারিত বিবরণ না থাকলে, জোরপূর্বকের ক্ষেত্রে যে আলামতগুলো জরুরি সেগুলোর উল্লেখ না থাকলে মামলা ভিন্ন খাতে নেওয়ার সুযোগ তৈরি হবে।’

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com