1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
শনিবার, ০৩ জুন ২০২৩, ০৪:৫৯ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

আ.লীগ-জাসদ টানাপোড়েন, হঠাৎ কী হলো?

  • আপডেট সময় বুধবার, ১৫ জুন, ২০১৬

সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
জাসদকে নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ স¤পাদক ও জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বক্তব্যকে কেন্দ্র করে জোটভুক্ত নেতাদের মধ্যে শুরু হয়েছে টানাপোড়েন। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)। দলটির এক অংশের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সরকারের তথ্যমন্ত্রী। ১৪ দলীয় জোটের মুখ্য শরিক আওয়ামী লীগের সাধারণ স¤পাদকের বক্তব্যে জাসদের স্বাধীনতা পরবর্তী কালের পুরো কর্মকান্ড নিয়ে প্রশ্ন তোলায় জোটেই ‘উদ্বেগ’ তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও রাজনীতিবিদরা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ও নেতাদের দাবি, দেশে এমন কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি যে পুরনো বিষয় সামনে এনে বিতর্ক তৈরি করতে হবে। সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার রাজনীতি না থাকলে, শক্ত কোনো বিরোধীদল না থাকলে এমনটা হতে পারে। আবার কেউ বলছেন নীতির বাইরে গিয়ে রাজনীতি করলে এমনটা হতে পারে।
জাসদ নিয়ে মহাজোটের সাম্প্রতিক বিতর্ক স¤পর্কে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাবেক মন্ত্রী ড. মিজানুর রহমান শেলী সাংবাদিকদের বলেন, ‘কোনো এক রাজনৈতিক দল যখন প্রবল শক্তিধর হয়ে উঠে তখন এ ধরনের ঘটনা ঘটতে থাকে।’ তিনি বলেন, ‘এমন কী হল? হঠাৎ করে জাসদের পুরনো কথা বার্তা ঘেঁটে সামনে বের করা, তাদের জোটের মধ্যে টানাপোড়েন, অন্তর্দ্বন্দ্ব, বিভাজন দেখা দিয়েছে- কিনা এমন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এটা ভাবনার বিষয়।
সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার রাজনীতি না থাকলে এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সাধারণ স¤পাদকের এমন ঘোষণা উদ্বেগের কারণ। যেহেতু তিনি (ইনু) মন্ত্রীসভার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আছে। আজকের প্রেক্ষাপটে এটা খুব চাঞ্চল্যকর ঘটনা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এটা হলো অবশ্যম্ভাবী পরিণতি। নীতি বিবর্জিত রাজনীতি করলে এমনটা হবে এটাই স্বাভাবিক।’
তিনি বলেন, ’৭৫ সালে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল জাসদ। তারপরও তাদের নিয়ে আওয়ামী লীগ রাজনীতি করছে। তারা (জাসদ) এমন ভাষায় কথা বলেন, যার জবাব নেই। রাজনৈতিক শিষ্টাচারের মধ্যে পড়ে না।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, জাসদই হঠকারী পট পরিবর্তনের প্রেক্ষিত সৃষ্টি হয়েছিল। সন্ত্রাস ও হত্যার রাজনীতি সেই সময় (৭২ থেকে ৭৫) উভয়পক্ষের (আওয়ামী লীগ-জাসদ) হাত দিয়েই শুরু হয়েছে। সুতরাং এই এখন পর¯পর বিরোধী যে অবস্থান এটাই হওয়া স্বাভাবিক পরিণতি বলেই মনে হয়।’
তিনি আরও বলেন, এখন আওয়ামী লীগের মধ্যে মতবিরোধ চলছে। দলের বড় একটি অংশ একভাবে রাজনীতি করতে চায়। হয়তো ইনু সাহেবরা তার উল্টোটা করতে চাচ্ছেন এবং কথা বার্তাও বলছেন উল্টা ভাবেই। উনারা (ইনু) তো শেষ করে ফেলার রাজনীতি করেন। গণতান্ত্রিক সহনশীলতার রাজনীতির মধ্যে তারা নেই। গণতন্ত্রের মূল ভাষা তারা বিশ্বাস করেন না। একই কারণেই হয়তো এখন এমনটা শুরু হয়েছে।’
জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) সভাপতি শফিউল আলম প্রধান বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট করে মতামত দেওয়া কঠিন। মনে রাখতে হবে ক্ষমতার প্রয়োজনে আদর্শিক অবস্থান থেকে রাজনীতি না করে জোড়াতালি দিয়ে সাময়িকভাবে ক্ষমতা ধরে রাখা যায়। একটি নির্দিষ্ট সময় পরে এটা বুমেরাং হয়।’
শফিউল আলম প্রধান বলেন, আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলের কোনো চাপ আছে কি না এটা সরকার ভাল বলতে পারবে। পট পরির্বতনের কোনো ধারা তৈরি হচ্ছে কিনা? যদি হয়ে থাকে এটাও খারাপ।
গত সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক মিলনায়তনে (টিএসসি) ছাত্রলীগের এক সভায় জাসদ ও বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের ধারক-বাহকেরা এক’শ ভাগ ভন্ড বলে মন্তব্য করেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।
তিনি বলেন, জাসদ থেকে মন্ত্রী করায় আওয়ামী লীগকে প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে।
জাসদকে বঙ্গবন্ধু হত্যার পরিবেশ সৃষ্টিকারী আখ্যায়িত করে আশরাফ বলেন, বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রবাদীরা ষড়যন্ত্র করে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন একটি সফল মুক্তিযুদ্ধকে স¤পূর্ণ পরিকল্পিতভাবে বিতর্কিত করতে নানা অপচেষ্টা চালিয়েছে। এরা যদি বঙ্গবন্ধু হত্যার পরিবেশ সৃষ্টি না করত তাহলে বাংলাদেশ আজ বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে একটি ভিন্ন বাংলাদেশ দেখত। সব সময় লক্ষ্য রাখবেন হঠকারীদের কখনই প্রশ্রয় দেবেন না। তারা বড় বড় কথা বললেও তাদের সাহস কম। এই বৈজ্ঞানিক বিপ্লবীরা শতভাগ ভন্ড।
আওয়ামী লীগ সাধারণ স¤পাদকের এই বক্তব্যের এক দিন পরই মঙ্গবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক সভায় তাকে ‘থামাতে’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনুরোধ করেছেন জাসদ নেতারা। তারা বলেছেন, এ ধরনের কাদাছোড়াছুড়ি ১৪-দলীয় জোটের ঐক্য বিনষ্ট করবে।
তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুকে হত্যার হুমকির প্রতিবাদে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে জাসদের সাধারণ স¤পাদক শিরীন আখতার বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যখন আমরা ঐক্যবদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের অসমাপ্ত কাজ যখন শেষ করার কাজ করছি। প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নকে এগিয়ে নিতে তথ্যমন্ত্রী যখন অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন, তখন এই ধরনের কাদা-ছোড়াছুড়ি আমাদের ঐক্য বিনষ্ট করবে। মুক্তিযুদ্ধের শক্তিকে দুর্বল করবে। বরং আসুন জঙ্গি মোকাবিলা ও নাগরিকের নিরাপদ জীবনের জন্য, গুপ্তহত্যা বন্ধ করতে ১৪ দলকে আরও শক্তিশালী করি।’
সমাবেশে জাসদের নেতা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন সৈয়দ আশরাফের উদ্দেশে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে বলছি – আপনি থামান, আপনার এই মন্ত্রীকে থামান। এই সংকটে তিনি যে বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দিচ্ছেন, যে অনৈক্যের সৃষ্টি করছেন, অবিলম্বে তার মুখ বন্ধ করুন। আর সৈয়দ আশরাফকে বলব আপনি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দিকে মনোযোগ দিন। আপনি কীভাবে মন্ত্রিত্ব চালান আমরা জানি, দেশবাসী জানে। আমরা তা বলতে পারি। কারণ আমরা মহাজোটের অংশ। জনপ্রশাসন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় সেখানে মনোযোগ দিন।’
শেখ হাসিনার উদ্দেশে আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘পরিষ্কারভাবে আপনাদের বলে দিতে হবে, ঐক্য চান কি চান না। ১৪ দলের ঐক্য থাকবে কি থাকবে না? একদিকে আমাদের সভাপতি ও ১৪ দলের অন্যতম নেতার নামে বিষোদ্গার করবেন, আর অন্যদিকে জঙ্গি ঠেকাবেন এটা হতে পারে না। আমরা মহাজোট সরকারে আছি, ১৪ দলে আছি। কিন্তু আমাদের নিজস্ব অবস্থান আছে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আছে, সংবিধান আছে, জাতির জনক আছেন আমাদের সামনে। সেই বিবেচনা করেই চলি। আর ভুল করবেন না।’
জাসদের পক্ষ থেকে বরাবরই বলা হয়ে থাকে – যখন সংসদীয় রাজনীতির সুযোগ অনুপস্থিত হয়, তখন প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়েই ১৯৭৫ সালে জাসদ গণবাহিনী গঠন করে এবং সরকারের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে রাজনৈতিক অবস্থান নেয়। কখনো গোপনে ষড়যন্ত্র করেনি।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com