1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
শনিবার, ০৩ জুন ২০২৩, ০৫:০৬ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

তনুর দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে ফের অস্পষ্টতা

  • আপডেট সময় সোমবার, ১৩ জুন, ২০১৬

সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
মৃত্যুর কারণ ও ধর্ষণ প্রশ্নে অ¯পষ্টতা রেখেই কুমিল্লার কলেজছাত্রী সোহাগী জাহান তনুর দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
প্রতিবেদনে মৃত্যুর আগে তনুর ‘সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্স’ হওয়ার কথা বলেছেন চিকিৎসকরা। এর মাধ্যমে তারা ‘ধর্ষণ’ বোঝাচ্ছেন কি না- এড়িয়ে গেছেন সেই প্রশ্ন।
লাশ উদ্ধারের দশ দিন পর পচা-গলা লাশ দেখে মৃত্যুর কারণও তারা উৎঘাটন করতে পারেননি। তনুর লাশ কবর থেকে তুলে দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্ত করার আড়াই মাস পর রোববার পুলিশের হাতে এই ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন জমা পড়ে।
ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক দলের প্রধান কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান কামদা প্রসাদ সাহা বলেন, “তনুর দ্বিতীয় ময়নাতদন্তে দেখা গেছে, মৃত্যুর পূর্বে তার সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্স হয়েছে।
“যেহেতু দশ দিন পর ময়নাতদন্ত করা হয়েছে, মৃতদেহ পচা ছিল, দশ দিন পর পচা গলা মৃতদেহ থেকে নতুন করে কোনো ইনজুরি বোঝা সম্ভব হয়নি।” তনুর মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হতে পুলিশকে আরও তদন্ত করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
এদিকে দ্বিতীয় ময়নাতদন্তেও অ¯পষ্টতা থাকায় হতাশা প্রকাশ করেছেন কুমিল্লার নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা, যারা তনু হত্যার বিচারের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন।
চৌদ্দগ্রামের একটি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক মীর শাহ আলম প্রশ্ন করেন, তাহলে তনু মরল কীভাবে?
“দেশবাসী চায় কালক্ষেপণ না করে তনুর মৃত্যুর সঠিক কারণ দেশবাসীর কাছে উন্মোচন করা হোক। অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করুক প্রশাসন।”
কুমিল্লা গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক রায়হান বলেন, “৭৪ দিন পর যে ময়নাতদন্ত দেওয়া হল তা মেনে নেওয়া যায় না। এটা দৃষ্টিকটূ।”
ঘটনাপ্রবাহ :
সেনানিবাস বোর্ডের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ইয়ার হোসেনের মেয়ে তনু গত ২০ মার্চ রাতে কুমিল্লা সেনানিবাসের ভেতরে নিজেদের কোয়ার্টার থেকে অন্য কোয়ার্টারে ছাত্র পড়াতে গিয়ে খুন হন। সেনানিবাসের অলিপুর এলাকায় একটি কালভার্টের পাশে একটি ঝোপ থেকে তার লাশ পাওয়া যায়।
ইয়ার হোসেন সে সময় সাংবাদিকদের বলেছিলেন, তনুর নাক ও মাথা থেঁতলানো ছিল, মাথার কিছু চুল ছিল কাটা। অলিপুর কালো পানির ট্যাঙ্কির রাস্তায় তনুর ব্যবহৃত জুতা, ছেঁড়া চুল ও ছেঁড়া ওড়না পাওয়া গিয়েছিল।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ইতিহাস বিভাগের ¯œাতক (সম্মান) দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী তনু কলেজ থিয়েটারের সদস্য ছিলেন। সেনানিবাসের মত সুরক্ষিত এলাকায় ওই হত্যাকান্ডের পর ক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে সারা দেশ। একমাত্র মেয়ের মৃত্যুতে কুমিল্লা কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন তনুর বাবা।
কুমিল্লার পুলিশ সুপার মো. শাহ আবিদ হোসেন সে সময় বলেছিলেন, ১৯ বছর বয়সী তনু যে হত্যার শিকার, তাতে পুলিশের কোনো সন্দেহ নেই। তাকে হত্যার আগে ধর্ষণ করা হয়েছিল বলেও লাশ ও পারিপার্শ্বিক আলামত দেখে তার ধারণা হয়েছে।
পুলিশ ধর্ষণের সন্দেহের কথা জানালেও ২০ মার্চ প্রথম ময়নাতদন্তের পর ৪ এপ্রিল কুমিল্লা মেডিকেলের ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসক শারমিন সুলতানা যে প্রতিবেদন দেন তাতে বলা হয়- তনুর মৃত্যুর কারণ অজ্ঞাত। ধর্ষণেরও কোনো আলামত মেলেনি। ভিসেরা পরীক্ষায় কোনো বিষক্রিয়া বা রাসায়নিকের প্রমাণও পাওয়া যায়নি।
সেনানিবাসের এই হত্যাকান্ড ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে বলে বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ ওঠে সে সময়। এর প্রেক্ষিতে সেনাবাহিনী থেকে তদন্তে সব ধরনের সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। সারাদেশে ক্ষোভ-বিক্ষোভের মধ্যে প্রথম ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার আগেই আদালতের নির্দেশে দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্ত হয় গত ৩০ মার্চ।
এদিকে সেনানিবাসের ভেতরে যেখানে তনুর লাশ পাওয়া গিয়েছিল, সেখান থেকে আলামত সংগ্রহ করে পরীক্ষা চালায় সিআইডি। আলোচিত এই হত্যাকান্ডের তদন্ত সংস্থা সিআইডির বিশেষ সুপার আবদুল কাহহার আকন্দ ১৬ মে সাংবাদিকদের জানান, ডিএনএ পরীক্ষায় তারা ধর্ষণের আলামত পেয়েছেন।
সিআইডির কুমিল্লা ও নোয়াখালী অঞ্চলের দায়িত্বে থাকা বিশেষ সুপার নাজমুল করিম খান সেদিন বলেন, “ডিএনএ পরীক্ষায় কয়েকজন পুরুষের বীর্যের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।”
ডিএনএ পরীক্ষায় ধর্ষণের কথা বলা হলেও দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন বিলম্বিত হওয়ায় নতুন করে সন্দেহ আর সমালোচনা তৈরি হয়। তনুর বাবা ইয়ার হোসেন চিকিৎসকদের উকিল নোটিশও পাঠান।
ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক কামদা প্রসাদ বলে আসছিলেন, সিআইডির ডিএনএ টেস্টের প্রতিবেদন পেলেই তারা প্রতিবেদন দিতে পারবেন। এ নিয়ে কিছুদিন টানাপড়েনও চলে।
চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে তনুর দাঁত ও লালা পরীক্ষার প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছিল মামলার তদন্তকারী সংস্থা সিআইডির কাছে। তখন সিআইডি বলেছিল, এগুলোর আলাদা কোনো প্রতিবেদন তারা করেনি।
এই প্রেক্ষাপটে কুমিল্লার অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম জয়নাব বেগম পূর্ণাঙ্গ ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন চিকিৎসকদের সরবরাহের নির্দেশ দেন। চিকিৎসকার ওই প্রতিবেদন হাতে পান গত ৭ জুন।
এরপর কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের দুইজন অফিস সহকারী রোববার বেলা ১১টায় সিআইডি কার্যালয়ে গিয়ে ওই প্রতিবেদন দিয়ে আসেন। তাদের কাছ থেকে প্রতিবেদনটি বুঝে নেন এ এসআই মোশাররফ।
চিকিৎসকরা যা বললেন :
প্রথম দফা ময়নাতদন্তে তনুর ‘মৃত্যুর কারণ ¯পষ্ট নয়’ বলা হলে তার বাবা ইয়ার হোসেন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, তার মেয়ের নাকের আঘাত আর থেঁতলানো মাথা – সবই কি তাহলে মিথ্যা?
কিন্তু দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্তেও সেই জবাব দিতে পারেননি মেডিকেল বোর্ডের সদস্য অধ্যাপক কামদা প্রসাদ সাহা, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের গাইনি বিভাগের প্রধান করুণা রানী কর্মকার এবং ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রভাষক মো. ওমর ফারুক।
প্রতিবেদন দেওয়ার পর কামদা প্রসাদ নিজের দপ্তরে সাংবাদিকদের বলেন, “পারিপার্শ্বিক নানা অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে পুলিশের অধিক তদন্তের মাধ্যমে মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হতে হবে।”
মৃত্যুর আগে তনুর ‘সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্স’ হয়েছিল- এই বক্তব্যের ব্যাখ্যা জানতে নানাভাবে প্রশ্ন করেন উপস্থিত সাংবাদিকরা। এ সময় কামদা প্রসাদের পাশে থাকা ডা. ওমর ফারুক যেভাবে উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেন, তাতে অ¯পষ্টতা আরও বাড়ে।
“ইন্টার কোর্স ও রেপ কিন্তু দুটো ভিন্ন জিনিস। আপনি আপনার ওয়াইফের সাথে সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্সও রেপ হতে পারে।.. ঠিক আছে? স্যার বলেছ সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্স হইছে, ব্যাস এইটুকুই রাইখেন। সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্স হইছে, ব্যাস শেষ।”
মৃত্যুর কতক্ষণ আগে তা হয়েছিল- এ প্রশ্নে তিনি বলেন, প্রতিবেদনে তা বলা হয়নি।
“যৌনক্রিয়া হইছে, এখন এইটা… মৃত্যুর পূর্বে হইছে, বা তার যৌনক্রিয়ার অভিজ্ঞতা আছে.. আপনারা রিপোর্টটা পাবেন, উনাদের সিআইডির কাছে দিয়ে দেওয়া হইছে। আপনার দেখলে আরও বুঝবেন কথাটা বাংলায় কী রকম হয়, তাই না?”
চিকিৎসকরা তাদের কথা বললেও প্রতিবেদন পাওয়ার পর মামলার তদন্ত সংস্থা সিআইডির কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এএসপি কাজী মো. মোজাম্মেল হক বলেন, “মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিদর্শক কাজী মো. ইব্রাহিম এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সামনে কথা বলবেন।”

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com