প্রতিবছর হাওরাঞ্চলে বোরো ধান ক্রয়ের সরকারি কর্মপরিকল্পনার দুইটি লক্ষ্যমাত্রা সুনির্দিষ্ট করা হয়। একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ধান ক্রয় এবং অন্যটি উৎপাদন খরচের বেশি দামে ধান ক্রয় করে কৃষককে লাভবান করা। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, প্রতিবছরই সরকারের কৃষকবান্ধবনীতির আওতায় সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান ক্রয়ের সুফল কৃষকের ভাগ্যে জোটে না, কোনও না কোনও কৌশলে সরকারি পরিকল্পনাকে ব্যর্থ করে দিয়ে চিহ্নিত ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা কৃষকের প্রাপ্য মুনাফা লুট করে নেয়। কিন্তু যারা ষড়যন্ত্র করে সরকারের এই কৃষকহিতকর কর্মপ্রয়াসকে সম্পূর্ণরূপে পন্ড করে দেয়, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ উত্থাপিত হওয়ার পরও অপরের পাওনা আত্মসাৎ করার প্রতিকারস্বরূপ কারও বিরুদ্ধে কোনওরূপ ব্যবস্থা সরকারের পক্ষ থেকে গ্রহণ করতে দেখা যায় না।
সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলে এবার কৃষকরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে জানতেই পারেননি যে, সরকার সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান ক্রয়ের সিদ্ধান্ত করেছেন। জানতে পারার আগেই কৃষক ফড়িয়ার কাছে কম দামে ধান বিক্রি করে দিয়েছেন। আর ফড়িয়ারা কৃষকের কার্ড করিয়ে নিয়ে সরকারি গুদামে কম দামে কেনা ধান বেশি দামে বিক্রয় করছে। পত্রিকায় লেখা হয়েছেÑ “ফড়িয়াই গ্রামীণ কৃষকদের… নামে কৃষি কার্ড করে খাদ্য অফিসে ধান দিচ্ছে।”
কৃষকরা তাঁদের সঙ্গে করা এই অন্যায় ও অনিয়মের বিচার প্রত্যাশী, সরকারের কাছে। সরকার কৃষকের জন্য যে সুযোগ কিংবা সুবিধা সৃষ্টি করেছেন, কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও ফড়িয়া সেটা আত্মসাৎ করে নিয়েছে। এই দুর্নীতির ও অন্যায়ের হোতারা এমন নয় যে, তারা অদৃশ্যমান বরং অপেক্ষাকৃতভাবে সবচেয়ে বেশি দৃশ্যমান ও তাদের কৃত অপরাধ সহজে প্রমাণযোগ্য। অসদুপায় অবলম্বন করে কারা কৃষকের নামে কার্ড করেছে, কে খাদ্য অফিসে ধান দিয়েছে, ফড়িয়াকে কে কার্ড দিয়েছে নির্দিষ্ট অফিস থেকে নিশ্চয়ই এইসব কর্মকান্ডের দালিলিক প্রমাণ মুছে যায়নি। আমরা আশা করবো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ‘বোরো ধান ক্রয় অভিযান’- এর সামগ্রিক কর্মকান্ডে অবলম্বিত দুর্নীতির তদন্ত সাপেক্ষে বিহিত ব্যবস্থা গ্রহণে তৎপর হবেন।